গৌরনদীত উপজেলা সহ ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়ে নোটারী, ঠেকানো যাচ্ছেনা বাল্যবিয়ে! Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




গৌরনদীত উপজেলা সহ ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়ে নোটারী, ঠেকানো যাচ্ছেনা বাল্যবিয়ে!

গৌরনদীত উপজেলা সহ ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়ে নোটারী, ঠেকানো যাচ্ছেনা বাল্যবিয়ে!




মোঃ মাসুদ সরদার গৌরনদী প্রতিনিধি ॥ বাল্যবিয়ে মুক্ত বরিশাল জেলা ঘোষণা করা হলেও জেলার দশটি উপজেলায় বাল্যবিয়ের হিড়িক পরেছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করেও ঠেকানো যাচ্ছেনা বাল্যবিয়ে। সরকারের নিয়ম উপেক্ষা করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকরা জালজালিয়াতির মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দাখিল করে আইনজীবীদের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করছেন।

ফলে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করার পরেও বরিশালে ঠেকানো যাচ্ছেনা বাল্যবিয়ে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে কোন রকমের নোটারী পাবলিক গ্রহণযোগ্য না থাকলেও প্রতিটি বাল্যবিয়ের ঘটনায় দেখা গেছে নোটারীর মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সূত্রমতে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকারের কঠোর নির্দেশনার পরেও নোটারীর মাধ্যমে বরিশালে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে শুধুমাত্র বিয়ের ক্ষেত্রে নোটারী পাবলিকের কার্যক্রম বন্ধের দাবি করেছেন সচেতন মহল। এছাড়াও বাল্যবিয়ের অপরাধে বর-কনের অভিভাবক, রেজিস্টারদের বিরুদ্ধে যেমন দন্ডবিধির আইন রয়েছে, তেমনি নাবালিকা ছেলে-মেয়েদের বয়স বাড়ানো ভুয়া নোটারীর সাথে যারা জড়িত তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি করা হয়েছে।

 

বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী এনজিও টার্গেট পিপলস্ ফর অর্গানাইজেশন (টিপিডিও)’র এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভুয়া নোটারীর মাধ্যমে গত দুইদিনে জেলার গৌরনদী উপজেলায় চারটি বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়। যদিও প্রতিটি বিয়ের অনুষ্ঠান পন্ড করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এরমধ্যে ১৪ মার্চ দুপুরে ইউএনও খালেদা নাছরিনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে গৌরনদী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেনির ছাত্রী পৌর সদরের চরগাধাতলী মহল্লার বাসিন্দা আবুল কালামের কন্যা সাদিয়া আফরিন (১৬)। এছাড়া ১৩ মার্চ রাতে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে নলচিড়া ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামের মনরঞ্জন ঢালীর কন্যা প্রতিরানী ঢালী পুজা (১৫) ও ১২ মার্চ দুপুরে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামের অলিল খন্দকারের কিশোরী কন্যা সুমি আক্তার (১৬) বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এছাড়া ১৪ মার্চ দুপুরে মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্টি গ্রামের শহিদ বেপারীর কন্যা মরিয়ম আক্তার (১৬) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সূত্রমতে, প্রতিটি বিয়ের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকরা জালজালিয়াতির মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দাখিল করে আইনজীবীদের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে আগেভাগেই বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করেছেন।

 

সাংবাদিক মোঃআলী বাবু শিকদার এর সংস্থা টিপিডিও’র প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলায়। বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ একমাত্র ভুয়া নোটারীর মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধির কারণে এখন ভেস্তে যাচ্ছে। ফলে এখনও ২৯ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সের আগে। আর দুই ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১৪ বছরের আগেই। আর এজন্য পরিবারের অসচেতনতা, দারিদ্রতা, লোভ ও প্রেমঘটিত বিষয় অন্যতম কারণ।

 

এ ব্যাপারে জেলার একমাত্র ডিজিটাল ইউনিয়নখ্যাত মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স বাড়িয়ে জন্মনিবন্ধন না পেয়ে নাবালিকা মেয়েদের অভিভাবকরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নোটারীর মাধ্যমে মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে প্রকাশ্যেই ঢাকঢোল পিটিয়ে বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন। উল্টো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া জন্মনিবন্ধন না পেয়ে নোটারীর মাধ্যমে মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে এনে তাদের ওপর চ্যালেঞ্চ ছুঁড়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাল্যবিয়ে ঠেকাতে হলে শুধুমাত্র বিয়ের ক্ষেত্রে নোটারী পাবলিকের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এরপরেও যদি নোটারীর মাধ্যমে বয়স বাড়ানো হয় তাহলে বাল্যবিয়ের অপরাধে বর-কনের অভিভাবক, রেজিস্টারদের বিরুদ্ধে যেমন দন্ডবিধির আইন রয়েছে, তেমনি নাবালিকা ছেলে-মেয়েদের বয়স বাড়ানো ভুয়া নোটারী ও বিয়ের সাথে যারা জড়িত তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। তবেই শতভাগ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

 

জেলার নারী নেত্রী এ্যাডভোকেট সাহিদা আক্তারের বলেন, এখনই বাল্যবিয়ে ঠেকানো না গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাল্যবিয়ে মুক্ত বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে প্রায়ই বাল্যবিয়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জনপ্রতিনিদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে দেশের যেকোনো স্থান থেকে হেল্পলাইন (টোল ফ্রি) ‘১০৯৮’ নম্বরে কল দিলেই সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাচ্ছে।

 

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD