রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০২ অপরাহ্ন
বিশ্বব্যাপী মরণঘাতী এইডস ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফলতা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। এই সাফল্য এইডসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেন সুখবর এনে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এইচআইভি-আক্রান্ত এক রোগীর দেহ এইডস ভাইরাসমুক্ত করা গেছে।
ব্রিটেনের নাগরিক ওই রোগীর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে এইডস থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেয়েছেন। এইচআইভি প্রতিরোধী বোন ম্যারো স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের প্রায় তিন বছরের মাথায় তার শরীর থেকে এইচআইভির জীবাণু সম্পূর্ণরূপে দূর করা গেছে।
ঐ রোগীর নাম দেয়া হয়েছে, ‘লন্ডন পেশেন্ট’। নতুন করে এইচআইভি থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়ার পর চিকিৎসাবিজ্ঞানে উম্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, লন্ডনবাসী ওই রোগী প্রথমে ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে বিগত ১৮ মাস ধরে এইচআইভিতে উপশম করতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তিনি কোন ওষুধ নিচ্ছেন না।
তবে ওই রোগী এইচআইভি মুক্ত হয়েছেন এমনটা এখনো বলা যাচ্ছে না মন্তব্য করে গবেষকরা বলছেন, এই পদ্ধতি এইচআইভি আক্রান্ত সুস্থ মানুষদের জন্য বাস্তবসম্মত নয় তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সম্ভবত ভবিষ্যতে এইচআইভির প্রতিকার পাওয়া যাবে।
লন্ডনবাসী ওই পুরুষ রোগীর নাম প্রকাশ না করে বিবিসি জানায়, ২০০৩ সালে তার শরীরে এইচআইভি ভাইরাস ও ২০১২ সালে হজকিন লিম্ফোমা ধরা পড়ে।
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, এ ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি সব এইডস রোগীর জন্য সুবিধাজনক হবে না। এটা খুবই ব্যয়বহুল, জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই পদক্ষেপ আশার আলো জাগিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
অস্ট্রেলিয়ার ডোহারটি ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক এইডস সোসাইটির সহসভাপতি শ্যারন লেউইনের মতে, লন্ডনের ঘটনা এইডসবিষয়ক গবেষণায় নতুন পথের সন্ধান দিচ্ছে। তিনি বলেন, এইচআইভির চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এ উদ্যোগ একদিন এই ভাইরাস নির্মূলে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
বিশ্বে এখন ৩ কোটি ৭০ লাখ হিউম্যান ইমিউনো ডিফিসিয়েন্সি ভাইরাসে (এইচআইভি) আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যে এইচআইভি-আক্রান্ত একজন রোগীকে এইডস ভাইরাসমুক্ত করতে পারার খবর। এ নিয়ে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এ সাফল্য পেলেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে টিমোথি ব্রাউন নামক এক আমেরিকান ব্যক্তি এইচআইভি-তে আক্রান্ত হন এবং তিনি চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। তিনিই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যিনি এইচআইভি থেকে নিষ্কৃতি পান এবং এখনও পর্যন্ত তিনি রোগমুক্ত আছেন। তবে এরপর দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে একই পদ্ধতি চিকিৎসা দিয়ে ভাইরাস মুক্ত করা গেছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এইচআইভি-তে আক্রান্ত। ১৯৮০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সাড়ে ৩ কোটি মানুষ মারা গেছেন এই রোগে। তবে কয়েক বছর আগে উদ্ভাবিত জটিল ভাইরাস দিয়ে তৈরি ওষুধ দ্বারা এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব হচ্ছে।
Leave a Reply