শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সেনাবাহিনীর টহল ব্যতীত মাঠে কোন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকলেও বরিশালে অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। দোকানপাটসহ, বিপনি-বিতান ও অফিস আদালত খোলা থাকায় সেসব জায়গাতে লোকসমাগম বেড়েছে। ফলে বিগত কয়েকদিনের তুলনায় সড়কগুলোতে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন এবং মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল বেড়েছে। আর বাড়তি গাড়ির চাপ সামাল দিতে সড়কে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিক্ষার্থীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। তবে মঙ্গলবারের থেকে বুধবারে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রম উপস্থিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি তাদের কর্ম এলাকাও বাড়ানো হয়েছে।
মোটরসাইকেল চালক নাদিম জানান, বুধবার নগরীর এমন কোন ব্যস্ততম সড়ক নেই কিংবা সড়কের মোড় নেই যেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তারা যানবাহন চলাচলে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। গাড়ির চাপ অনুযায়ী ম্যানুয়াল সিগন্যাল (হাত ও বাঁশি) এর মাধ্যমে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, সেইসাথে শৃঙ্খলা থাকায় নগীরর ব্যস্ততম সদর রোডে তেমন কোন যানজটও পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি বলেন, যানবাহন চালকদের ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালনার ক্ষেত্রে হেলমেট ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
এদিকে নগরীর সদর রোডসহ বিভিন্ন সড়ক, ফুটপাত ও এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ দেশটা যেমন আপনার তেমনি আমারও। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা দেশটাকে সুন্দর-স্বাভাবিক রাখতে যেমন চাই, তেমনি সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের যানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবাইকে নিয়ে বসবাসও করতে চাই। সুবিধাবাদীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালেও আমরা সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম থাকবো। আর সাধারণ মানুষও আমাদের পাশে রয়েছে।
এদিকে বরিশালের বিভিন্ন উপসনালয়, মন্দিরের নিরাপত্তায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। সেইসাথে বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। তাদের শান্তিতে বসবাস করার পাশাপাশি কোন ধরনের সমস্যা হলে নেতাদের অবগত করার কথা জানিয়ে পাশ থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
অপরদিকে হামলার ঘটনার পর বরিশাল প্রেসক্লাব পরিদর্শনে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ওইসময় তারা সাংবাদিক সংগঠন ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান।
এদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরিশাল জেলা পুলিশের সদস্যরা। বুধবার দুপুর ১টায় বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে এ সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদের পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যরা বলেন, আপনাদের একটি নতুন বাংলাদেশে স্বাগতম। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, সেসব শহীদদের যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হয়েছেন। তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি আন্দোলনে আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
তারা বলেন, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে এবং সরকারি আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খুবই ক্ষীণ। তথাপিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে শুরু থেকেই পুলিশের অধিকাংশ সদস্য মৌনভাবে একাত্মতা পোষণ করে এসেছে বলে আমরা দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বলতে চাই। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনী একটি চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করে চলে। চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করেই পুলিশ বাহিনীর অধস্তনরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। আর সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই পুলিশ বাহিনী আজ ছাত্র-জনতার মুখোমুখি। এছাড়াও বরাবরই পুলিশের প্রতি কিছু সংখ্যক সাধারণ জনতার একটা ক্ষোভ কাজ করে, কিন্তু কেউ কখনো এটা ভাবে না আমরাও তাদের মতো কারো সন্তান, তাদের মতো কখনো ছাত্র ছিলাম, এখন চাকরির জন্য দায়িত্বের খাতিরে ঊর্ধ্বতনদের আদেশ মানতে আমরা বাধ্য, সেখানে আমাদের দোষটা কোথায়।
তারা দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মুক্তিকামী সাধারণ ছাত্র-জনতা কখনোই এসব ধ্বংসযজ্ঞের পক্ষে না। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে আমরা সর্বদা জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে আইনানুযায়ী বদ্ধপরিকর। ৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই আমরা দেখেছি, আমাদের অভিভাবকরা কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়াই আত্মগোপনে চলে যান যা আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেয়। যথাযথ নির্দেশনার অভাবে আমরা অনেক পুলিশ সদস্যদের হারিয়েছি। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি কর্তৃক পুলিশ সদস্যদের বাসাবাড়িতেও হামলা চালানো হচ্ছে। জীবন রক্ষার্থে অনেকে আত্মগোপনে আছেন। এমতাবস্থায়, পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যদের নিরাপত্তা এবং নিম্নোক্ত দাবি নিশ্চিত না হওয়া অবধি আমরা পুলিশ বাহিনীর অধস্তনরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছি। দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষত অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে যেন কোনো দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পাবে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন দাবি পেশ করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মিছিল করেন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা।
Leave a Reply