বরিশালে মানবপাচার মামলায় কারাগারে ৩ Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:
বরিশালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্য কোন দ্বন্দ্ব নেই: চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাকির মোবাইল ইন্টারনেট গতি সূচকে বাংলাদেশের আরও অবনতি ৫২৭টি ভারতীয় খাদ্যপণ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের অস্তিত্ব মিলেছে: ইইউ মাদক মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ, আসামী খালাস কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা বৃষ্টির জন্য বরিশালে ইসতিসকার নামাজ আদায় সদর উপজেলার শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চাই : এসএম জাকির তাপপ্রবাহে তৃষ্ণার্তদের মাঝে ইয়াস’র পানি ও স্যালাইন বিতরণ মঠবাড়িয়ায় বৃষ্টি কামনা করে ইসতেস্কার নামাজ আদায় বৃষ্টির জন্য ঝালকাঠিতে ইস্তিসকার নামাজ আদায়




বরিশালে মানবপাচার মামলায় কারাগারে ৩

বরিশালে মানবপাচার মামলায় কারাগারে ৩

রাজাপুরে স্বামীর সংসারে এসে কখনোই সুখের মুখ দেখেননি সেতারা বেগম রাজাপুর প্রতিনিধি॥ স্বামীর সংসারে এসে কখনোই সুখের মুখ দেখেননি সেতারা বেগম। যুগ যুগ ধরে জীবন বাঁচার সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন তিনি। রোদ, বৃষ্টি ও তীব্র শীতও দমাতে পারেনি তার পথচলা। দু’মুঠো খাবারের জন্য ১৯৯০ সালের দিকে হাতে নিয়েছিলেন ভিক্ষার ঝুলি। কখনো শাক-সবজির দোকান আবার কখনো চায়ের দোকান। কিছুতেই যেন দুঃখ তার পিছু ছাড়ছে না। যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন তার সংসারের হাহাকার তীব্র হচ্ছে। নেই খাবার ও মাথা গোজার ঠাঁই। অসুস্থ দৃষ্টিহীন স্বামীর জন্য নেই চিকিৎসার খরচ। অপর দিকে ঋণের বোঝা তার মাথায়। প্রতি সপ্তাহে গুনতে হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি। ঝালকাঠির রাজাপুরের শুক্তগড় ইউনিয়নের কেওতা গ্রামের দুই নম্বর ওয়ার্ডের দৃষ্টিহীন আ: মালেকের (৮০) স্ত্রী সেতারা বেগম (৬২)। তাদের জীবনের কষ্টের কথাগুলো এভাবে বললেন। সেতারা বেগম বলেন, স্বামী মালেক ৪০ বছর আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হন। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা না করাতে পারায় তিনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত চার থেকে পাঁচ মাস আগে মালেকের চোখে সানি পড়ে দৃষ্টি হাড়িয়ে ফেলেন তিনি। মালেকের বসত ভিটায় ৩৩ শতাংশ জমি থাকলেও অর্থের অভাবে সেখানে ঘর তৈরি করতে পারেননি। বর্তমানে তারা থাকেন উপজেলার বাগরী এলাকার ব্রাক অফিসের দক্ষিণ পাশের রুহুল আমিনের পরিত্যাক্ত জমিতে এক কক্ষ বিশিষ্ট পলিথিনের চালার ঝুপড়ি ঘরে। সেতারা বেগম জানান, তার সংসারে অভাব দেখা দিলে প্রথমে তিনি দুই থেকে তিন বছর ভিক্ষা করেন। অষ্টম শ্রেণী পাস সেতারা ভিক্ষাবৃত্তি ভালো কাজ নয় তা বুঝতে পেরে ভিক্ষা করা ছেড়ে দিয়ে দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে খুলনায় চলে যান। সেখানে তিনি অসুস্থ স্বামীকে সাথে নিয়ে প্রায় আট বছর শাক-শবজির ব্যবসা করেন। ওই ব্যবসায় ভালোভাবে সংসার না চলায় সেখান থেকে বরিশালে এসে রুপাতলিতে একটি চায়ের দোকান দেন। বরিশালে থাকতে মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন তারা। বসত ভিটায় বাঁশ দিয়ে একটি ঘর ছিল তাদের। সংসার চালাতে কষ্ট হলে বাড়িতে এসে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নেন সেতারা। লেনদেনের মাধ্যমে লোনের পাল্লা ভারী হতে থাকে। বৃদ্ধি পায় কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ। তিনি আরো বলেন, ২০০৭ সালের সিডরে তছনছ হয়ে যায় তাদের ঘরটি। এর পর ভাড়া থাকেন রাজাপুরের বিভিন্ন জায়গায়। ইতোমধ্যে পর পর বিয়ে করেন তাদের দুই ছেলে হুমায়ুন কবির ও সুমন। তারা বর্তমানে সংসার নিয়ে আলাদা থাকছেন। তারা দুই ভাই রিকশা চালিয়েই সংসার চালাতেন। বাবা-মাকে খাওয়ানোর মতো সামর্থ নেই তাদের। ছোট ছেলে সুমন অসুস্থ দৃষ্টিহীন বাবা মালেককে তার কাছে নিতে চাইলেও মালেক তার স্ত্রী সেতারাকে ছেড়ে শেষ বয়সে কোথাও যেতে চাচ্ছেন না। মালেক চোখে না দেখলেও সেতারা বাজারে শাক-শবজি বিক্রির সময় সেতারার হাত ধরে এসে দোকানের পাশেই চুপ করে বসে থাকেন। অদৃশ্য মায়ার বন্ধনে একে অন্যের পরিপূরক তারা। দু’জন দু’জনার কত যে আপন কেউ জানে না। ওই ঝুপড়ি ঘরে থেকে সেতারা প্রতিদিন বিকেলে গ্রামে গ্রামে হেঁটে হেঁটে অল্পদামে হরেক রকমের শাক-শবজি কিনে এনে সপ্তাহের সাত দিনই রাজাপুরের হাট ও বাজারে বিক্রি করেন। কীভাবে ওই টাকায় সংসার, অসুস্থ স্বামীর ওষুধের খরচ ও ঋণের টাকা পরিশোধ করেন সেই ব্যাপারেও বললেন এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি বলেন, আয় করা টাকায় নিজেদের খাবার, স্বামীর প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকার ওষুধ ও গ্রামীণ ব্যাংকের সপ্তাহে ১২ শ’ টাকার কিস্তি পরিশোধ করেন। আরো দুই বছর কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। তবে সরকারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পেলে বা বিনা সুদে টাকা পেলে একটি দোকান দিয়ে একটু ভালোভাবে জীবন-যাপন করতে পারতেন। অসুস্থ দৃষ্টিহীন আ: মালেক বলেন, ‘অনেক দৌড়-ঝাপ করে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করিয়েছি। তীব্র শীতে খুব কষ্টে ঝুপড়ি ঘরে থেকেছি, কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। পায়নি একটুকরা শীতের বস্ত্র। শুনছি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গৃহহীনদের ঘর দেয়া হচ্ছে। আমার সেতারাও স্থানীয় মেম্বর মনিরের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি অজ্ঞাত কারণে ঘর পাওয়ার জন্য আমাদের কোনো কাগজপত্র নেননি। পরে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পাওয়ার জন্য শুক্তগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হকের কাছে কাগজপত্র দিয়েছি। আমাদের একটি ঘরের খুবই প্রয়োজন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার চোখে সানি পড়েছে। আমি দু’চোখেই ঝাপসা দেখছি। ক্লিনিকের ডাক্তার বলেছেন, অপারেশন করাতে পারলে চোখে দেখতে পাবো। তবে অপারেশন করাতে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা লাগবে। অর্থের অভাবে অপারেশন করাতে পারছি না।’ বিত্তবান কোনো ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য করলে আ: মালেক ফিরে পেতে পারে তার চোখের দৃষ্টি। এ ব্যাপারে শুক্তগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, সেতারা-মালেক দম্পতি খুবই অসহায় অবস্থায় আছে। তাদের একটি ঘরের খুবই প্রয়োজন। ঘর পাওয়ার জন্য পিআইও অফিসে তাদেরকে একটি দরখাস্ত করতে বলা হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় মনির মেম্বার বলেন, ‘আমার কাছে মালেক বা সেতারা কখনোই আসেননি। কে কোথায় থাকে কীভাবে জানবো? আমার কাছে এলে আমি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো।’ এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোক্তার হোসেন বলেন, বর্তমানে যাদের জমি ও ঘর নেই, তাদেরকে জমিসহ ঘর দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যাদের জমি আছে ঘর নেই, তাদেরকে ঘর দেয়া হবে। মালেকের তো জমি আছে। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হলে যাচাই-বাছাই করে ঘর পাওয়ার উপযুক্ত হলে তাকে ঘর দেয়া হবে। মালেক-সেতারা দম্পতিকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে তার জন্য সেতারার বিকাশ নম্বর দেয়া হলো-০১৭৮০-২৩৩৯৭১।




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশালে মানবপাচার মামলার প্রধান আসামির স্ত্রী, বাবা ও শ্বশুরসহ তিন জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে মামলার অপর দুই আসামিকে স্থায়ী জামিনের আদেশ দেওয়া হয়। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন এই আদেশ দেন।

 

কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলো– প্রধান পলাতক আসামি জসিম উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুর রহমান জুথি, জসিমের বাবা হারুনর রশিদ এবং তার শ্বশুর কাজী শামসুর রহমান। তারা সবাই বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠী গ্রামের বাসিন্দা। জামিন পাওয়া দুজন হলেন– জসিমের ভাই এনামুল হক এবং শ্যালক ইমন কাজী।

 

 

ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি কাইউম খান কায়সার জানান, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত বরিশালের উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও মুলাদীর ১৬ ব্যক্তিকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে পাচার করে জসিম উদ্দিন, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান জুথি, ভাই এনামুল হক, বাবা হারুনর রশিদ, শ্বশুর কাজী শামসুর রহমান, শ্যালক ইমান কাজী ও ছোট ভাই পলাশ হাওলাদার।

 

 

প্রতিশ্রুত দেশে না পাঠিয়ে ভানুয়াতুতে নিয়ে তাদের অভুক্ত অবস্থায় একটি জায়গায় আটকে রাখে। সেখান থেকে ১২ জন পালিয়ে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। এরপর অবৈধ মানবপাচারের অন্যতম হোতা পলাশ হাওলদারসহ চার জনকে গ্রেফতার এবং পাচারের শিকার সবাইকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভানুয়াতুতে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় পলাশ এখনও সেখানকার জেলে রয়েছে।

 

 

পরে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন (আইওএম) সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ওই ১৬ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনে। এসে তারা টাকা ফেরত চাইলে মানবপাচারকারী চক্র উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুটি মামলা দিয়ে বিপাকে ফেলে।

 

 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ১৬ জনের পক্ষে উজিরপুরের মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে জসিম উদ্দিন ও পলাশ হাওলাদারসহ তাদের নিকটাত্মীয় সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

 

 

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল এই মামলার পলাতক সাত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। পরে তারা উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন নেয়। গত মঙ্গলবার আসামিদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বুধবার ধার্য তারিখে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তারা স্থায়ী জামিনের আবেদন করে। বিচারক দুজনের জামিন স্থায়ী করেন এবং অপর তিন জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD