রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
সুমন খান,বানারীপাড়া॥
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২(বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে ৯০’র স্বৈরাচার এরাশাদ বিরোধী গণঅভূত্থানের অগ্রসৈনিক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক জনপ্রিয় সভাপতি জন ও কর্মীবান্ধব মাটি-মানুষের নেতা শাহে আলমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় পাল্টে গেছে এ আসনের নির্বাচনী রাজনীতির সব হিসাব নিকাশ। তাকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনতার মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। তার মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন বানারীপাড়া ও উজিরপুরের নেতা-কর্মী সহ হাজার হাজার জনতা ছুঁটে আসেন।
মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পরেও বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস,বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম ফারুক,উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা,উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল,সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা,উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জামাল হোসেন,সাধারণ সম্পাদক আ. মজিদ সিকদার বাচ্চু ও পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন সহ দুই উপজেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ শাহে আলম’র দলীয় মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়ন পত্র দাখিলের পরপরই স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ও একাট্টা হয়ে আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছরের অপেক্ষার পরে এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রাণের দাবী “কর্মী বান্ধব” নেতা শাহে আলমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় লাল সবুজ পতাকা ও মানচিত্র অর্জনের প্রতীক নৌকার পালে আগাম হাওয়া লাগাতে সকল ভেদাভেদ ভুলে দলটির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমে পড়েছেন।
ইতোমধ্যেই তারা কেন্দ্র পরিচালনা ও সুরক্ষা কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। প্রসঙ্গত এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রথমে জাপা নেতা (বহিরাগত) চিত্র নায়ক মাসুদ পারভেজ ( সোহেল রানার) নাম আলোচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে আসে। এখানে নৌকার জন্য রীতিমত হাহাকার সৃষ্টি হয় নেতা-কর্মীদের মাঝে। এ আসনে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কোন অবস্থান নেই। ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ে নেই কমিটি। দুই উপজেলায় হাতে গোনা ২/৪ জন কর্মী শূণ্য নেতার পকেট কমিটি রয়েছে। এখানকার ভোটারদের মাঝে জাতীয় পার্টি, এর প্রার্থী কিংবা প্রতিক লাঙ্গল নিয়ে কোন আলোচনা,গুরুত্ব কিংবা আগ্রহ নেই। এলাকাবাসীর মাঝে বহিরাগত প্রার্থীকে ভোট দেওয়া নিয়ে চরম অনিহা রয়েছে। ১৯৯১ সালে শুধুমাত্র “আঞ্চলিকতার” ইস্যুতে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী দলের তৎকালীণ প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু বিএনপির স্থাণীয় প্রার্থী সৈয়দ শহীদুল হক জামালের মতো একজন সাবেক ইউপি সদস্যের কাছে পরাজিত হয়ে ছিলেন।
সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা এখনও ভুলেননি এখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা নৌকা প্রতিকের বাহিরে অন্য কোন প্রতিকে ভোট দিতে নারাজ। এ কারণে এখানে তারা লাঙ্গলের চাষা নয় নৌকার মাঝী দাবী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ঝড় তোলেন। ফলশ্রুতিতে নেতা-কর্মীদের প্রাণের দাবীর প্রতি একাত্মতা জানিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা মুজিব অন্তঃপ্রাণ মাটি ও মানুষের নেতা শাহে আলমকে দলীয় মনোনয়ন দিলে ঝিমিয়ে পড়া হতাশাগ্রস্থ নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার হয়। নবরূপে তারা উজ্জীবিত হয়ে নৌকার বিজয় অব্যাহত রাখার ইস্পাত কঠিন শপথ নেন।আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী হাসিনা ”শাহে আলমকে প্রার্থী হিসেবে উপহার” দেওয়ায় ৩০ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে বরিশাল-২ আসনটি তাকে উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন এখানকার মুজিব অন্তঃ প্রাণ সৈনিকেরা।
শাহে আলম নিজের জন্য রাজনীতি না করে এলাকার মানুষের মুখ দেখে হৃদয়ের ভাষা বুঝে তাদের পক্ষে কাজ করে আসছেন দশকের পর দশক ধরে। তৃণমূলের হৃদয়ে স্থান করে নেয়া এই নেতাকে ১৯৯১ সাল থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর পর্যন্ত নৌকার কান্ডারী হিসেবে চেয়ে না পেয়েও তার সঙ্গ ছাড়েননি দীর্ঘ বছরের ত্যাগী,পরীক্ষিত,নির্যাতিত নেতা,কর্মী ও সমর্থকরা। অবশেষে এবার শাহে আলমকে পেয়ে উৎফুল্ল তারা। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেওয়া শাহে আলম ৭৫’র ১৫ আগষ্টের পরে যখন বঙ্গবন্ধুর নাম নিতেও মানুষ ভয় পেতো তখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবীর আন্দোলন গড়ে তুলতে ও আ’লীগকে পুর্নজ্জীবিত করতে বরিশাল অঞ্চলে হাতে গোনা যে ক’জনের ভূমিকা রয়েছে বরিশাল বিএম কলেজের তৎকালীণ ছাত্র শাহে আলম তাদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে তৃনমূল থেকে তার কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য,পাঠাগার সম্পাদক,যুগ্ম সম্পাদক,সহ-সভাপতি ও সর্বশেষ সভাপতির আসন অলঙ্কিত করেন তিনি।১৯৮১-সাল থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগকে সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত সংগঠনে রুপান্তর করা ও সৈররাচার বিরোধী আন্দোলনে সংগ্রামে অগ্রণী ভ’মিকা রাখায় মুগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা ৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের তৎকালীণ সভাপতি ও সম্পাদকের পরিবর্তে সহ সভাপতি সুদর্শন শাহে আলমকে ভিপি প্রার্থী করেন। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনি ছাত্রদল প্রার্থী আমান উল্লাহ আমান’র কাছে হেরে যাওয়ার পরেও সাংগঠনিক দক্ষতার কারনে তাকে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।ওই সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের দখল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো মুক্ত করতে তিনি তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও কলা কৌশল কাজে লাগান।
বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকার আমলে (৯১-৯৬ ও ২০০১-২০০৬) বানারীপাড়া,স্বরূপকাঠি ও উজিরপুর সহ বরিশালে আ’লীগকে সুসংগঠিত করে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ-সম্পাদক শাহে আলমকে অসংখ্য মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার আসামী হওয়া সহ নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এলাকার পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় পর্যায়েও চারদলীয় জোটের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালণ করতে গিয়ে জোট সরকারের রোষানলে পড়েন।সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে গিয়ে তাকে মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়।ওয়ান ইলেভেনে দলের পক্ষে তার ব্যপক ভূমিকা থাকার পরেও তাকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা হতবাক হন।১৯৯১,৯৬,২০০১,২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি ও পরবর্তীতে বানারীপাড়া-উজিরপুর আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পেতে ব্যর্থ হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী না হয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে দলের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বিশেষ ভ’মিকা পালণ করেন।
২০১৪ সালে বরিশাল-২(বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে বহিরাগত বরিশাল জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসের সঙ্গে তিনি যৌথভাবে দলীয় মনোনয়ন পান।পরবর্তীতে এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হলে তিনি নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার দাবী উপেক্ষা করে দলীয় সভানেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।অথচ ওই নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আঞ্চলিকতার টানে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে বিজয়ী-ই হতেন।
কিন্তু দলের বৃহত্তর স্বার্থে ও আ’লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে তিনি সেপথে না গিয়ে ত্যাগের মহিমায় নিজেকে উদ্ভাসিত করেন। তার রয়েছে সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল বিশাল কর্মী বাহিনী। বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে এ আসনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে মাটি ও মানুষের নেতা কর্মী বান্ধব শাহে আলমের বিকল্প নেই বলে নেতা-কর্মী ও সমর্থক সহ রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহলের অভিমত।
Leave a Reply