বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) চিফ প্রসিকিউটর বরাবর নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পরে গণমাধ্যমকে সুমন নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সদ্য পদত্যাগ করা আলোচিত এই আইনজীবী বলেছেন, ‘চোর-বাটপার সব ধরা খায়, কিন্তু পদত্যাগ করে না। জুতা দিয়ে বাড়ি দিয়েও নাকি পদত্যাগ করানো যায় না!’
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন সুমন। যেখানে এ কথাগুলো তিনি বলেন।
পাঠকদের পড়ার সুবিধার্থে সুমনের আঞ্চলিক ভাষা পরিবর্তন করা হলো-
ভিডিওতে সুমন বলেছেন, ‘আমি ব্যারিস্টার সুমন গতকাল (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছি আপনারা জানেন। মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ১ লাখ টাকা বেতন পেতেন আপনি। আপনার সঙ্গে পুলিশ থাকত, এত বড় পোস্ট- আপনি কেন পদত্যাগ করলেন?’
সুমন আরও বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি- আপনারা বিশ্বাস করুন, আমার বাড়ি হচ্ছে চুনারুঘাট। আমি নাসিরউদ্দীন সিপাহশালার এলাকার লোক। আমার কলিজাটা অনেক বড়। আমি আপনাদের (উপস্থিত লোকজনের দিকে নির্দেশ করে) প্রতিনিধিত্ব করি। তাই আমি কোনোদিন স্বার্থপরতা করতে পারি না।’
তিনি বলেছিলেন, ‘শোনেন, জীবনে নেতা হওয়া লাগে না। নেতার কাজ হলো মানুষের মনে, মানুষের হৃদয়ে জায়গা নিতে হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বার-এমপি হতে হয় না। চেয়ারম্যান-মেম্বার-এমপি আছে, মানুষ সামনে দেখলে সালাম দেয়। কিন্তু দূরে গেলে বলে এ চোর! এ বাটপার! এ মানুষের ক্ষতি করে! আমি চুনারুঘাটের লোক, আপনাদের কথা দিচ্ছি আমার জীবদ্দশায় আপনাদের সম্মানের ভাগীদার করব।’
ফেসবুকে প্রকাশিত ভিডিওতে সুমন আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমি ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছি; আমার সুযোগ হয়েছে। আমি আগে সরকারের বেতন পেতাম, তাই নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কাজ করতে পারতাম না। এখন আমি মুক্ত পাখির মতো। আমাকে কেউ এ কাজগুলো থেকে ঠেকাতে পারবে না।’
ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডে সোনাগাজী থানার ওসির বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়েও মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল সরকারের টাকা নিয়ে কেন তুমি ওই ব্যাপারে কথা বলো? এখন তা বলার কেউ নেই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার কারণে যেন আপনারা অন্যের কাছে কটু কথা শুনতে পান। এমন যেন সময় না আসে, আপনাদের শুনতে হয় ব্যারিস্টার সুমন নষ্ট হয়ে গেছে, ব্যারিস্টার সুমন কাজটা ঠিক করেনি। তিনি মানুষের টাকা মেরে দেয়।’
সদ্য পদত্যাগী এ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আজকে একজন বলেছেন, জুতা দিয়ে বাড়ি দিয়েও নাকি পদত্যাগ করানো যায় না। দেখবেন চোর-বাটপার সব ধরা খায়, কিন্তু পদত্যাগ করে না। তাদের ভাষ্য, পদত্যাগ আমি করব না। জুতা দিয়ে বাড়ি দিলে দিক, আমি ছাড়ব না।’ তিনি আরও বলেন, আমি একটা উদাহরণ তৈরি করেছি। জুতা দিয়ে বাড়ি দেওয়া লাগবে না। যেখানে আমি মনে করব- আমি ছেড়ে দেব। দরকার হলে পৃথিবী ছেড়ে দেব, তাও আল্লাহ যেন আমাকে মানুষের বোঝা না বানায়।’
উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার সুমন আইন পেশার পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণ, ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, এলাকার বিভিন্ন দুর্নীতি-অসঙ্গতি তুলে ধরাসহ ফেসবুকে বিভিন্ন সময় জনসচেতনতামূলক ভিডিও ও ফেসবুক লাইভ করে আলোচনায় আসেন।
বেশিরভাগ সময় এসব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছে। এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখায় ব্যারিস্টার সুমনের ফেসবুক পেজে লাখ লাখ ফলোয়ারের পাশাপাশি তার রয়েছে হাজারো ভক্ত।
নিজের পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন মামলা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করেছি। ইদানীং বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছামূলক কাজে নিবিড়ভাবে জড়িত হয়ে যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে সময় দিতে পারছি না। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এমতাবস্থায় সরকারি কোষাগার থেকে বেতন নেওয়াকে আমি অনৈতিক বলে মনে করি। এ কারণে আমি বর্তমান পদ থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করছি।
Leave a Reply