শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের লক্ষ্যে বরিশালে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। কোরবানির ঈদের পর থেকেই সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) কর্মকর্তারা।
বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর আদলে বরিশাল, খুলনা ও যশোরকে বিদ্যুতের একটি মডেল শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যে প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড প্রজেক্ট ইন ওয়েস্ট জোন এরিয়া’।
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ প্রকল্পের জন্য টাটা পাওয়ার দিল্লি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে সার্ভের কাজ শুরু করেছে। পরবর্তীতে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ করা হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে প্রকল্পটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কী না, মাটির কনডিশন, প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে তুলে ধরে ওজোপাডিকোর কাছে প্রতিবেদন সাবমিট করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।
ওজোপাডিকো বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং যে কোনো কাজ করতে হলে, প্রাথমিকভাবে তিনটি কাজ করতে হয়। প্রথমে সার্ভে ও ফিজিবিলিটি স্টাডি করার পরেই অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বরিশাল নগরে সার্ভে ওয়ার্ক চলছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই এটির কাজ শুরু হয়েছে। যুগান্তকারী এ পদক্ষেপকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এখন বরিশাল, খুলনা ও যশোরে এটি হওয়ার কথা থাকলেও পর্যায়ক্রমে দেশের সব জায়গাতেই হবে, এমনটিই বলছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। তবে প্রথমে এ তিনটা জেলায় হবে।
এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর মতে, আন্ডারগ্রাউন্ডের মাধ্যমে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করলে সার্ভিসটা নিরাপদ ও নিরবিচ্ছিন্ন হবে। বর্তমানে যে সিস্টেম আছে, সেখানে বিদ্যুতের তার আমাদের মাথার উপরে রয়েছে। আবার অনেক স্থানেই খোলা তার রয়েছে। একটু বাতাস হলে, গাছের ডাল ভেঙে পড়লে কিংবা পাখি বসলে লাইন ফল্ট করে বসে। যখন আন্ডারগ্রাউন্ড বা মাটির নিচে চলে যাবে, তখন এ সমস্যাগুলো হবে না। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া অনেক সহজ হবে।
তিনি বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে এ বিষয়ে সাক্ষাৎ করে কথা বলেছি। কারণ তার শহরে এরকম একটা কাজ হবে, তাকে অবহিত করা উচিত। আবার সিটি করপোরেশন এলাকার মাটির নিচে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানির লাইনও রয়েছে।
‘বরিশালে মাটির নিচ থেকে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হয় না। তবে আন্ডারগ্রাউন্ডে টেলিফোনের ক্যাবল রয়েছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। কারণ এ কাজটি সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই করা হবে। যাতে বার বার খোঁড়াখুঁড়ি করতে না হয়।’
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হাসান বাবলু বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান যে প্রধানমন্ত্রী এমন একটা উদ্যোগে বরিশালকে প্রথম পর্যায়ে রেখেছেন। সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে এরইমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা সাক্ষাৎ করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। বরিশাল সিটি করপোরেশেনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন।
‘আধুনিক এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নগরের সব সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি বলে মনে করেন মেয়র। যাতে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কাজটিকে নির্ধারিত সময় ও ব্যয়ের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া যায়।’
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, আমাদের দেশে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বার বার দেখা দেয়। মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের করা হলে এসব দুর্যোগ থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সুরক্ষিত থাকবে।
Leave a Reply