শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত স্বামী ধরা পড়েনি। তার অব্যাহত হুমকি-ধামকি তো আছেই। স্বামীর বাড়িছাড়া হয়েও নিস্তার নেই। অন্যের বাড়িতে থেকে জীবন-জীবিকার লড়াই করবে তারও উপায় নেই।
দুই সন্তানসহ গৃহবধূ হোসনেয়ারার জীবনে বইছে এমনতর ঘোর অমাবস্যা। অজানা শঙ্কায় রাত কাটে বিনিদ্র। নেই নিরাপত্তা। সাজানো সংসার খড়-কুটার মতো উড়ছে। তাড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি পাষন্ড স্বামী মোস্তফা খন্দকার। পড়শি কিংবা গ্রামের অন্য কেউ আশ্রয় দিলে তাঁকে মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
পাষন্ড শ^শুর ফজলুল হক খন্দকার, শাশুড়ি হাজেরা বেগম প্রকাশ্যে এসব করছে। উপায় না পেয়ে কলাপাড়া থানায় জিডি করেছেন। স্বামীর সংসারের অধিকার হারিয়ে ২০১৬ সালে মামলা করেন অসহায় হোসনেয়ারা। আদালত স্বামী মোস্তফাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন।
যৌতুক নিরোধ আইনে এ দন্ড দেয় আদালত। কিন্তু পুলিশ মোস্তফাকে খুঁজে পায়না। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোট বালিয়াতলী গ্রামের মোস্তফা খন্দকারের সঙ্গে ঝালকাঠি জেলার নলছিটির তিমিরকাঠি গ্রামের মোশাররফ খন্দকারের মেয়ে হোসনেয়ারার বিয়ে হয় ২০০৪ সালের ২৬ জানুয়ারি। জোড়াতালি দিয়ে, অনেক বিষাদময় ঘটনার মধ্যে কেটেছে হোসনেয়ারার একটি যুগ। যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাতে মারধর নির্যাতন ছিল নিত্যঘটনা। হোসনেয়ারা জানায়, স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার। এইচএসসিতে পড়ছিলেন। এরই মধ্যে মা ফরিদা বেগম মারা যায়। তখন সে তিমিরকাঠির মহিলা মেম্বার ছিলেন।
এরপরই হোসনেয়ারার শিক্ষজীবনের যবনিকা ঘটে। বিয়ের পরে স্বামীর ব্যবসাসহ সংসারের যোগান দেয়ায় হেন কিছু নেই যা করেনি। হোসনেয়ারার দাবি, ব্যক্তিগত ধার-দেনা ছাড়াও স্বামীর সংসারে স্বচ্ছলতার জন্য বেসরকারী সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৬০ হাজার, উদ্দীপন থেকে ৪০ হাজার, আশা থেকে ৩০ হাজার ও ব্রাক থেকে ৪০ হাজার নিয়ে মোট তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা লোন করেছেন। এরপরও স্বামী-শ^শুর-শাশুড়ির মনের ছোঁয়া মেলেনি। বাড়ি থেকে তাড়ানোর দুই বছর পরে এখন স্বামী পলাতক থাকলেও লোনের টাকার জন্য তাকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। দুই সন্তানকে ভাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। জানান হোসনেয়ারা, কতদিন আগে মাছ কিংবা মাংস দিয়ে এক বেলা ভাত খেয়েছেন তা মনে নেই। খাল-বিলের কচুর লতি। হাইছা শাক দিয়ে কোনমতে এক মুঠো ভাত গিলে কাটছে দিনের পর দিন। ব্রাকের শিশু শিক্ষার একটি স্কুলে তিন হাজার টাকার বেতনের চাকরি করছেন। তা পর্যন্ত ঠিকমতো পারছেন না।
স্বস্তি সেখানেও নেই। একই এলাকা বালিয়াতলীতে স্কুলটি। কারও না কারও বাড়িতে থাকতে হয়। ফলে শ^শুর, লোকজন নিয়ে আশ্রয়দাতাদের হুমকি-ধামকি দেয়। মহিলা মেম্বার সকিনা বেগম হোসনেয়ারার অধিকার আদায়ে সহায়তা করায় তাকেও শাসানো হয় বলে জানান তিনি। মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অধিকার আদায়ের সমর্থনে ঘুরেছেন। হোসনেয়ারার চোখের ঝরা পানিতে অন্যের চোখও ঝাপসা হয়ে যায়। এখন কী করবে তাও বুঝতে পারছে না অসহায় এই নারী।
থানা পুলিশের রেকর্ড করা বক্তব্য দন্ডিত মোস্তফা পলাতক। যেন হতাশার রাজ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে এখন হোসনেয়ারা। দুই সন্তানের লেখাপড়াসহ নিজের ভবিষ্যত জীবন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিজেও জানেন না। জানেন না আদৌ পাষন্ড স্বামীর কাছ থেকে অধিকার কিছু আদায় করতে পারবেন। আর নাটের গুরু শ^শুর-শাশুড়ির চক্রান্ত থেকে নিজেকে বাচাতে পারবেন কিনা। কোনমতে এক মুঠো ভাতের যোগান দেয়ার মতো ব্রাক স্কুলের চাকরি করতে একটু থাকার জায়গা তাও কি হারাবেন ? এমনসব হাজারো প্রশ্নের ঘুরপাকে মাথা ঘুরে যায় অসহায় এ নারী হোসনেয়ারার।
Leave a Reply