ব্রিটিশ নৃশংসতার সাক্ষী ঝালকাঠির কুলকাঠি Latest Update News of Bangladesh

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:




ব্রিটিশ নৃশংসতার সাক্ষী ঝালকাঠির কুলকাঠি

ব্রিটিশ নৃশংসতার সাক্ষী ঝালকাঠির কুলকাঠি

ব্রিটিশ নৃশংসতার সাক্ষী ঝালকাঠির কুলকাঠি




ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ আজ ২ মার্চ উপমহাদেশের হৃদয় বিদারক কুলকাঠি হত্যাযজ্ঞ দিবস। ব্রিটিশ শাসনামলের এ ঘটনা ‘দ্বিতীয় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড’ নামেও পরিচিত। ৯৩বছর আগে ১৯২৭ সালে (বাংলা ১৩৩৩ সনের ১৮ ফাল্গুন) এ দিনে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বাকেরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইএন ব্লান্ডির হুকুমে গুর্খা সৈন্যরা গুলিবর্ষণ করে। এতে শহীদ হন ঝালকাঠির কুলকাঠি এলাকায় ১৯ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এ সময় আহত হন অসংখ্য মুসলিম জনতা।

 

 

ঐতিহাসিক বেদনাময় এ দিনটি পালনের জন্য প্রতিবছরের মত এবারেও কুলকাঠি মসজিদ কমিটির উদ্যোগে স্মরণসভা, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল এবং বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আসর নামাজের পর কর্মসূচি শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত এ কর্মসূচী পরিচালিত হবে। ঝালকাঠির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মুসলিম ধর্মীয় নেতারা এ কর্মসূচীতে যোগদান করবেন।

 

 

ঝালকাঠি শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরে সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ও নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি দুটি ইউনিয়ন ছিল ঘটনাস্থল। সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের আন্তর্জাতিক ৫২টি ধর্মীয় স্থানের মধ্যে ৩য় তীর্থস্থান শিববাড়ির অবস্থান। প্রাচীন কাল থেকে প্রতিবছর শিবচতুদর্শী উপলক্ষে শিববাড়িতে মেলা বসে। এখন দুই-তিন দিনে সীমাবদ্ধ হলেও আগে পক্ষকাল থেকে মাসব্যাপী মেলা চলতো। শিববাড়ির কাছেই জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি গ্রামটি অবস্থিত। ইংরেজ আমলে ১৯২৬ সালে এ গ্রামে একটি জামে মসজিদ নির্মিত হয়। হিন্দুরা ঢোলবাদ্য বাজিয়ে মসজিদসংলগ্ন রাস্তা দিয়েই মেলায় যাতায়াত করায় মুসলমানদের ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটে। এ নিয়ে মসজিদের ইমাম মৌলভী সৈয়দ উদ্দিনের নেতৃত্বে মুসুল্লীরা হিন্দু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে সুফল লাভে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় মুসলমানগণ মসজিদের পাশে রাস্তা দিয়ে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে যেতে না দেয়া অপরদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকরা বাদ্য-বাজনা সহকারেই শিবমন্দিরে যাবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে।

 

 

খবর পেয়ে বিখ্যাত হিন্দুনেতা সতীশ সেন একদল ‘হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক’ নিয়ে শিববাড়ি-কুলকাঠি এলাকায় অবস্থান নেন। শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায় বাকেরগঞ্জের তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইএন ব্লান্ডি, পুলিশ সুপার মি. টেলর এবং সদর এসডিও জিকে বিশ্বাস ২ মার্চ বুধবার, গুর্খা বাহিনী নিয়ে কুলকাঠি আসেন। দু’পক্ষের বিরোধের এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট ব্লান্ডি মুসলমানদের ওপর গুলি করার জন্য গুর্খা সৈন্যদের নির্দেশ দিলে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন ১৯ জন মুসল্লি। পুরো বাকেরগঞ্জ জেলাসহ দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। বরিশালে ময়না তদন্তের পর হেমায়েত উদ্দিন মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় শোকে মুহ্যমান হাজার হাজার মুসলমান অংশ নেন। পরে শহীদদের স্বজনরা গ্রামে এনে মসজিদের পাশে দাফন করেন শহীদদের।

 

 

 

শহীদরা হলেন- বাবর উল্লাহ হাওলাদার, আফেল গাজী, নঈম উদ্দিন হাওলাদার, এয়াসিন আকন, আতামুদ্দিন হাওলাদার, হাসান উল্লাহ হাওলাদার, মোসলেম উদ্দিন, মোহন মোল্লা, সেরাজ উদ্দিন, সুন্দর খান, ছবদার খান, মফেজ হাওলাদার, রহমালি হাওলাদার, বলু খান, রিয়াজ উদ্দিন, জাহের তালুকদার, জহির উদ্দিন হাওলাদার, আবুল হোসেন হাওলাদার ও ফরমান উল্লাহ।

 

 

তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের পত্রপত্রিকায় ফলাও করে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ করা হয়। মাসিক সওগাত পত্রিকা ঘটনাটিকে ‘দ্বিতীয় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। খবর পেয়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কুলকাঠিতে ছুটে এসে এক জনসভা করেন। হত্যাকাণ্ডের নায়ক ব্লান্ডিকে ‘ব্লাডি’ বলে আখ্যায়িত করেন। নরহত্যার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়।

 

 

সরকার পক্ষ মামলায় হেরে গিয়ে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য ভোলা জেলার চরমোয়াজানে দশ কানি জমির বরাদ্দ দেয়। কবরস্থানের চারদিকে দেয়াল এবং মসজিদটি ভালভাবে নির্মাণ করে দেয়া হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ব্লান্ডি ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। ১৯ শহীদের স্মৃতি রক্ষা কুলকাঠির চন্ডিপ্রসাদ হাইস্কুলটির নামকরণ করা হয় ‘কুলকাঠি শহীদিয়া ইউনিয়ন একাডেমী’।

 

 

 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে কুলকাঠির শহীদদের স্মৃতি আজ বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ১৯ শহীদের কবর। স্থানীয়ভাবে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। বিদেশী অর্থে মসজিদেরও কিছু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তবে ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিময় স্থাপনাগুলো যথাযথ সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য সরকারীভাবে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এত বড় ঘটনা কালের সাক্ষী হিসেবে থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের কাছে সে ইতিহাস অজানাই থেকে যাচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD