মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।বুধবার (৩১ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।মঙ্গলবার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আজও (বুধবার) শুনানি শেষে আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুবউদ্দীন খোকন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
গত ২৮ জুলাই খালেদা জিয়ার আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বেঞ্চ জামিন শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।
গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।
ওইদিন আপিল শুনানি গ্রহণের পর জয়নুল আবেদীন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানি করতে গেলে আদালত বলেছিলেন, আগে নথি আসুক। তখন দেখা যাবে।
গত জুনে ওই নথি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ থেকে হাইকোর্টে আসে। আপিলের পর খালেদার জামিনের বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার জামান বলেছিলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাই তার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জামিন দেবেন।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এর মধ্যে গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচবছর কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।অপর দুই আসামি দীর্ঘদিন জামিনে থাকলেও সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মুন্না ও মনিরুলকেও কারাগারে পাঠানো হয়।
চারজনের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণার পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকায় খালেদা জিয়ার নামে কাকরাইলে কেনা ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন আদালত।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। এ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুদক।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
তবে শুনানি চলাকালে একাধিকবার আদালতে হাজির হতে অনিচ্ছা দেখিয়ে ছিলেন খালেদা জিয়া। দুদকের জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা ৫টি- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। এ ৫টি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের (১/১১)। অন্য ৩১টি মামলা ২০১৪ সালের পর হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি ঢাকায়, কুমিল্লায় ৩টি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি।
Leave a Reply