সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন
রাজাপুর প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠির রাজাপুরে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মো: শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরের টি অ্যান্ড টি সড়কের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শহিদুল ফরিদপুর সদর উপজেলার গোয়ালেরটিলা গ্রামের মো: সাহেব আলীর ছেলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, নিহত শহিদুল টি অ্যান্ড টি সড়কের নির্মাণাধীন একটি ভবনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন। বর্তমানে ভবনটির পাঁচতলার নির্মাণ কাজ চলছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ভবনের চারতলা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানা যায়, তিনি চার তলার উপরে একটি পাঁচফুট উচ্চতার অস্থায়ী টেবিলের উপরে একটি চলমান ভাইব্রেটর মেশিন (স্যালো মেশিন) রেখে তার পাশে দাঁড়িয়ে ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন। চালু মেশিনের ঘুর্নায়মান চাকায় পরনে থাকা প্যান্ট পেচিয়ে যওয়ায় ছিটকে নিচে পড়ে যান তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের মতে, দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করছেন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে। প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে, আহত হচ্ছেন অনেকে। ২০১৪ সালের জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, কাজের সময় একজন শ্রমিকের মাথায় হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। ভবনের উপরে কাজ করার সময় শ্রমিকের নিরাপত্তায় বেল্ট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অথচ ওই নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিক রিপন মন্ডল বলেন, ভবনে নির্মাণ কাজে নিহত শহিদুলসহ তাদের জন্য কারোর কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ছাদের একেবারে প্রান্তে দাঁড়িয়ে কাজ করলেও তাদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। ওই ভবনের চারপাশে কোনো নিরাপত্তা বেস্টনিও করা হয়নি।
এক শ্রমিক বলেন, ‘কনট্রাকটর দড়ি আর বাঁশ দিয়া বলে মাচা বানাইয়া কাম কর। আমাগো নিরাপত্তায় আর কিছুই দেয় নাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, শ্রম আইন সব জায়গায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বলা থাকলেও ঠিকাদার ও উপ-ঠিকাদাররা কখনো অবহেলা, কখনো অতি লোভের কারণে তা এড়িয়ে যান। যেহেতু কোনো মহল্লায় নির্মাণ কাজ চলার সময় পরিদর্শন হয় না, তাই এ ব্যাপারে ভবন মালিকরাও সতর্ক হন না।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়গুলো ‘দায়সারাভাবে’ দেখেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই শ্রমিক নেতা।
রাজাপুর থানার ওসি মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে স্বজনদের খবর দেয়া হয়েছে। তারা আসলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply