বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও লোকমুখে ছড়িয়ে পড়া গুজবে একটি ভীতিময় রাত পার করেছেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার মানুষ। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করেই উপজেলার প্রায় সব এলাকার মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসতে থকে আজানের ধ্বনি। এরই মধ্যে শুরু হয় ‘করোনাবিরোধী’ মিছিল। কিছুক্ষণ পরে কালোজিরা, আদা, লবঙ্গ খাওয়ার হিড়িক পড়ে বাড়িতে বাড়িতে।
একাধিক স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১০টায় হঠাৎ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। কিছুক্ষণ পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয় বাড়ি বাড়ি আজান দিতে হবে ও দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে। আতঙ্ক ও ভয়ে মানুষ আজান ও নামাজের প্রস্তুতি শেষ করার পর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় করোনাবিরোধী মিছিল।
‘করোনা থেকে সাবধান’, ‘আল্লাহ আকবার’ শ্লোগানে রাতের আঁধারে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামগুলো। জনসমাগমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই মিছিল নিয়ে শত শত মানুষ মানুষ নেমে পড়ে রাস্তায়। স্থানীয়রা জানান, এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ‘করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে রাত ১২ টার আগে কালোজিরা, আদা, লবঙ্গ খেতে হবে। এসব গুজব ও অস্থিতিশীলতায় উপজেলার অনেক মানুষই কাটিয়েছেন নির্ঘুম রাত।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদশীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টায় হঠাৎ করে বেলাব, আমলাব, বাজনাব, নারায়নপুর, সল্লাবাদ, চরউজিলাব, পাটুলী ইউনিয়নের প্রায় সব মসজিদ থেকে একের পর এক আজান দেওয়া হয়। এ সময় কিছু কিছু মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় বাড়িতে বাড়িতে আজান, নফল নামাজ, কোরআন তেলওয়াত ও তওবা করার জন্য। বৃহস্পতিবার রাতে কেয়ামত হয়ে যাবে- এমন বিশ্বাসে এ সময় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর উপজেলার বারৈচা, দেওয়ানেরচর, খামারচর এলাকায় করোনাবিরোধী মিছিল বের করে কিছু মানুষ। ‘করোনাভাইরাস নিপাত যাক’, ‘আল্লাহু আকবার’- এসব শ্লোগানে দিতে থাকেন তারা। পরে পুলিশ গিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আমলাব বাজারের মুদী ব্যবসায়ী মো. জাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় জানতে পারি খুলনা এলাকায় এক শিশু জন্ম নিয়ে বলেছে, কালোজিরা, লবঙ্গ ও আদা খেলে করোনা হবে না। কথাটি বলেই শিশুটি আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে কালোজিরা, লবঙ্গ, আদা খেয়েছি।’
ধুকুন্দি জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা জুনাইদ হোসেন ফারুকী বলেন, ‘দেশে যখন মহামারির গজব আসে তখন আজান দিলে আল্লাহপাক এগুলো থেকে বান্দাদের রক্ষা করেন। কিন্তু মিছিল কারা করেছে, কেন করেছে- এটা আমি জানি না।’
উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজান দেওয়ার ব্যাপারটি ধর্মীয়। তবে মিছিলসহ সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কালোজিরা, আদা, লবঙ্গ খেলে করোনা হবে না- এ কথার চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোনো ভিত্তি নেই।’ বেলাব থানার ওসি মো. ফখরুউদ্দীন ভূইয়া বলেন, ‘রায়পুরা থেকে কিছু লোক মিছিল নিয়ে বারৈচা এলাকায় আসে। পরে আমরা খবর পেয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। আসলে গতকাল রাতে যা হয়েছে সব গুজব এবং হুজুগেই হয়েছে।’
Leave a Reply