ইলেকশন আর আগের মত নাই ,চায়ের কাপে ভোটালাপ Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




ইলেকশন আর আগের মত নাই ,চায়ের কাপে ভোটালাপ

ইলেকশন আর আগের মত নাই ,চায়ের কাপে ভোটালাপ




সৈয়দ মেহেদী হাসান :বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের অন্যতম মহানগরী বরিশাল এর স্থানীয় সরকার সংস্থা। ১৮৬৯ সালে বরিশাল টাউন কমিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৮৭৬ সালে বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটিতে উন্নীত হয়। ১৯৮৫ সালে একে একটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ‘বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (সংশোধন) আইন ২০০২’র মাধ্যমে পৌরসভা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। বর্তমানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ ও আয়তন ৫৮ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিটি কর্পোরেশনে ৩০জন সাধারণ আসনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং ১০ জন সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে মাননীয় মেয়র ও সম্মানিত কাউন্সিলরগণ জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯শ’ ৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৩শ’ ৩২ জন আর নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৬শ’ ২৭ জন। নির্বাচন নিয়ে চলছে উৎসব। প্রান্তিক পর্যায় থেকে অভিজাত এলাকায় সবখানে চলছে ভোটের হিসেব নিকেশ। একটু ফুসরত পেলেই ভোটাররা মজে যান ভোটালাপে। আর এই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ভোটাররা ব্যাক্তিগত আন্দাজ সেরে ফেলেন। তেমনি দীর্ঘ এক ভোটের আলোচনার চুম্বুকাংশ তুলে ধরা হল ।

……………..

ফারুক : ইলেকশন আর আগের মত নাই। আগে ইলেকশন আইলে ঈদের চাইতেও বেশি আনন্দ ফুর্তি হইত। এহন মানষে টাকার হিসাব করে।

রুবেল : হেরপরও এবার মেয়র ইলেকশন নিয়া টেনশন আছে। সরোয়ার মিয়াতো এমনি এমনি নামে নাই।

বারেক: ওই ফারুইক্কা; হোনছ রুবিল্লা কি কয়! যত সরোয়ারই আসুক, কাম হইবে না। মানষে আর প্রতিবন্দী মেয়র চায় না। হিরন মিয়ার আমলে ফিইর‌্যা যাইতে চায়। বিএনপির মেয়রগুলা সব আকাইম্যা। কামের কাম কিছু হরে না খালি কয়, সরকার আমাগো কাজ দেয় না।

রুবেল : কাম করবে ক্যামনে, সাদিক মিয়ার মানুষজনইতো কর্পোরেশন চালায়। তাইলে?

ফারুক : মুই এতকুন কিছু কই নাইকোলম। মেয়র কামাল মেয়া, তারে বাদ দিয়া যদি সাদিক মিয়া চালায় তাইলে কামাল মেয়ারে লাগে কিতে? সাদিক মেয়ারে দিয়া দেলেইতো অয়।

বারেক: কথাতো হেইডাই। যদি তুই না পারো-তাইলে বইছ ক্যা? গদি ছাড়….

রুবেল : হেই কারনেইতো সরোয়ার মিয়ারে নামতে হইছে।

ফারুক: হে নাইম্যা নিজের কান নিজে কাঁটছে। আরে ব্যাডা তুমি ইলেকশন করছ বাফের লগে। মানষে তোমারে বড় জানে; হেইমেয়া যদি পোলার লগে ইলেকশনে খাড়ায় হ্যালে মান-সোন্মান কিছু থাহে?

রুবেল : তুমি মেয়া চা খাইতেছ চা খাও। এ রফিক অগোরে এক মগ চা দে। ইলেকশন বোঝে না খালি প্যালাচপোডে। আকাইম্যাডি। আরে ব্যাডা, এবারের ইলেকশনডাইতো হেইডা। তোমরা বোঝ সাদিক মেয়ার লগে সরোয়ার মেয়ার ইলেকশন? মোডেও না। ইলেকশন হইল হাসানাত মেয়ার লগে সরোয়ার মেয়ার। সাদিক মেয়া যদি ঠগে হ্যালে হাসানাত মিয়ার ইজ্জত থাকবে? প্রধানমন্ত্রী জিগাইবে না; কিরে মেয়া তোমার পোলা ঠগল ক্যা?

বারেক: কথাডা খারাপ কওনায়। টেনশন হইল মারামারি কোপাকুপি না হইলে হয়।

রফিক: না না। এফির হেই চান্স পাইবে না। কোন মারামারি হইবে না। মানষে কেন্দ্রেই যাইবে না। মারামারি হইবে কেমনে?

ফারুক: এ তুই আচুক্কা আচুক্কা কথা কইস না। মানষে কেন্দ্রে যাইবে না কেমনে? কেন্দ্রে কি বাঘ-ভাল্লুক আছে?

রফিক: হ্যার চাইতেও বড় কিছু। আপনেরা প্যাচালপোডেন ফাও। এমপি ইলেকশন দ্যাহেন নাই? ভোট কেন্দ্রে কেউরে লাগছে? গেছি…যাইয়া হুনছি আমার ভোটবোলে দেওয়া হইয়া গেছে। আ! মুই রইলাম ঘরে..মোর ভোট দিলাম কুনসময়?

বারেক : এমপি ইলেকশন আর মেয়র ইলেকশন এক না। মেয়র বিএনপি হইলেও লস নাই। এমপি ছুইট্টা গেলে ক্ষ্যামতা যাইবে।

রুবেল : ভোট যদি মানষে দিতে পারে হেলে সরোয়ার মিয়া হইবেই।

বারেক : ব্যাডা তুই আছ কোন দুনিয়ায়? সরোয়ার মিয়ার এহন কোন খানা আছে? মানষে চায় নতুন কিছু। আর অল্পতেই সাদিক মিয়া যেরহমের গুছাইয়্যা লইছে হ্যাতে কোন চান্স নাই। তুই যেরহমের কথাকও হে কথাতো জাতীয় পার্টির তাপসও কয়। ডাকতার মাইয়্যাগুয়্যায় কয়। দুই দিনের যুগী; ভাতেরে কয় অন্ন।

ফারুক : মোর মনে অয় কি জানো….ডাক্তার মাইয়্যাডাই আসল মেয়র। রিকশাআলাগো লইগ্যা জেল পর্যন্ত খাটছে।

রুবেল : খাডে নাই; খাডাইছে। ওইদিনতো তুমিও আলহ্যা, মুইও আলহাম। পুলিশরে কি কেউ মারছে? মোর মনে অয়, যেই দেখছে মনীষা ভাল কাম করতেছে। হেই পুলিশ লিলাইয়া দেছে। ভাল কামের সোন্মান নাই দ্যাশে।

রফিক : মনীষা কোন নেতাই না। সদর রোডে মাইক লইয়্যা গলা ফাডাইলেই নেতা হওন যায় না। নেতা হইতে হইলে কর্মী লাগে। ওতো কর্মী ছাড়া নেতা। বোঝলাম মনীষা ভাল মানুষ। কিন্তু হেরে ভোট দেবে কেডা? ভাল মানষের যদি দাম থাকত হেলে আগেরফির আজাদ মেয়ারে মানষে ভোট দেতে। হুনছি হেবোলে এমন ভোট পাইছে যে জমানতও ফেরত পায় নাই।

ফারুক: কাউন্সিলরেগো দশা দেখছ? দিশা পায় না। এফির হোমান হোমান কেন্ডিডেট হইছে। কারে মানষে ভোট দিবে হেই ধান্ধা লাইগ্যা গেছে।

রুবেল : তয় এডা মানতে হইবে সাদিক মিয়ার ফিল্ড ভালো। চাইরদিকে জোয়ার উডাইছে। জোয়ার উঠবে নাতো কি হরবে? দশ বচ্ছরইতো ক্ষ্যামতায় আ.লীগ। এহন সবাই আ.লীগ হইয়া গেছে।

রফিক : সুযুগবাদীর দ্যাশের সর্বনাশতো পাবলিকেই করে। ভোট আইলে কয়, মোর ঘরে পাঁচটা ভোট আছে-কয় টাকা দেবেন? প্রার্থীরা শ্যাষে টাকা দিয়া ভোট কেনে। নির্বাচনে জিইত্যা হেই টাকা উঠায়। এলাকার কাম করবে কেমনে?

বারেক : হেইজন্যই সাদিক মিয়ারে মেয়র লাগে। বাফে মিনিস্টার, বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়। পেটে খিদা নাই। কামও করবে মানষের জন্য।

ফরুক : সাদিক ভাই এফির মেয়র। ধইরা লও।

রুবেল : এত্ত তারাতারি ফল দিও না। আগের ইলিকশনেতো হিরন মিয়ারেও সবাই কইছিল; নো টেনশন, মেয়র আমহে। কই ভোটের একদিন আগে গেল হিসাব উল্টাইয়া।

বারেক : এফির আর হেই চান্স নাই। ওই ইলিকশনে আ.লীগ ঘুমন্ত আছিল। এফির হজাগ।

রফিক : যে যা কও মোগো কপাল যে ফাডা হ্যা আগের মতই আছে।

বারেক : কেমনে?

রফিক : জিনিসপত্রের যা দাম! উড়ি বাবা।

ফারুক : ক্যা তোমার আয় বাড়ে নাই? আগে এক কাপ চা আলহে ৫ টাহা। এহন ব্যাচো ৬ টাহা। আবার হুনছি ত্রিশ পায়ত্রিশ টাহাও ব্যাচে।

রফিক : ওই একটাহা বাড়াইলে কি অয়?

ফারুক : লাভ অয় না?

বারেক : লাভ যদি না হইত তাইলে তুই এই ব্যবসা ছাড়ো না ক্যা? ব্যাবসা ছাড়ো না আবার কও লাভ অয় না। চা ব্যাচো। তোর সোংসারের কেউতো না খাইয়া মরে নাই। তাইলে?

[এরপর আর ভোটের আলোচনান এগোয় না। ৫ জুলাই দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রুপাতলী ট্রাফিক ক্যাম্পের সামনে এই চারজন আলোচনায় জমে ওঠে। এরমধ্যে কথা বলে জানা যায়, চা বিক্রেতা রফিকের বাসা পলাশপুর বস্তির ৭ নম্বরে। বাকি তিনজর ফরুক, রুবেল ও বারেক প্রত্যেকে রিকশাচালক। ফারুক কারিকর বিড়ি ফ্যাক্টরীর ব্রাঞ্চ সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। রুবেলের বাসা পশ্চিম কাউনিয়া হাজেরা খাতুন সড়ক এবং রুবেলের বাসা স্টেডিয়াম কলোনীতে। এরা সবাই পূর্ব পরিচিত। কথা বলে জানা যায়, ভোটের এই আলোচনার তথ্য তারা বিভিন্ন স্থান থেকে জেনেছে। রিকশার যাত্রী, চা দোকানের ক্রেতা, প্রতিবেশীদের সাথে নিয়মতিই আলোচনা হয় ভোট নিয়ে। এই চারজনের বক্তব্য হল, বাঙালীর সম্পদ হল ভোট। সে কারনে ভোটের জন্য সবাই অদম্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে। আর ভোটের দিন এলে সবাই মিলে উপভোগ করেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD