মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩১ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: বর্ষাকালে চরাঞ্চল, নিন্মাঞ্চল ও বিল অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকাসহ চলাচলের জন্য নৌকা ছাড়া অনেকটাই অচল। এসব এলাকার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনে কোটালীপাড়া উপজেলার কালীগঞ্জ বাজারে বালির মার্কেটে সপ্তাহে দুদিন (রবি ও বৃহস্পতিবার) ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট বসে।
রোববার কালীগঞ্জ নৌকার হাট ঘুরে দেখা গেছে, মেহগনি, কড়ই, আম, চাম্বল, রেইনট্রি গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি ডিঙি নৌকা পাওয়া যায় এ হাটে। আকার ও মানভেদে প্রতিটি নৌকা তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও আশেপাশের মাদারীপুর ও বরিশাল থেকে ক্রেতারা এখানে নৌকা কিনতে আসেন।
উপজেলার রামশীল, রাধাগঞ্জ, কলাবাড়ী, সাদুল্যাপুর, কান্দি শুয়াগ্রাম ইউনিয়নে পানিবেষ্টিত এলাকায় যোগাযোগের মাধ্যম এখনও নৌকা। এ অঞ্চলে রয়েছে অনেক খাল-বিল ও ডোবা-নালা। বর্ষার সময় এগুলো পানিতে থাকে টইটম্বুর। এসব উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন চরাঞ্চল ও নিন্মাঞ্চল। নদ-নদী থেকে যখন পানি উপচে পড়ে, তখন এসব চরাঞ্চল, নিন্মাঞ্চল ও বিল এলাকা পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। তখন চলাচলের প্রধান বাহন থাকে নৌকা। এছাড়া কৃষিকাজ, গোখাদ্য, ক্ষেত থেকে সবজি ও ফসল সংগ্রহ করে বিক্রি, মাছ শিকার ও হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া এবং খাল-বিল থেকে শাপলা তোলাসহ নানা প্রয়োজনে নৌকা অপরিহার্য। যুগ যুগ ধরে নৌকা এসব অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
রোববার বিকালে হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন আকার ও কাঠের তৈরি নৌকার পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সারি সারি করে রাখা এসব নৌকা সাজিয়ে রাখার দৃশ্য দেখে যে কারোই ভালো লাগে। ছোট-বড় মিলিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ নৌকা দেখা গেল হাটে। ক্রেতার পদচারণে মুখর হয়ে উঠছে পুরো নৌকার হাট। ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে হাটে আসেন।
উপজেলার শুয়গ্রাম থেকে আগত নৌকা ব্যবসায়ী সর্বানন্দ বাড়ৈ ও পরিমল বল্লভ বলেন, ১০০টি নৌকা নিয়ে হাটে এসেছি বিক্রির জন্য। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ নৌকাগুলোর সব বিক্রি করতে পারব আশা করি। হরিবর রায় নামে এক নৌকা ব্যবসায়ী বলেন, আমি সকাল থেকে এ সময়ের মধ্যে ২০টি নৌকা বিক্রি করেছি। নৌকা তৈরির কারিগর রঞ্জন মধু বলেন, আমি এ নৌকাগুলো নিজেই তৈরি করি। বাড়িতে নৌকা তৈরি করে হাটে নিয়ে আসি বিক্রি করতে। ভালোভাবে বিক্রি করতে পারলে কাঠ ও শ্রমিক খরচ বাদে ভালো কিছু টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, অতীতের মতো এখন আর বেশি নৌকা বিক্রি হয় না। এখন প্রায় সব এলাকায় রাস্তাঘাট থাকায় নৌকার কদর কিছুটা কমে গেছে।
কথা হয় কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। তাদের মধ্যে অমল সরকার, গোলক বালা ও সমির জয়ধর বলেন, আমাদের অঞ্চল পানিবেষ্টিত হলেও প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তাঘাট রয়েছে। এ কারণে এখন আর আগের মতো নৌকার প্রয়োজন পড়ে না। তবুও নৌকা কিনেছি গরুর ঘাস আনা-নেওয়ার পাশাপাশি অন্য গৃহস্থালি কাজের জন্য।
নৌকা হাটের ইজারাদার সুজন ফলিয়া ও সুকচাঁদ ফলিয়া বলেন, কালীগঞ্জের হাটে বিগত ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে এ ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট বসে। হাটে দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা নৌকা কিনতে আসে। প্রতিটি বিক্রীত নৌকা থেকে শতকরা ১০ টাকা হারে টোল আদায় করা হয়। বর্ষা মৌসুমে প্রতি হাটে ৪০০ থেকে ৫০০টি নৌকা ওঠে। এর মধ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০টি বিক্রি হয়ে থাকে।
Leave a Reply