শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন
রাজাপুর প্রতিনিধি ॥
ঝালকাঠির রাজাপুরের বিভিন্ন খালে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে মাছের সাথে সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণী মারা যেয়ে একদিকে যেমন পরিবেশের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব অন্যদিকে বিষ প্রয়োগে শিকার করা মাছ খেয়ে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না।
এতে পরিবেশ ও মৎস্য সম্পদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কম পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের আশায় তাঁরা বিভিন্ন কীটনাশক সঙ্গে নিয়ে যান। জোয়ার আসার কিছু আগে ওই কীটনাশক চিঁড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খালের পানিতে ছিটিয়ে দেয়। এতে একপর্যায়ে ওই এলাকায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে ওঠে। পরে ওই মাছ বিভিন্ন আহরণ করে বাজারে সরবরাহ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঝালকাঠির রাজাপুরের কেওতা, শুক্তাগড়, কাঠিপাড়া, বড়ইয়া, গালুয়া, মঠবাড়িয়া, সাতুরিয়া, নৈকাঠি, বারবাকপুর, ফুলহার, কৈবর্তখালী, সদর উপজেলার কির্ত্তিপাশা, বেশাইনখান, শেখেরহাট, নথুল¬াবাদ, কেওড়া, বাসন্ডা, নবগ্রাম, বিনয়কাঠি, আশিয়ার, পোনাবালিয়া, গাভারামচন্দ্রপুর, গাবখান, নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি, মোল¬ারহাট, কুশঙ্গল, রানাপাশা, নাচনমহল, সিদ্ধকাঠি, দপদপিয়া, সুবিদপুর, কাঠালিয়ার আমুয়া, কৈখালী, শৌলজালিয়া, চেচরীরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার খালে বিষাক্ত রোটেনন (পাউডার) অথবা সাইবারমেথিং (লিকুইড) প্রয়োগ করে মাছ নিধন করা হয়।
মাসখানেক ধরে জেলা জুড়েই এভাবে মৎস্য শিকার করা হচ্ছে। জানাগেছে, জোয়ারের সময় খালে যখন পানিতে থৈ থৈ করে তখন খালের পাশের ঝোপে মাছ লুকিয়ে থাকে। ঘন ফাঁসের জাল এবং চরগড়া দিয়ে ঝোপ আটকিয়ে দেয়া হয়। এরপর চক্রটি বিষ প্রয়োগ করে। বিষ প্রয়োগের ফলে পানি কমে যাবার সাথে সাথেই মাছ মরে ভেসে উঠতে শুরু করে। চক্রটি জাল ফেলে সেই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করছে। শুধু মাছই মারা যাচ্ছে না, বিষাক্ত কেমিকেল প্রয়োগের ফলে সব ধরনের জলজ প্রাণিই মারা যাচ্ছে। এতে একদিকে বিলুপ্তির মূখে পড়ছে দেশের মৎস্য সম্পদ অন্যদিকে হুমকির মুখে বিরূপ প্রভাবে রয়েছে জীব বৈচিত্র। কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পানির মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পোনা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী নির্বিচারে মারা পড়ছে। এতে মাছের প্রজনন-প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বিষ মেশানো পানি পান করে গরু, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণী বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রাšত্ম হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, অধিক মুনাফার আশায় জেলে নামধারী একটি চক্র দিনের পর দিন এই অমার্জনীয় অপরাধ করে যাচ্ছে। বন্য প্রাণী ও পরিবেশের জন্য এটা চরম হুমকি। বন বিভাগের উচিত আইনের সঠিক প্রয়োগ, সার্বক্ষণিক মনিটরিং এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ ধরনের অপতৎপরতা রোধ করা। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন হাজরা জানান, বিষ দিয়ে শিকার করা মাছ মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিষক্রিয়ার ফলে মানবদেহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জেলা মত্স্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের ঘটনা ঘটে।
Leave a Reply