বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান পটুয়াখালীর কুয়াকাটাকে পৌরসভা করা হলেও এ পৌরসভায় রয়েছে নানা সমস্যা। প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। ভারী বৃষ্টি হলেই পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যায়। বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতায় অতিষ্ট হয়ে উঠে পৌরবাসী।
পৌর সুত্রে জানা গেছে, পর্যটন সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১০সালের ডিসেম্বরে লতাচাপলী ইউনিয়নের ২৩টি গ্রাম এবং তিন হাজার ৪৬১জন পুরুষ ও তিন হাজার ৩৪৩জন মহিলা ভোটার নিয়ে ৩৪নম্বর মৌজার ১১০০দশমিক ৫৫একর জায়গা নিয়ে কুয়াকাটা পৌরসভা গঠন করা হয় এর মধ্যে ২৪৩দশমিক ৬৬একর খাস জমি। ২০১১সালের ৩১মে গঠন করা হয় ১৯সদস্যের পৌর পরিষদ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহ সড়ক, ইলিশ পার্ক সড়ক, হোটেল বিচ ভ্যালির সামনের সড়ক, হোটেল রেইনডোর সামনের সড়ক, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাখাইন মহিলা মার্কেট চত্বর, হিড বাংলাদেশ সড়ক এবং অস্থায়ী পৌর ভবন এলাকা পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়া এলাকার বাড়িঘর হাঁটুপানিতে ডুবে রয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবীনপুর এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হুইসেন পাড়া এবং মুসুল্লীয়াবাদ এলাকার আংশিক দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
কিছু আবাসিক হোটেল ও বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকায় জমে থাকা পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা মেশায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে ছিল কুয়াকাটার অবস্থান। ১৯৯৮ সালে কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কুয়াকাটা। কুয়াকাটায় আসা পর্যটক ও স্থানীয় নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নকল্পে সরকার ২০১০ সালে তৎকালীন লতাচাপলী ইউনিয়ন থেকে কুয়াকাটাকে আলাদা করে ‘কুয়াকাটা পৌরসভা’ গঠন করে। এটি তৃতীয় শ্রেণির একটি পৌরসভা।
কুয়াকাটা পৌরসভা গঠন করার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও পৌরসভায় অভ্যন্তরীণ সড়ক ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন হয়নি। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। গত কয়েক সপ্তাহের অবিরাম বর্ষণে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওয়াহিদ ইবরাহিম বলেন, পৌরসভার আয়তন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেদখলে গেছে খাল ও জলাশয়। নালা নির্মাণ শুরু করলেও তা শেষ হচ্ছে না। ফলে জলাবদ্ধতা কমছে না, বরং বাড়ছে। আরেক বাসিন্দা হোসাইন আমির বলেন, কুয়াকাটাকে নিয়ে একটি ‘মাস্টারপ্লান’ করা হয়েছে। অথচ সেভাবে কুয়াকাটাকে গড়ে তোলা হচ্ছে না। এখনো যদি ‘মাস্টারপ্লান’ অনুযায়ী কুয়াকাটার সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত না হয়, তাহলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে কুয়াকাটার মানুষ।
কুয়াকাটার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আসলে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার জায়গা না রেখে অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন ও পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
জলমগ্ন হয়ে রয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভার রাখাইন মহিলা মার্কেটের সামনের মাঠ। কুয়াকাটায় ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ইলিশ পার্কসহ পাশের এলাকা প্রায় দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। জলাবদ্ধতায় পার্কের গাছপালা ও মাছের ক্ষতি হয়েছে।
পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন পুরো এলাকার মানুষ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পৌরসভা গঠনের ১০ বছরেও কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না পৌরবাসী।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহআলম হাওলাদার বলেন, ‘কুয়াকাটা পৌর এলাকার মধ্যে আমার ওয়ার্ডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ঘনবসতি ও অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এ নিয়ে পৌরসভার মাসিক সভাতেও বহুবার বলেছি। আমার এলাকায় ড্রেন ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার দিকে মেয়রের কোনো খেয়াল নেই।
বলতে পারেন মেয়রের উন্নয়নবৈষম্যের শিকার হয়েছি আমরা।’ কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, ‘পৌরসভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ কিলোমিটার নালা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
ইতিমধ্যে ৪ কিলোমিটার নালা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে কুয়াকাটা রাখাইন মহিলা মার্কেট চত্বর এলাকায় নালা নির্মাণে রাখাইন ও স্থানীয়দের জমি ছাড় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টির কারণে সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জায়গা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে এ এলাকায়ও নালা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। কয়েক দিন ধরে প্রবল বর্ষণে নালা নির্মাণকাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’
Leave a Reply