রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৫ অপরাহ্ন
শামীম আহমেদ॥ করোনা মহামারির কারণে এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়নি। এ কারণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাল পাখাও শোভা পায়নি কারো হাতে। এতে বিগত ছয় মাসের পরিশ্রম অনেকটাই বৃথা হয়ে গেছে পাখা কারিগরদের। তবে চারপাশের ভ্যাপসা গরম, প্রদণ্ড দাবদাহ আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাল পাখার চাহিদা বাড়ছে। একই সঙ্গে ব্যস্ততা বাড়ছে কারিগরদের। দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না বরিশালের পাখাপল্লীর কারিগররা।
গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামের পাখাপল্লীর কারিগররা জানান, এখানকার তাল পাখা বেশি বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ডে। গরম এলেই চাহিদা বাড়ে পাখার। প্রায় ৩০ বছর ধরে তাল পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার।
তারা আরো জানান, পাখা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বর্তমানে পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা এখনো এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন- তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের পৃষ্ঠপোষকতা চান। সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ হস্তশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানান তারা।
চাঁদশী গ্রামের পাখা কারিগর হাসেম খলিফা জানান, এ পেশায় বর্তমানে আয় কম। পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে নিরলস পরিশ্রম করতে হচ্ছে। উপর মহল থেকে সুদৃষ্টি না দিলে গ্রামীণ এ ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একই সঙ্গে কারিগররা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে।
তিনি আরো জানান, তাল পাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তাল পাতা। বর্তমানে তাল পাতার তীব্র সংকট চলছে। গৌরনদীসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে তালপাতা ও বাঁশ কিনতে হয়। এ কারণে এখন তাল পাখা তৈরির কাজ চলে ছয় মাস। আগে সারা বছর সরগরম থাকত পাখাপল্লী।
একই গ্রামের তাল পাখা কারিগর তরুণ হালদার জানান, তার পরিবারের ছয় সদস্যই তাল পাখা তৈরির কাজ করে। দুই ছেলে মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে যোগ দেয়। এতে আয় কিছুটা বাড়ে। পরিবারের সবাই মিলে একদিন ১০০টি হাতপাখা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় ১২ টাকা আর পাইকারি বিক্রি হয় ১৫ টাকায়।
আগৈলঝাড়া উপজেলার কারিগররা জানান, সপ্তাহে একদিন পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে হাত পাখা কিনে নিয়ে যায়। এরপর সেসব পাখা পৌঁছে যায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, আমি এ জেলায় এসেছি বেশিদিন হয়নি। পাখাপল্লীর খবর পেয়েছি, শিগগিরই সেখানে যাব। পাখা কারিগরদের জন্য ঋণসহ সব সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। তাল পাখা আমাদের গ্রাম-বাংলার শত বছরের ঐতিহ্য। এটি হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।
Leave a Reply