রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন
লালমোহন প্রতিনিধি॥ ভোলার লালমোহনে বাল্যবিয়ের কারণ, প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এক অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করা হয়। গতকাল সকালে উপজেলা মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাল্যবিয়ে নিয়ে কোস্ট ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত গবেষণার তথ্যসমূহ উপস্থাপন করেন গবেষক ইকবাল উদ্দিন।
গবেষণায় মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতাকে বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কোস্ট ট্রাস্টের এপিসি প্রকল্পের প্রকল্প সম্মনয়কারী মো. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সভার সভাপতি ছিলেন লালমোহন উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ নুরনবী, প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুমা বেগম ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাকসুদুর রহমান মুরাদ।
এসময় প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয় সকলে উদ্দ্যেগ নিলে ৮০ শতাংশ বাল্য বিবাহ তিরোধ করা সম্ভব। বাল্যবিবাহ অনেক কমে গেছে। এখন যে সকল বাল্য বিবাহ হয় তা গোপনে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাপের কারণে অনেক সময় বাল্যবিবাহ সংঘঠিত হয়। তাই স্থানীয় নেতাকর্মীদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
গবেষণায় দেখা যায়, বাল্যবিয়ের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে প্রেম-ভালোবাসাকে দায়ী বলে মনে করেন ৬৩.৬ শতাংশ উত্তরদাতা। এরসাথে নিরাপত্তাজনিত কারণও জড়িত বলে জানান ৪১.৬ শতাংশ। এছাড়া ছেলে-মেয়েরা যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে তাই পারিবারিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া হয় বলে মত দেন ৪১ শতাংশ।
ভালো পাত্র পেলে বিয়ে দেয়া হয় বলে মনে করেন ৪৭.৮ শতাংশ। অসচেতনতার কথা বলেছেন ৪৪.৯ শতাংশ এবং দারিদ্র্যতা এর কারণ বলে উল্লেখ করেছেন ৫০.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩৭.৮ শতাংশ উত্তরদাতরই ধারণা নেই ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু আর ১৫-১৭ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হওয়াকে অনেকই শিশু বিয়ে বলে মানতে নারাজ। তাছাড়া শিশুবিয়ে দিলেও পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন প্রকাশ্যে সেটি স্বীকার করতে চান না।
বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব আছে বলেছেন ২১.৭ শতাংশ, নাই বলেছেন ৩৯.৫ শতাংশ এবং জানি না বলেছেন ৩৮.৭ শতাংশ উত্তরদাতা। দরিদ্র পরিবারগুলোতে বাল্যবিয়ের হার বেশি বলে মত দিয়েছেন ৭৬.৪ শতাংশ উত্তরদাতা। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেশি বলেছেন ২৯.১ শতাংশ এবং ধনী পরিবারে বেশি বলেছেন ২.৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর শিক্ষার ধাপ বিবেচনায় দেখা গেছে ৫ম শ্রেণি শেষ করার পর মেয়ে শিশুদের বিয়ে হয়ে যায় বলেছেন ১৯.১ শতাংশ উত্তরদাতা। ৮ম শ্রেণি শেষ করার পর হয় বলেছেন ৬৭.৩ শতাংশ। মাধ্যমিক শেষ করার পর হয় বলেছেন ১০ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর হয় বলেছেন ১.৩ শতাংশ। বিয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই যৌতুক দেয়/নেয় বলে মত দিয়েছেন ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরিদুল হক তালুকদার, মো. আবু ইউসুফ, মো. গোলাম মোস্তফা, ফরহাদ হোসেন মুরাদ ও মো. শাজাহান মিয়া। আরো ছিলেন নাজমা বেগম, আবদুস সাত্তার, জামাল উদ্দীন, ফাতেমা বেগম, আব্দুল মান্নান, পরিমল চন্দ্র শীল প্রমুখ।
Leave a Reply