হাত-পা বেঁধে এক লিটার কেরোসিন নুসরাতের গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢালা হয় Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




হাত-পা বেঁধে এক লিটার কেরোসিন নুসরাতের গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢালা হয়

হাত-পা বেঁধে এক লিটার কেরোসিন নুসরাতের গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢালা হয়




অনলাইন ডেস্ক: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।তারা বলেছে, জেলখানা থেকে অধ্যক্ষের হুকুম পেয়ে রাফিকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে, এমনটা বলার পর ছাদে ছুটে গিয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি।সেখানে পাঁচজন মিলে তাঁকে ছাদে চিত করে শুইয়ে ফেলেন। তাঁর পরনের ওড়নাটি দুভাগ করে বেঁধে ফেলেন হাত-পা। এরপর এক লিটার কেরোসিন নুসরাতের গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢালা হয়। ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পায়ে। আগুন যখন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এই পাঁচজন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়েছেন। রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিট থেকে রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা দুই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয় ফেনীর বিচার বিভাগীয় জ্যেষ্ঠ হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে। ৫৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তাঁরা ওই দিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মূলত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং শামীমের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাফিকে হত্যা করা হয় বলে আসামিদের জবানিতে বেরিয়ে এসেছে।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম (২০) পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার এই বর্ণনা দিয়েছেন।

শাহাদাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ওই মাদ্রাসার এবারের আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। ৬ এপ্রিল আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে তাঁকে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

নুসরাত খুনিদের লক্ষ্যে হন গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনার পর থেকেই। ওই ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এর পর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল পরিবারটিকে। তবে প্রতিবাদে অনড় ছিলেন নুসরাত। আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আগ মুহূর্তেও তাঁকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু নুসরাত তা মানেননি। পরবর্তী সময়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায়ও তিনি প্রতিবাদ করে গেছেন।

এই দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সঙ্গে দেখা করতে ৩ এপ্রিল যাঁরা কারাগারে গিয়েছিলেন, অধ্যক্ষ তাঁদের সবার কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এরপর তিনি আলাদাভাবে মাদ্রাসাছাত্র ও ‘সিরাজ উদদৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন (২০), যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম (২০) এবং আরেক ছাত্রের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। তিনি তাঁদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নুসরাতকে চাপ দিতে বলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি শাহাদাতের সঙ্গে একা কথা বলেন। তখন তিনি চাপে কাজ না হলে প্রয়োজনে নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানিয়েছেন, কারাগার থেকে ফেরার পর ওই দিন রাত সাড়ে ৯টায় মাদ্রাসার পশ্চিম হোস্টেলে তিনি, নুর উদ্দিন, মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের প্রধান আবদুল কাদেরসহ পাঁচজন সভা করেন। সেখানে কে বোরকা আনবে, কে কেরোসিন আনবে, কে কোথায় থাকবে, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় অধ্যক্ষের জেঠাসের (স্ত্রীর বড় বোন) মেয়ে উম্মে সুলতানা পপিকে দিয়ে নুসরাতের বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে এমনটা বলে তাঁকে ডেকে পাঠানো হবে।

মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী উম্মে সুলতানা পপিই নুসরাতকে ডেকে নিয়ে আসেন। কিন্তু নুসরাতের সামনে তাঁরা তাঁকে কৌশল করে ‘শম্পা’ নামে ডাকেন। এ কারণেই নুসরাত তাঁর জবানবন্দিতে শম্পার কথা বলে গেছেন। উম্মে সুলতানাই যে ‘শম্পা’, সেটি জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, আন্দোলন ও বোরকা কেনার জন্য সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম তাদের ১০ হাজার টাকা এবং এক শিক্ষক ৫ হাজার টাকা দেন। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা তিনি নূর উদ্দিনকে দেন। আর তিনটি বোরকা কেনার জন্য তাঁর চাচাতো বোনের পালিত মেয়ে ও ওই মাদ্রাসার ছাত্রীকে দেন দুই হাজার টাকা।

শাহাদাত হোসেন ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ঘটনার দিন সকাল আটটার দিকে তিনি সোনাগাজী বাজারে আসেন। তখন তাঁর চাচাতো বোনের পালিত মেয়ে তাঁকে একটি পুরোনো ও দুটি নতুন বোরকা দিয়ে যান। তিনি তাঁকে উম্মে সুলতানা পপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সঠিকভাবে কাজ করতে বলে বাজারে কেরোসিন কিনতে যান। এক লিটার কেরোসিন কিনে তিনি ‘ডাবল পলিথিনে’ করে নিয়ে আসেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ও মাদ্রাসাছাত্র জোবায়ের আহম্মেদ (২০) ও জাবেদ হোসেন (১৯) সাইক্লোন শেল্টারের (মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবন) নিচতলার শ্রেণিকক্ষে বসেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনের প্রত্যেকেই বোরকা এবং নেকাব ছাড়াও হাত ও পায়ে মোজা লাগিয়ে নিয়েছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আগুন লাগানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেছেন, সকাল পৌনে নয়টার দিকে নুসরাতকে ডাকতে যান উম্মে সুলতানা। তখন তাঁরা নিচের শ্রেণিকক্ষ থেকে তৃতীয় তলার একটি কক্ষে এসে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পর উম্মে সুলতানা ও নুসরাত ছাদে ওঠেন। তাঁদের পিছে পিছে ওঠেন তাঁর (শাহাদাতের) চাচাতো বোনের পালিত মেয়ে। এরপর তৃতীয় তলা থেকে তাঁরা তিনজন ছাদে যান।

ছাদে ওঠার পর উম্মে সুলতানা পপি প্রথমে নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে বলেন। নুসরাত তখন নিশাতকে ছাদে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর শাহাদাতের চাচাতো বোনের পালিত মেয়েও নুসরাতকে একই কথা বলেন। নুসরাত তখন জবাবে বলেছিলেন, ‘মামলা উঠাব না। আমার গায়ে কেন হাত দিল। ওস্তাদ তো ওস্তাদ। আমি এর শেষ দেখেই ছাড়ব।’

জিজ্ঞাসাবাদে শাহাদাত বলেছেন, নুসরাতের এই জবাব শুনে তিনি নিজে পেছন থেকে এক হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরেন ও অন্য হাত দিয়ে হাত ধরেন। উম্মে সুলাতানা পপি তখন নুসরাতের পা ধরেন। আর শাহাদাতের চাচাতো বোনের পালিত মেয়ে নুসরাতের শরীর চেপে ধরেন। তিনজন মিলে নুসরাতকে তাঁরা ছাদের মেঝেতে ফেলে দেন। এই সময়টাতে উম্মে সুলতানাকে তাঁরা কৌশলে শম্পা বলে ডাক দেন।

শাহাদাত বলেছেন, নুসরাতকে মেঝেতে শুইয়ে ফেলার পর জোবায়ের নুসরাতের ওড়না দুই টুকরো করে তাঁর হাত ও পা বেঁধে ফেলেন। জাবেদ তখন নুসরাতের সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেন। এরপর শাহাদাতের চোখের ইশারায় জোবায়ের তার পকেট থেকে দেশলাই বের করে কাঠি জ্বালিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর পাঁচজনই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন। নামতে নামতেই তিনজন ছাত্র তাঁদের বোরকা খুলে শরীর কাপড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেন। ছাত্রী দুজন মাদ্রাসায়ই তাঁদের পরীক্ষার কক্ষে চলে যান। আর বাকি তিনজন নিজেদের মতো করে পালিয়ে যান।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিঁড়ি দিয়ে ওই পাঁচজন যখন নামছিলেন তখন নুসরাতের আগুন, আগুন, বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার তারা শুনতে পান। পা থেকে আগুন ধরানোয় প্রথমে নুসরাতের পায়ের বাঁধন খোলে। এরপর আগুন যখন ওপরে উঠে তার হাতের বাঁধন খুলে তখনই তিনি উঠে দৌড়ে নিচে নেমে আসেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নুসরাতের মুখ শাহাদাত চেপে ধরায় সেখানে আর কেরোসিন ঢালা হয়নি। তাই পুরো শরীর পুড়লেও মুখে আগুন লাগেনি।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে (৫৫) ঘটনার আগেই নুসরাতের শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনারও এজাহারভুক্ত আসামি। অধ্যক্ষ বাদে মামলার এজাহারভুক্ত গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন, সিরাজ উদদৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও মাদ্রাসাছাত্র নুর উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক আফছার উদ্দিন, মাদ্রাসাছাত্র জোবায়ের আহম্মেদ, জাবেদ হোসেন এবং উম্মে সুলতানা পপি।

উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত আক্তার রাফিকে যৌন হয়রানি করেছিল ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাত থানায় অভিযোগ করলে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে না নেওয়ায় নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় জীবনের সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান তিনি। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD