রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ এক সময় ইলিশ মাছধরা ছিল যাদের পেশা, এবার তারাই জোরেশোরে মাঠে নেমেছে সেসব মাছের সুরক্ষায়। অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশ রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তাকারী হিসাবে দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশের ইলিশের প্রাচুর্যতা আছে এমন ছয় জেলার ১৫ উপজেলার নির্বাচিত ৩৩০ জন জেলেকে নিয়ে গঠিত হয়েছে কমিউনিটি ফিশগার্ড।
বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে জাটকা সংরক্ষণের জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের পাঁচ জেলার পাঁচ ইলিশ অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় বরিশাল জেলার হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মেঘনা-কালাবদর-গজারিয়া নদী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ভোলা জেলার মেঘনা নদী, তেঁতুলিয়া নদী ও শরীয়তপুর জেলার পদ্মা নদীর ইলিশ অভয়াশ্রমসংশ্লিষ্ট নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছধরা বন্ধ থাকার ঘোষণা বলবৎ আছে।
এ সময়ে ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তরের সহায়তাকারী হিসাবে কমিউনিটি ফিশগার্ডদের যুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন সংস্থার মহাপরিচালক।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীর অভয়াশ্রমে মাছধরা নিষিদ্ধকালীন নভেম্বর-জানুয়ারি। ইলিশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল থেকে ইলিশ রক্ষায় কাজ করা এসব কমিউনিটি ফিশগার্ডের সম্মানী ভাতা প্রদানের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, উপকূলবর্তী ইলিশসমৃদ্ধ জেলা ভোলা, বরিশাল পটুয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুরের ১৫ উপজেলার জেলেদের বাছাই করে এ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এতে ৩৩০ জন ইলিশ ধরা জেলেকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গার্ডের সদস্যরা নিষেধাজ্ঞাকালে নির্ধারিত এলাকায় পাহারা দেওয়া, মৎস্য বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে সহায়তাসহ তথ্য দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন।
ইউএসএ আইডির অর্থায়নে পরিচালিত মৎস্য অধিদপ্তর ও ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ প্রকল্পের আওতায় গঠিত কমিউনিটি ফিশগার্ড সদস্যরা ইলিশ ও মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ২০১৬ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
কমিউনিটি ফিশগার্ড সদস্যদের সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, ইলিশের অভয়াশ্রম, ইলিশ সংরক্ষণ নীতিমালা ও মৎস্য আইন, ইলিশ অভয়াশ্রম পাহারা কার্যক্রমের গুরুত্ব, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং পাহারা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, মৎস্য বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা এবং তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তাদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার জন্য পরিচয়পত্র, ট্রাউজার, গামছা, ছাতা, অ্যাপ্রোন, জুতা, টর্চলাইট প্রদান করা হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে গত বছর ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এ সময়ে সারা দেশের সাগর, মোহনা ও সব নদ-নদীতে ইলিশ ও অন্যান্য মাছধরা বন্ধ, বিপণন, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুদও নিষিদ্ধ ছিল।
এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছিল কমিউনিটি ফিশগার্ডরা। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রমেও কমিউনিটি ফিশগার্ডদের যুক্ত করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষা, সর্বোপরি মৎস্যসম্পদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
Leave a Reply