স্টাফ রিপোর্টার:বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে সাধারণ ৩০ ওয়ার্ডের মধ্যে ২২ জন কাউন্সিলরকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে তিনজনের প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তারা আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। অপর ১৯ জন সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। অনিয়মের অভিযোগে ১টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল এবং ১৫টি কেন্দ্রের ফল স্থগিত করায় সংশ্লিষ্ট ৮ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। এই ৮ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩০ জুলাই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, মারধর কেন্দ্র দখল, প্রশাসন ব্যবহার করে সুষ্ঠ ভোট না হতে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ৮ কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। যে কারনে পুনরায় ভোট গ্রহণ হতে পারে এসব কেন্দ্রে।
একই কারণে সংরক্ষিত ৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলও আটকে গেছে। তবে ১০টি সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের মধ্যে পাঁচজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলদের মধ্যে ১৫ জন আওয়ামী লীগ দলীয়, পাঁচজন বিএনপির, একজন জাতীয় পার্টি ও একজন স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হন। পাঁচজন সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের ও দুইজন বিএনপির।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ফল স্থগিত থাকা ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা এবং স্থগিত কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠনো হবে। ইসি থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্তের পর নির্ভর করবে সাধারণ ৮ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৫ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফল।
ওই ৮টি ওয়ার্ডে সবগুলো কেন্দ্র দখল করে নেন আ.লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এরমধ্যে ২০ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী জিয়াউর রহমান বিপ্লব প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী এসএম জাকির হোসেনের কর্মীদের ভোট দিতে দেননি। যারা ভোট দিতে গেছেন তাদেরকে মারধর করেছেন বিপ্লব নিজে। এছাড়াও ঢাকা বোর্ডের চ্যোরম্যান প্রফেসর জিযাউল হক বিএম কলেজ কেন্দ্রে দাড়িয়ে থেকে নারী ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বেড় করে দেওযার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, বিএম কলেজের কেন্দ্র দুটি ছিল জিযাউল হকের দখলে। তিনি প্রশাসনিক কেউ না হলেও তার নির্দেশে ওই কেন্দ্রে পশাসন কাজ করেছে। ওদিকে গোরস্থান রোডস্থ ভোটকেন্দ্র-৭৬ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাওয়ায় এসএম জাকির হোসেনের এক কর্মীকে মারধর করেন জিযাউর রহমান বিপ্লব। এতে ওই কেন্দ্রে আতংক ছড়িয়ে পরে। ফলে ভোটাররা ফিরে যান।
ঘুড়ি প্রতিকের প্রার্থী এসএম জাকির হোসেনের ভোটারদের ধাওয়া দিয়ে বেড় করে দিচ্ছেন জিয়াউর রহমান বিপ্লব
১০ নং ওয়ার্ডে জয়নাল আবেদিন ও এটিএম শহিদুল্লাহ’র সমর্থকদের মধ্যে ব্যপক সংর্ঘস হয় এছাড়া বাকি কেন্দ্র ১৪, ১৭, ২২, ২৩, ২৫ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে আ.লীগের প্রার্থীরা কেন্দ্র দখলে নিয়ে আর কাউকে ভোট দিতে না দেওয়ায় ফলাফলের এই স্থগিতাদেশ দেওযা হয়।
ফলাফল স্থগিত রাখার কারণে যেসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফল ঘোষণা হয়নি সে ওয়ার্ডগু ও প্রার্থীরা হলেন, ১০ নম্বরে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের এটিএম শহিদুল্লাহ ও ঘুড়ি প্রতিকের জয়নাল আবেদিন হাওলাদার, ১৪ নং ওয়ার্ডে ঘুড়ি প্রতিকের এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন মাসুম, ঠেলাগাড়ি প্রতিকের তৗহিদুর রহমান, ঠেলাগাড়ি প্রতিকের শাকিল হোসেন পলাশ, ১৭ নংওযার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতিকের মোঃ আকতার উজ্জামান গাজী (হিরু), ঘুড়ি প্রতিকের মোঃ আনোয়ার হোসেন, ২০ নং ওয়ার্ডে ঘুড়ি প্রতিকের এস এম জাকির হোসেন, ঠেলাগাড়ি প্রতিকের জিয়াউর রহমান বিপ্লব, রেডিও প্রতিকের সাইদুর রহমান, ২২ নং ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতিকের আনিছুর রহমান, ঘুড়ি প্রতিকের আ. ন. ম. সাইফুল আহসান আজিম, ২৩ নং ওয়ার্ডে ঘুড়ি প্রতিকের এনামুল হক (বাহার), ঠেলাগাড়ি প্রতিকের এমরান চৌধুরী জামাল ও টিফিন ক্যারিয়ার প্রতিকের মোঃ মিজানুর রহমান, ২৫ নং ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতিকের সাইদুর রহমানি জাকির, ঘুড়ি প্রতিকের মো: আবু হানিফ এবং লাটিম প্রতিকের জিয়াউদ্দিন সিকদার, ২৭ নং ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতিকের আবদুর রশিদ হাওলাদার, ঘুড়ি প্রতিকের মোঃ গিয়াস উদ্দিন বাবুল মোল্ল, ট্রাক্টর প্রতিকের মোঃ আলতাফ হোসেন সিকদার (হাবুল), লাটিম প্রতিকের মোঃ নুরুল ইসলাম, টিফিন ক্যারিয়ার প্রতিকের মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার।
সাধারণ ওয়ার্ডে বিজয়ী কাউন্সিলররা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডে আমীর হোসেন বিশ্বাস (আওয়ামী লীগ), ২ নম্বর ওয়ার্ডে মুরতজা আবেদীন (জাপা), ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মো. হাবিবুর রহমান ফারুক (বিএনপি), ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৌহিদুর রহমান বাদশা (আওয়ামী লীগ), ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কেফায়েত হোসেন রণি (স্বতন্ত্র), ৬ নম্বর ওয়ার্ডে খান মো. জামাল হোসেন (বিএনপি), ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রফিকুল ইসলাম খোকন (বিএনপি), ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. সেলিম হাওলাদার (বিএনপি), ৯ নম্বর ওয়ার্ডে হারুন অর রসিদ (বিএনপি), ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মজিবর রহমান (আওয়ামী লীগ), ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জাকির হোসেন ভুলু (আওয়ামী লীগ), ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মেহেদি পারভেজ আবীর (আওয়ামী লীগ), ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে লিয়াকত হোসেন খান (আওয়ামী লীগ), ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মোশারফ আলী খান বাদশা (আওয়ামী লীগ) ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে মীর জাহিদুল কবির (বিএনপি), ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাজী নাইমুল হোসেন লিটু (আওয়ামী লীগ), ২১ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্ন (আওয়ামী লীগ), ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে আনিছুর রহমান শরীফ (আওয়ামী লীগ), ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে মো. হুমায়ুন কবীর (আওয়ামী লীগ), ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন(আওয়ামী লীগ), ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ফরিদ আহম্মেদ (আওয়ামী লীগ) ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আজাদ হোসেন মোল্ল কালাম (আওয়ামী লীগ)।
সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বিজয়ীরা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডে (সাধারণ ১, ২ ও ৩) মিনু রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ডে (সাধারণ (৪, ৫ ও ৬) জাহানারা বেগম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (সাধারণ ৭, ৮ ও ৯) কোহিনুর বেগম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে (সাধারণ ১০, ১১ ও ১২) আয়েশা তৌহিদা লুনা (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়) এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডে (সাধারণ ২৮, ২৯ ও ৩০) রাশিদা পারভীন।
এছাড়া ১৫ কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত থাকার কারণে সংরক্ষিত ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল ঘোষণা করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
Leave a Reply