রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদ (বাকুস) এর নেতৃত্বে আসতে মরিয়া হয়ে আছেন অছাত্ররা। তারা ছাত্রত্বের লেভাস লাগাতে কলেজে ভর্তির সুযোগ খুঁজছেন। কেউ বৈধ উপায়ে আবার কেউ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ভর্তি সুযোগ খুঁজেছে। এমনই একটি ঘটনা ক্যাম্পাস জুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেরিত তালিকায় নাম না থাকা সত্যেও কলেজ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইসলামী ইতিহাস বিভাগে ভর্তির চেষ্টা করেন আতিকুল্লাহ মুনিম মানে জেলা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি।
যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবী জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রেরিত তালিকার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। আবার অবৈধভাবে যদি কেউ ভর্তি হয়েও থাকে তবে এমনেতাই তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পরে ঐতিহ্যবাহী বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাই দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকে ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া কিছু ছাত্র নেতা বাকসু’র নেতৃত্বে আসতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।
বিশেষ করে ক্ষমতাসিন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিএম কলেজ শাখার কয়েকজন সাবেক নেতা যারা বর্তমানে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ন পদে আছেন তারাই এই তৎপরতা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে দু’একজন ছাত্রত্বের লেভাস লাগাতে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। কেউ কেউ অবৈধভাবে ভর্তির সুযোগ খুঁজছেন।
যার মধ্যে একজন ইসলামী ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া কলেজের অস্থায়ী অবৈধ কর্মপরিষদের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ও শিক্ষক লাঞ্চিতকারী দলের অন্যতম সদস্য নূর আলম আহাদ সাইদী। যার ইতিপূর্বে ছাত্রত্ব না থাকলে বাকসু’র ভিপি হওয়ার আশায় পুনরায় মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পূর্বে আমার ছাত্রত্ব ছিলো। অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ভর্তির জন্য যে তালিকা প্রেরন করেছেন তার মধ্যে আমার নাও রয়েছে। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিমের নাম তালিকায় না থাকা সত্যেও সে অবৈধভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ খুঁজছে।
তিনি বলেন, ‘বিএম কলেজে মাস্টার্সে ইসলামী ইতিহাস বিভাগে ভর্তির জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রথম দফায় ১৮০ জনের একটি তালিকা আসে। যেখানে আমার কিংবা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির মুনিমের নাম ছিলো না। তবে দ্বিতীয় বার ৯ জনের যে তালিকা এসেছে তার মধ্যে আমার নাম থাকলেও মুনিমের নাম নেই।
সাঈদী অভিযোগ করেন, ‘বুধবার সকাল ৯টা থেকে আমি ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করলেও কলেজ অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে ইসলামী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকরা আমার ভর্তি নিয়ে তালবাহানা করে। পরে শিক্ষকরা অধ্যক্ষর রুমে মিটিং করে দুপুর ১টার দিকে আমার ভর্তি নেয়।
তিনি বলেন, ‘ভর্তির জন্য আমি ডিপার্টমেন্টের প্রধানের রুমে গেলে সেখানে দেখতে পাই ৯ জনের মধ্যে পর্যন্ত ৭ জন ভর্তি হয়েছে। সেই হিসেবে আমার সিরিয়াল বা রোল আসার কথা ১৮৭। কিন্তু ১৮৭ নম্বর ঘর ফাঁকা রেখে আমাকে ১৮৮ নম্বরে রাখা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিমকে ভর্তির সুযোগ দিতে কয়েকজন শিক্ষক মিলে ১৮৭ নম্বর ঘরটি ফাঁকা রাখে। সেখানে দাড়িয়ে আমি এর প্রতিবাদও করেছি। তাছাড়া বিভাগীয় প্রধানের টেবিলে আতিকুল্লাহ মুনিম সহ তার ছবি এবং কাগজপত্রও দেখতে পেয়েছেন বলে দাবী সাঈদীর।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএম কলেজের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় যে তালিকা এসেছে সেটাতে ৯ জন নয়, ১২-১৩ জনের নাম এসেছে। ছাত্রলীগ নেতা মুনিমকে ভর্তির জন্য ১৮৭ নম্বর খালি রাখার যে অভিযোগ উঠেছে সেটা সঠিক নয়। কারন ওই ঘরটি ফাঁকা রাখা হয়েছে একটি মেয়ের জন্য। ওই প্রশাসনিক বিভাগ থেকে ভর্তি হয়েছে। যে কারনে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের ওই ঘরটি ফাঁকা রাখতে বলেন। তাই ওটা খালি রাখা হয়েছে। তবে ওই ছাত্রীর নাম পরিচয় জানাতে পারেননি অধ্যাপক শাহ আলম।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুর রহমান সিকদার জানান, ‘জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে যেভাবে তালিকা আসবে আমাদের সেভাবেই ভর্তি নিতে হবে। এখানে তালিকার বাইরে গিয়ে স্থানীয়ভাবে কাউকে ভর্তি করার সযোগ নেই। কেউ অবৈধভাবে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে তা এমনেতেই বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ভর্তি সংক্রান্ত তালিকা জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অনলাইনে রেকর্ড রয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘বিএম কলেজে ছাত্র সংসদ নেই। ছাত্রদের মধ্যে এখন যে ঘটনা ঘটছে তা ছাত্র সংসদ না থাকার কারনেই। সংসদ নির্বাচন হলে এটা আর থাকবে না। শিক্ষার পরিবেশও ফিরে আসবে। তাই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। আমি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ বিষয়ে বলেছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে আমাদের এখন পর্যন্ত কোন দিক নির্দেশনা দেননি।
Leave a Reply