শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি:বরগুনার আমতলী উপজেলার তারিকাটা গ্রামে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কালাম প্যাদাও ইউসুবের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোববার পর্যন্ত ৫০ টি ঘড় তুলে কোটি টাকা মূল্যের ৪৫ শতাংশ জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমতলী উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে পূর্ব তারিকাটা গ্রামের মেনাজ প্যাদার ছেলে কালাম প্যাদা ও তার স্ত্রী বকুল বেগমের নামে ভূল তথ্য দিয়ে ভূমিহীন সেজে আরপাঙ্গাশিয়া বাজারের পশ্চিম পার্শে অবস্থিত ৪৯ নং তারিকাটা মৌজার ১ নং খাস খতিয়ানের ১১২০ ও ১০৮২ নং দাগের ১ একর জমি বন্দোবস্ত নেন। এই বন্দোবস্ত নিয়ে স্থানীয় ভাবে নানা বিতর্ক ওঠে।
বিতর্কের পর স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন হাওলাদার গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ বন্দোবস্ত বাতিলের দাবী করে বরগুনার জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, কালাম প্যাদার নামে পৈত্রিক সম্পতি রয়েছে সে তথ্য গোপন করে তার এবং তার স্ত্রী বকুল বেগমের নামে ১ একর খাস জমি বন্দোবস্ত নেন।
এ ছাড়া একই ব্যাক্তি জাকির হোসেন হাওলাদার এই জমির উপর সকল ধরনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বরগুনার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত জমির উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কালাম প্যাদা এবং ইউসুবের নেতৃত্বে তরিঘড়ি করে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি শতাধিক লোকের শমাগম ঘটিয়ে দখলের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে।স্থানীয় বাসিন্দা মো: নাজমুল হাওলাদার বলেন, কালাম প্যাদাকে সহযোগিতা করছেন, আমতলী ভূমি অফিসের সাবেক চেইন ম্যান ইউসুব। তিনি বর্তমানে বরিশালের মুলাদি উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত। সে আমতলীতে নামে বেনামে প্রায় ৫৮টি খাস জমির কার্ড করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এই দুর্নীতির বিচার এবং ভূয়া খাস জমির কার্ড বাতিলের দাবী করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: আবদুল মতিন জানান,
কালাম প্যাদা ভূমিহীন না হয়েও তার তথ্য গোপন করে খাস জমি নিয়ে তা দখল করে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘড় তুলে সরকারী খাস জমি দখল করেছেন। এর পেছনে কলকাঠি নারছেন তারিকাটা গ্রামের সরকারী চেইনম্যান ইউসুব। তিনি একজন অসৎ কর্মচারী। আমতলী ভূমি অফিসে চাকুরী কালীন সময়ে তিনি নিজের ভাইবোন অনেক আত্মীয় স্বজনকে ভূমিহীন সাজিয়ে খাস জমি নিয়েছেন।
রোববার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শতাধিক লোক আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় ৪৫ শতাংশ জমি দখল করে তাতে শত শত গাছের খুটি, বাঁশ দিয়ে ঘড় তৈরী করে তাতে টিনের ছাউনির কাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল আহসান রাসেল বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কালাম প্যাদা খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার বিরুদ্ধে বরগুনার জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করায় সেটি এখন বাতিলের প্রক্রিয়াধীন। এই খবর পেয়ে কালাম প্রাদা তারিকাটা গ্রামের চেইনম্যান ইউসুবের (বর্তমানে সে বরিশালের হিজলা উপজেলার ভূমি অফিসে চেইনম্যান হিসেবে কর্মরত) শলাপরামর্শে এবং সহযোগিতায় তরিঘড়ি করে এখন ঘড় তুলছেন।
চেইন ম্যান ইউসুব ও কালাম প্যাদা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার এবং আমার স্ত্রীর নামে দেওয়া বসেন্দাবস্ত পাওয়া জমিতে ঘড় তুলছি। আপনি একজন ভূমিহীন মানুষ কি ভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ঘড় তুলেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি সমিতির মাধ্যমে এ ঘড় তুলছি।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, কালাম প্যাদার বিরুদ্ধে ভূমিহীন না হয়েও খাস জমি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদান্তাধীন। অভিযোগ প্রমানিত হলে খাস জমির বন্দোবস্ত বাতিল করা হবে। এ ছাড়া এটির উপর আদালতের নিষোধাজ্ঞা রয়েছে তাও কালাম প্যাদা মানছেন না।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সরোয়ার হোসেন বলেন, খাস জমি দখল করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply