সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মা ইলিশ রক্ষায় ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ইলিশ নিধন না করতে গত ১৪ অক্টোবর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সব ধরনের জাল ফেলা, মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।
ঝালকাঠিতে ৫ হাজার ২৬৫ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ইলিশ আহরণকারী জেলে রয়েছেন ৪ হাজার ৬৩ জন। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাড়ে ৩ হাজার জেলেকে ভিজিডি সহায়তা দেয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ রক্ষায় ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুগন্ধা নদী ঝালকাঠি অংশে ১৬ কিলোমিটার ও ১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিষখালী নদীর ঝালকাঠি অংশে ২৯ কিলোমিটার নৌ-সীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এ অভয়াশ্রম এলাকায় গত ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অভয়াশ্রম এলাকার জেলেরা যেন নদীতে না নামে এ জন্য সরকার প্রতিবছর এ সময়ে ৪০ কেজি করে খাদ্যশস্য (চাল) ভিজিএফ সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ দিয়ে আসছে।
মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার (৪ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে সব প্রকার মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে মিলবে সুস্বাদু ইলিশ। তাই ইলিশসহ সব প্রকার মাছ কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মৎস্যঘাটের আড়তদাররা।
২২ দিন সময় কাটানোর পর নদীতে মাছ ধরতে নামবে জেলেরা। এ কারণে স্বস্তি ফিরে আসছে জেলে পরিবারগুলোতে। তবে অভিযান সফল হওয়ায় গত বারের চেয়ে এবার মাছের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে জেলা মৎস্য বিভাগ।
ঝালকাঠি জেলে পল্লী এলাকায় গিয়ে জেলেদের মাছ ধরার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলেদের কেউ কেউ নৌকা মেরামত করছে। আবার অনেকেই জাল ঠিক করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। রাত ১২টা পার হলেই নদীতে মাছ শিকারে বের হবেন এমন খবরে তাদের অনেকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে।
জেলে ওধির মালো জানান, টানা ২২ দিন সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা নদীতে যাইনি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। তাই জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রবীণ জেলে নবদীপ মালো জানান, নদীতে অনেক স্থানেই চর জেগেছে। নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও বড় সাইজের ইলিশের দেখা নেই। তারপরও ২২ দিন বেকার থাকার পর জীবন জীবিকার তাগিদে নদীতে নামবে জেলেরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, ডিম ছাড়ার সময় সাগরের লবণ পানির মাছ মিঠা পানিতে চলে আসে। এজন্য উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে মা ইলিশের প্রচুর দেখা মেলে। জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে মা ইলিশ। এ কারণে নিবন্ধিত জেলেদের বাইরেও মৌসুমি জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে নামে।
এবারে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও কোস্টগার্ড নিয়ে মা ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে কিছু অসাধু জেলেরা অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করলেও তাদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply