মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ বির্তক যেন পিছু ছাড়ছে না ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান শাহিন মোল্লার। এবার সন্দেহের বশঃবর্তী হয়ে এক ইউপি সদস্যকে কুপিয়েছেন তার অনুসারী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে। আর নিজেও দাড়িয়ে ছিলেন সাথেই। এর আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ইন্সপেক্টর (বর্তমানে বাবুগঞ্জ থানার ওসি) মিজানুর রহমানকে তদন্ত কাজে বাধা ও লাঞ্ছিত করেন। যা নিয়ে ওই ইন্সপেক্টর শাহীনের বিরুদ্ধে জিডিও করেছিলেন। সেই তর্ক থামার পরপরই উপজেলার চরকয়া বাজারে ইভটিজারদের পক্ষ নিয়ে একজনকে মারধর করায় তাকে আটকে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। শেষে নলছিটি থানা পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
অভিযোগ রয়েছে মফিজুর রহমান শাহিন মোল্লা নিজের আধািপত্য ধরে রাখতে এলাকায় মাদকসেবী ও ছোট ছোট কয়েকটি লাঠিয়াল বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। সেই সূত্র ধরে মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান বিশ্বাসকে তার বাহিনী দিয়ে দাড়িয়ে থেকে মারধর করান। এক পর্যায়ে হাসান বিশ্বাসকে কুপিয়ে জখম করা হয়। বর্তমানে ওই ইউপি সদস্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
জানা গেছে, কিছুদিন পূর্বে মফিজুর রহমান শাহিন মোল্লার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কে বা কাহারা প্রকাশ করে দেয়। ছবিটি কুয়াকাটায় তোলা। ছবিতে আরও একজন পুরুষ রয়েছেন। ছবিতে আপত্তিজনক কিছু নেই। স্বাভাবিক ছবি।সেই নারী হচ্ছেন দপদপিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত (৭,৮,৯) ওয়ার্ড মেম্বার নাজমা বেগম। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় মফিজুর রহমান শাহিন মোল্লা সন্দেহ করে হাসান বিশ্বাসকে।
তবে ছবিটি প্রকাশ হওয়ার পর নানান কথা চাউর হতে থাকে। স্থানীয় লোকজন বলাবলি করতে থাকে তার চরিত্র নিয়েও। আর এতেই ক্ষুব্ধ হন মফিজুর রহমান শাহিন মোল্লা। ওদিকে পরমা সুন্দরী নাজমা বেগমের সাথে ছবি প্রকাশ হওয়ায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের পরিবারেও শুরু হয় অশান্তি। এ নিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি হয় মফিজুর রহমান শাহিন মোল্লার সংসারেও বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। সেই ক্ষোভ সংবরণ করতে না পেরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চরকয়ায় সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এসে ওৎ পাতেন মফিজুর রহমান শাহিন মোল্লা।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর ১টায় হাসান বিশ্বাস বাসা থেকে বের হয়ে চরকয়া এলাকার দক্ষিণকান্দা আলীর দোকানের সামনে রওনা দিলে খলিফা বাড়ির মসজিদের সামনে পথরোধ করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান শাহীন ও তার পান্ডারা। হাসান বিশ্বান বলেন, শাহিন মোল্লা ও তার ভাগিনা রিপন তালুকদার, রুমেল, হামজা, চাচাতো ভাই জসিম মোল্লা এবং তাদের সহযোগী বাবুল বিশ্বাস মাহবুবসহ ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
অস্ত্রের কোপে হাসান বিশ্বাসের মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে। তাছাড়া তার বাম পায়ের হাটুর নিচে ক্ষুরের আঘাতে হাড় কাটা জখম হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে সার্জারি ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, ধারালো আঘাতে মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে।অবস্থার অবনতি হলে যেকোনো সময় তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা লাগতে পারে।
দপদপিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মান্নান চুন্নু জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান শাহীন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। প্রায় সময় বিভিন্ন নারী সংঘটিত কারণে নিয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাহিন মোল্লা এক নারীর সাথে আপত্তিকর ছবি ভাইরাল হলে সে এলাকার তার শত্রুদের উপর সন্দেহ করে হুমকি দেয়। প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য হাসান বিশ্বাসকে আপত্তিকর ছবি ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় সন্দেহ করে হত্যার চেষ্টায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছেন বলে জেনেছি। মূলত শাহিন মোল্লার কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে আছে।
অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান শাহিন জানান,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ছবি ভাইরাল ঘটনায় মারামারির মতো ঘটনা ঘটেনি। করোনা মোকাবেলায় প্রতিরোধ করতে সাতটার পর রাস্তাঘাটসহ বাজারে লোকজন থাকতে পারবেনা বলে এই মর্মে সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হলে হাসান বিষয়টিকে অন্যদিকে নেয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ছবিটি বানানো। এদিকে হামলার ঘটনায় মামলা হয়নি তবে প্রস্তুতি চলছে বলে আহতের স্বজনরা জানান।
Leave a Reply