মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক॥ খুশির ঈদের নামাজ পড়ে তাঁরা নিজেদের মতোই পালন করছিলেন উৎসব। সবাই পশু কেরবানিতে ব্যস্থ। কেউবা গরিবদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করছিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ খবর এলো, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় তার লাশ ফেলে পালিয়ে গেছেন স্বজনরা।
তখন শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে শয্যার প্রকট সংকট। সময়ের সঙ্গে করোনা উপসর্গ নিয়ে শয্যার জন্য রোগীদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছিল। তাই শয্যা খালি করতে হাসপাতাল থেকে ফোন আসে তাদের কাছে। ঈদের উৎসব শিকেয় তুলে পাশে দাঁড়াতে বেরিয়ে পড়েন তারা। করোনার ভয় উপেক্ষা করে হাজির হন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে।
নিজেরা ভ্যানে করে লাশ নিয়ে যান আঞ্জুমান ই হেমায়েতে ই ইসলামে। সেখানে গোছল করিয়ে যখন দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন মৃতের স্বজনরা গিয়ে উপস্থিত হন। দূর থেকে দাড়িয়ে স্বজনরা শুধু দাফন প্রক্রিয়া দেখছিলেন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে তারা কাছে আসেননি।
শুধু এই একটি ঘটনা নয়, তাদেরকে এ রকম শতশত ঘটনার মুখেমুখি হতে হয়েছে। দুই হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের দাফন করেছেন তারা। এই তারা হচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা ও উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন করেছেন।
যেখানে করোনায় কেউ মারা গেলে ভয়ে প্রতিবেশীরা তো দূরের কথা নিকট স্বজনরা পর্যন্ত কাছে ঘেঁষতেন না। তখন সমস্ত ঝুঁকির কথা চিন্তা করেও এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবীরা। করোনায় দাফন সেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সংগঠনের কর্মীরা। শেষ বিদায়ে মৃত দেহের গোছল, কাফন এবং প্রয়োজনে কবরস্থানে গিয়ে দাফন করছেন কর্মীরা।
বরিশালে চরমোনাই ভলান্টিয়ার সার্ভিস ২৫০ জনের মতো মানুষকে ফ্রি অক্সিজেন বিতরণ করেছে। একই জেলায় করোনায় মৃত ১৭৯ জন গোসল ও দাফন-কাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির ও শায়খে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। শায়খে চরমোনাই সম্প্রতি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সকল কর্মী করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন। আর পোশাক পরিহিত ভলান্টিয়ার সার্ভিস যুক্ত আছেন হাজার হাজার কর্মী। তারা করোনায় এবং উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তিতের দাফন কাফন করাচ্ছেন। এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে দাফন করেছেন কর্মীরা।
শায়খে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম দাবী করে বলেন, করোনায় এবং উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তিতের দাফন কাফন করাতে গিয়ে কোনো কর্মী করোনায় আক্রান্ত দূরের কথা তারা জ্বরেও ভুগছেন না।
তিনি আরো বলেন, রোগব্যাধী আল্লাহ দিবেন, আবার কোনো না কোনো উছিলায় তিনিই আপনাকে রোগমুক্তি করবেন। রোগমুক্তির আশায় আপনি পা গুটিয়ে থাকলে চলবে না। রোগমুক্তির জন্য আপনাকে চেষ্টা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Leave a Reply