রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক//
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে কিলিং মিশনে নামার প্রস্তুতি নিয়ে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির প্রশিক্ষিত সদস্যরা। তারা লোকদেখানো বিভিন্ন কাজে নিজেদের জড়িয়ে রাখলেও নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের কিলিং মিশন সফল করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে।
গত একমাসে র্যাব-৮ এর চৌকস সদস্যরা জেএমবির সামরিক শাখার একজনসহ সক্রিয় দুই সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে র্যাব সদস্যরা বরিশাল নগরীর জিয়া সড়কে অভিযান চালিয়ে আতিকুর রহমান বাবু ওরফে শাওন ওরফে সাইফুল্লাহ (২৪) নামের জেএমবির সামরিক শাখার এক সদস্যকে আটক করেছেন। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ছয় রাউন্ড গুলি, বেশকিছু জিহাদি বই, লিফলেট ও দুটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। এরআগে গত ৩১ আগস্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৮ এর সদস্যরা নগরীর দড়গাবাড়ি রোড এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সক্রিয় সদস্য আব্দুল্লাহ আল মিরাজ ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে সাইফুল ইসলামকে (২৫) আটক করে। তার কাছ থেকেও র্যাব সদস্যরা একটি পিস্তল, দুইটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, ১৬টি জিহাদী বই, একটি সিডি, দুইটি পাসপোর্টসহ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি উদ্ধার করেছে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আব্দুল্লাহ আল মিরাজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই জেএমবির সামরিক শাখার সক্রিয় সদস্য আতিকুর রহমানকে আটক করা হয়েছে।
সচেতন নাগরিকদের মতে, উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে গুলি করে হত্যার ঘটনার সাথে জেএমবির কালেকশন রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। ঘটনারদিন গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা রাতে কারফা বাজারের নিজের কাপরের দোকানে বসা ছিলেন বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু। আকস্মিকভাবে একটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত তিন ব্যক্তি এসে অর্তকিতভাবে চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুড়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু নিহত হন। এ ঘটনায় বিশেষ একটি মহল তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যর ব্যক্তিগত সহকারীসহ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ৪০জন নেতাকর্মীকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলার সাতজন আসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। ঘটনার পর থেকে গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশের একাধিক টিম মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু করে এখনও হত্যার মূলরহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি।
আলোচিত নান্টু হত্যা মামলায় দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দলের কথা উল্লেখ করা হলেও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতৃবৃন্দরা জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসের সময়কার পাঁচ বছরে এখানে দলীয়ভাবে এমন কোন কোন্দলের সৃষ্টি হয়নি যেখানে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তারা আরও জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন এক তৃতীয় শক্তি তাদের কিলিং মিশন সফল করার জন্য বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে হত্যার মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছেন। উল্টো জনপ্রিয় সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারীসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছেন।
র্যাব-৮ এর ডিএডি মোঃ মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে দায়ের করা মামলার বরাত দিয়ে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম জানান, জেএমবির সামরিক শাখার সক্রিয় সদস্য আতিকুর রহমান বাবু ওরফে শাওন ওরফে সাইফুল্লাহকে র্যাব-৮ এর সদস্যরা ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর জিয়া সড়কে অভিযান চালিয়ে আটক করে। আতিকুর বরগুনার মোড়খালী গ্রামের মৃত গোলাম কবির মাতুব্বরের পুত্র। ওসি আরও জানান, আতিকুর রহমানের কাছ থেকে র্যাব সদস্যরা একটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি খালি ম্যাগজিন, ছয়টি পিস্তলের গুলি, ৩৫৫টি বিভিন্ন জিহাদি লিফলেট এবং বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামি জিহাদি বই উদ্ধার করেছে। র্যাবের অভিযানের সময় আতিকুর রহমানের সাথে থাকা সহযোগী জেএমবি সদস্য নুরুল ইসলাম, আল-আমিন, আব্দুল আজিজ, মাহবুবুর রহমান, আবুল কালাম, মানিক ইসলাম, আব্দুল্লাহসহ অন্যান্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এরআগে গত ৩১ আগস্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৮ এর সদস্যরা নগরীর দড়গাবাড়ি রোড এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সক্রিয় সদস্য আব্দুল্লাহ আল মিরাজ ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে সাইফুল ইসলামকে আটক করে। তার কাছ থেকেও র্যাব সদস্যরা একটি পিস্তল, দুইটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, ১৬টি জিহাদী বই, একটি সিডি, দুইটি পাসপোর্টসহ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি উদ্ধার করেছে।
বরগুনা সদরের মনসাতলী এলাকার ইব্রাহিম খলিলের পুত্র আটককৃত মিরাজ র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০০৬ সালে দাখিল পাস করার পর সে জসিমউদ্দিন রহমানীর বক্তব্য শুনে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরে তার সাথে আতিকুর রহমান ওরফে বাবু ওরফে শাওন, নাজমুল ওরফে উকিল ওরফে রেশান, তরিকুল ওরফে সাকিব ওরফে নাজমুল সাকিব, আলামিন ওরফে হাসান ওরফে আলমগীর, আল-আমিন ওরফে রাজীব ওরফে আজিজুলসহ বেশ কয়েকজন জেএমবির সাময়িক সদস্যর সাথে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ২০১২ সালে জসিমউদ্দিন রহমানীর সাথে গোপন বৈঠকের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় মিরাজ ও মনির। জামিনে বেরিয়ে আসার পর বেশ কিছুদিন মিরাজ তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করে। ২০১৪ সালে তার সাথে নাজমুল, তারিকুল, সবুজসহ অন্যান্যদের যোগাযোগ হয়। ওইসময় থেকে মিরাজ তার অপর সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্নস্থানে গোপনে বৈঠক করে এবং জেএমবি কার্যক্রম তথা সশস্ত্র উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। নাজমুল ওরফে উকিলের নির্দেশে মিরাজ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য বরিশাল নগরীতে অবস্থান করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে জঙ্গিগোষ্ঠী শক্তিশালী অবস্থায় না থাকলেও তারা যাতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য র্যাব-৮ এর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জঙ্গিদের তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জল্লার ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেএমবির কালেশন রয়েছে কিনা সেবিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Leave a Reply