সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ভিসিসহ ৭ জনকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সদ্য বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদের মেয়াদকালে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন পদে অনেক লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে আইনি নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী। তবে বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদকে নোটিশ দেওয়া হয়নি।
ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন গত ৩০ মে নোটিশ দেন। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ১৫ জুন সকাল ১০টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে জানানোর অনুরোধ করা হয়। অন্যথায়, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, পবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, রেজিস্ট্রার মো. কামরুল ইসলাম ও পবিপ্রবির কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহীন হোসেন এবং কৃষিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রওশন জাহান লিপি। এদের মধ্যে অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও সহযোগী অধ্যাপক রওশন জাহান লিপি সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই এবং রওশন জাহান লিপির দেবর মো. কামরুজ্জামান এবং শাহীন হোসেনের বড় বোন নাজমুন নাহারকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ দুটি বাতিলের দাবি করা হয় নোটিশে।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, পবিপ্রবির প্রভাষক পদে চাকরি প্রার্থী ছিলেন কুষ্টিয়ার দেবাশীষ মণ্ডল। ওই পদে চাকরি দেওয়ার জন্য তার কাছে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। অথচ বাছাই পরীক্ষার ফলে তিনি সেরা ছিলেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও রওশন জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দেবাশীষের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। দেবাশীষ যেকোনো মূল্যে ওই চাকরি পেতে আগ্রহী ছিলেন। পরে সাক্ষাৎকার বোর্ড অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে তার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বাড়তি ৫ লাখ টাকা যোগাড় করতে তাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সর্বোপরি দেবাশীষ ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় ওই চক্রটি রফিক উদ্দিন নামে আরেকজন নতুন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ওই পদে চাকরি দেন।
মৌখিক পরীক্ষা শেষে দেবাশীষ জানতে পারেন তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন এবং তার পরিবর্তে রফিক উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ওই পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পরে দেবাশীষ ২০১৮ সালের ১৪ মে কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে আত্মহত্যা করেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও রওশন জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে নোটিশে দাবি করা হয়।
নোটিশে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। কিন্তু তা তারা করেনি। এতে ওই নিয়োগটিতে ঘুষ-বাণিজ্যসহ অনৈতিক কার্যকলাপ হয়েছে। ওই নিয়োগে দেবাশীষ মণ্ডলের সিজিপিএ ছিল ৩.৮২। অথচ ওই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত রফিক উদ্দিনের সিজিপিএ ৩.৬৪। যা দেবাশীষের চেয়ে কম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, পবিপ্রবির উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় নোটিশে।
পবিপ্রবির ভিসি স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে অন্য নোটিশপ্রাপ্তরা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Leave a Reply