বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া প্রতিনিধি।। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত চার দিন ধরে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে হঠাৎ করে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। চারদিন ধরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো মহিপুর-–আলীপুর কুয়াকাটা অবতরন কেন্দ্রের আড়তগুলেতে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের মাঝে। এর ফলে মৎস্য বন্দর মহিপুর –আলীপুর কুয়াকাটা আড়তগুলো ক্রেতা বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় কাটছে। এরপরই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাচ্ছে আড়তদারদের। ট্রলার থেকে ঝুড়িতে করে শ্রমিকেরা ইলিশ এনে আড়তে ফেলছেন।
কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, কেউ ট্রাকে তুলছেন। এ দিকে মাপজোখ চলে একদিকে। অন্যদিকে চলে দরদাম। পাইকারি ক্রেতারা দরদাম শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য কার্টনে ভরা শুরু করেন। ট্রাক ও অন্যান্য গণপরিবহনের ছাদে করে সাগরের এসব ইলিশ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। যেন কারো সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। এ যেন ইলিশ আর ক্রেতাÑবিক্রেতাদের মিলন মেলা।
সম্প্রতি চলতি বছরের সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। করোনার কারণে ওই সময়টা জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগরে নামলেও জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছিল না। তবে এক সপ্তাহ ধরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
নিচকাটা এফবি আকক্তার গাজী ট্রলারের সজিব মাঝি বলেন, ৫০০০০ হাজার টাকার রসত সামগ্রীক(বাজার) করে সাগরে নেমে তিনিও পাঁচ দিন পর গতকাল সন্ধ্যায় ৮০০শত ইলিশ নিয়ে মহীপুর মাছের আড়তে আসেন। প্রতি মণ ১৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। দাম পেয়েছেন দেড় লক্ষ টাকা।
মৎস্য বন্দর মহীপুর আড়তে কয়েক জন ট্রলার মালিকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এমনিতেই ধারদেনা ও মহাজনদের কাছ থেকে আগাম দাদন নিয়ে সাগরে নামাতে হয় ট্রলার।
এত দিন তেমন ইলিশ ধরা না পড়ায় তাঁরা দেনা পরিশোধ নিয়ে তিনি চিন্তায় ছিলেন। এই পূর্ণিমার পর গভীর সাগরে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা।
সাগর থেকে ফিরে আসা বেশ কয়েকটি ট্রলারের জেলে ইউসুফ, কামরুল, মালেক ,জসিম, নিজাম বলেন, গভীর সাগরে এখন প্রচুর ইলিশ। সাগরে ইলিশ মওসুম শুরু হওয়ার পর দেড় মাস সাগর মাছ শুন্য থাকলেও এখন প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। তারা আরো বলেন, এখনো সাগরে অনেক ট্রলার আছে, যাতে প্রচুর মাছ রয়েছে। করোনার প্রভাব ও সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার পরও তেমন মাছ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জেলেরা। তবে এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে এবং আকারেও বড়। তাই জেলেরা বেশ খুশি।
মহিপুর মৎস্য বন্দরের মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক জব্বার মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন পর সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই দামও একটু কমে গেছে।
আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আনসার মোল্লা বলেন, হঠাৎ করে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া, করোনার কারণে রপ্তানি না থাকায় ইলিশের দাম একটু কম। এখন যে ইলিশ ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত বছর দাম ছিল মণ প্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন আনসার মোল্লা। এ ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে মাছের সুরক্ষার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধ পাবে। জেলেরা উপকৃত হবেন।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ্ বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এই ভবিষ্যতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
Leave a Reply