বরিশালে আতঙ্কের অপর নাম, মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের মালিক ওসমান হারুনী Latest Update News of Bangladesh

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:




বরিশালে আতঙ্কের অপর নাম, মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের মালিক ওসমান হারুনী

বরিশালে আতঙ্কের অপর নাম, মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের মালিক ওসমান হারুনী




ভয়েস অব বরিশাল:
নগরীর উত্তরাঞ্চলে প্রথম শ্রেণির জাল-জালিয়াতকারী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন ওসমান হারুনী। তিনি চকবাজার এলাকার ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের মালিক। খারিজ খতিয়ান নম্বর ব্যবহার করে জাল দলিল, অবৈধভাবে জমি দখল করতে সরকারকে বিবাদী করে মামলা দায়ের, দলিলের তফসিলে উল্লেখ আছে সম্পত্তির মালিকানা ৭নং চরকাউয়া ইউনিয়নে আর দখল করতে চায় সিটি এলাকার ৫নং পলাশপুরের জমি, জমির প্রকৃত মূল্য গোপন করে সরকারি ট্যাক্স ফাঁকি, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণসহ এহেন অসাধু কর্ম নেই যা করছেন না ওসমান হারুনী। তার অসাধু কর্মকান্ডের কারণে নগরীর উত্তরাঞ্চল মোহাম্মদপুর, পলাশপুর, আমানতগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ থাকেন প্রতারিত হওয়ার আশংকায়। সম্প্রতি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওসমান হারুনের বিরুদ্ধে।

মৃত শামসুল হক পরিচয়ে অন্য এক ব্যক্তিকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে হাজির করে জমির আমমোক্তারনামা তৈরি এবং সেই জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়। এ বিষয়ে মৃতের ছেলে মোশতাক আহম্মেদ রোববার বরিশালের বিশেষ আদালতে ৪ জনের বিরুদ্ধেদুর্নীতি দমন আইনের বিভিন্ন ধারায় নালিশী দায়ের করেছেন। আদালতের বিচারক মো. এনায়েত হোসেন অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী মোশতাক আহম্মেদ বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- ব্র্যাক ব্যাংকের বরিশাল শাখার সহযোগী ব্যবস্থাপক মামুন শরীফ, ওসমান হারুন ও তার ভাই মুসা আরিফ এবং সদর উপজেলা সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার আবু বক্কর সিদ্দিক।

মামলায় মোশতাক আহম্মেদ অভিযোগ করেছেন, তার বড় ভাই সিরাজুল হকের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী প্রতিবেশী ওসমান হারুনের সুসম্পর্ক রয়েছে। সেই সুবাদে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য তার বাবা শামসুল হকের কাছ থেকে ২০১২ সালের ৫ জুলাই আমানতগঞ্জ এলাকার একখ- জমির আমমোক্তারনামা নেন ওসমান হারুন। পরে ওই জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ১৫ লাখ টাকা ঋন নেন হারুন। ঋণ পরিশোধের আগেই ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট শামসুল হক মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল ঋণ পরিশোধ হলে নিয়ম অনুযায়ী আমমোক্তারনামা বাতিল হয়ে যায়।

কিন্তু ওসমান হারুন শামসুল হকের মৃত্যুর তথ্য গোপন রেখে ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল আবারও ২২ লাখ টাকা ঋণ নেন। এবার আমমোক্তারনামা তৈরির জন্য অন্য এক ব্যক্তিকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে শামসুল হক পরিচয় দিয়ে স্বাক্ষর জাল করা হয়। দ্বিতীয় দফা ঋণের টাকা পরিশোধ না হলে ব্যাংক বন্ধকি জমি নিলামে ডাকে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি অখ্যাত সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে সাড়ে ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের জমি ২৫ লাখ টাকায় কেনেন ওসমান হারুনের ভাই মুসা আরিফ। মোশতাক আরও জানান, এসব প্রতারণা তাদের অজ্ঞাতেই হয়েছে। গত ৮ মে আরিফ মুসা নিলাম ক্রয় সূত্রে মালিকানা দাবি করে জমি দখল করলে তারা প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন। অপরদিকে ওসমান হারুনী সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে পাওয়া অগনিত অভিযোগ অভিযোগ।

তার দখলবাজী থেকে রক্ষা পেতে কাউনিয়া থানায় ভুরিভুরি অভিযোগও পড়েছে যা থানা সূত্র নিশ্চিত করেছে। আরেকটি সূত্রে জানা গেছে সঠিক তথ্য গোপন করে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে দুটি জমির দলিল করেছেন ওসমান হারুনী। গত ২৩/১১/১৭ ইং তারিখে বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ১৩৩৬৯ নং এবং ১১/৩/১৮ ইং তারিখে ২৯৫৮ নম্বরে ২২ ও ৪৫ শতাংশ জমির দুটি দলিল করেন। কিন্তু উক্ত দলিলে উল্লেখিত সম্পত্তি খারিজ খতিয়ানের। সূত্র মতে, এস.এ ৩৪৩নং খতিয়ানের ১২ একর ৩২ শতাংশ সম্পত্তি মিথ্যা দখল দেখিয়ে আত্মসাতের চেষ্টায় সরকারকে বিবাদী করে বরিশাল সহকারী জজ আদালতে ১১৫/৮৭ নং মামলা দায়ের করে একটি পক্ষ। ওই মামলার দ্বোতরফা শুনানীকালে ভূমি কর্মকর্তারা সরকারের স্বপক্ষের কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হলে আদালত ১৭/৫/১৯৮৭ ইং তারিখ মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।

নাছোরবান্দা ভূমিখেকো দল উক্ত খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে ১২৩/৮৯নং আপিল কেস দাখিল করলে তৎকালীন জেলা জজ আমিন উল্লাহ ৩/৮/১৯৮৯ ইং তারিখ আপিল মামলাটিও খারিজ করে দেন। যে কারণে সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তারা মিস কেস ৩৪০ কেটি/তাং- ১৮/৩/১৯৯৩ এর মাধ্যমে সৃজিত এস.এ ৩৪৩নং খতিয়ানটি বাতিল হয়ে যায়। প্রতারক ওসমান হারুনী আদালত থেকে মামলা খারিজ হওয়ায় বাতিল হওয়া খতিয়ান দ্বারা ২২ ও ৪৫ শংতাংশের ২টি দলিল রেজিস্ট্রি করেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এদিকে ওই অবৈধ দলিলের মধ্যেও রয়েছে ফাঁকিবাজি। জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারি কোষাগারে কম অর্থ জমা দেওয়া হয়। চরবদনা মৌজায় সরকারি রেটে নাল জমির মূল্য প্রতি শতাংশ ৪৯,৮০০ টাকা হারে ২২ শতাংশ জমির দাম হয় ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু সেখানে জমির মূল্য দেখানো হয় ৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে জমির দামে ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা কম দেখানো হয়েছে। ৪৫ শতাংশ জমির অপর দলিলে সরকারি রেট অনুযায়ী জমির মোট মূল্য দাড়ায় ২২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। কিন্তু সেখানে মূল্য দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

এখানে কম দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। দুই দলিলে মোট ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা কম দেখানো হয়েছে যা যোগ থাকলে দলিল রেজিস্ট্রি করতে যে পরিমান রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা পড়তো তা ফাঁকি দিয়েছেন ওসমান হারুনী। সরকারকে অর্থ ফাঁকি দিয়েও ক্ষান্ত হননি তিনি। জমি দখলেও করেছেন অন্যায্য কান্ড। দলিলে জমির স্থান চরবদনা মৌজার জে.এল নং- ৬২ যা সদর উপজেলার ৭নং চরকাউয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ইউনিয়নের জমির দলিল নিয়ে তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড পলাশপুরের জমি দখল করতে চাইছেন। ওসমান হারুনী কুচক্র মহলকে সঙ্গী করে সিন্ডিকেট তৈরী করে জবর দখল প্রচেষ্টায় লিপ্ত হলে পলাশপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। সেখানকার সাধারণ বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন হঠাৎ কার জমি নিজের দাবি করে বসেন হারুনী। অপরদিকে জাল জালিয়াতির দলিল নিয়ে অন্যের জমি দখল করার মিশনের অংশ হিসেবে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওসমান হারুনী ও তার সহযোগী বাদী হয়ে একই দিনে একই ঘটনায় ১৪৪/১৪৫ ধারায় দুটি মামলা দায়ের করেন। যার এমপি মামলা নং ১৪/২০১৮ কাউনিয়া ও ১৫/২০১৮।

মামলা দুটি আদালতে চলমান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী- ওসমান হারুনী বরিশাল নগরীর উত্তরাঞ্চলে একটি আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা বিশেষ করে ভূমি মালিকরা ভয়ে আছেন হারুনী ভুয়া কাগজ নিয়ে হঠাৎ কার দরজায় দাঁড়িয়ে নিজেকে জমির মালিক দাবি করে জবর করে নেন সম্পত্তি। এই বেপরোয়া দখলবাজ ব্যক্তির কবল থেকে রক্ষায় বরিশালের প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের সুনজর কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ও আতঙ্কিত মানুষেরা। এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওসমান হারুনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD