স্বস্তির খবর নেই বাজারে, সিন্ডিকেটের থাবা! Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




স্বস্তির খবর নেই বাজারে, সিন্ডিকেটের থাবা!

স্বস্তির খবর নেই বাজারে, সিন্ডিকেটের থাবা!

স্বস্তির খবর নেই বাজারে, সিন্ডিকেটের থাবা!




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ স্বস্তির খবর নেই বাজারের কোনো পণ্যেই। ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই অস্থির হওয়া বাজারদর এখনো স্থির হয়নি। উল্টো ঈদের পর নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চিনি, তেল, পেঁয়াজ, আলু, আদা ও ডিমের দাম। কেজিতে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে।

 

বিক্রেতারা বরাবরের মতো সরবরাহ সংকটকে দায়ী করলেও সরকারের নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন সাধারণ ক্রেতা। তাদের মতে, নজরদারি না থাকার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। অপরদিকে, অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ মুহূর্তে এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করছেন তারা। এতে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের লোকজন চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে বলেও মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

 

বাজার ঘুরে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কারণে-অকারণে দেশে একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়ছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা সহজে কমছে না। দাম বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, সময় মতো এলসি খুলতে না পারাসহ বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি সরবরাহ সংকট দেখাতে অনেক সময় বাজার থেকে পণ্য হাওয়া করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব কাজে শক্ত ভিত তৈরি করে রেখেছে অসাধু সিন্ডিকেট। তবে এ সিন্ডিকেট ভাঙতে বিভিন্ন সময় সরকারি উদ্যোগ দেখা গেলেও কার্যকর হয়নি।

 

দ্রব্যমূল্যের এমন লাগামহীন উল্লম্ফনে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ ক্রেতার। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। নিত্য পণ্যের বাজার কার নিয়ন্ত্রণে? এমন প্রশ্ন প্রায় সব ক্রেতার। কারণ, পণ্যের বাজার সকালে এক রকম, বিকেলে আরেক রকম। যেসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়, সেইসব পণ্যেরও দাম বাড়ছে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা তেমন কার্যকর হচ্ছে না। ফলে বাজারে গিয়ে পছন্দের পণ্য চাহিদামতো কিনতে পারছেন না অনেকেই। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রাখতে গিয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না কিনেই ঘরে ফিরছেন। এক্ষেত্রে সরকারও যেন সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। সবকিছুর চাবিকাঠিই অসাধু চক্রের হাতে। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে আরো কঠোর আইন করতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা নেই বলেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী এ প্রসঙ্গে বলেন, একশ্রেণির ব্যবসায়ী আছে, যারা কোনো কারণ ছাড়াই মুনাফা নেয়ার পাঁয়তারা করে। তিনি বলেন, দেশে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন অনেক ভালো। বাজারে সরবরাহ ঘাটতিও নেই। অথচ পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। আলুর বাজারেও একই পরিস্থিতি। সুতরাং কারণ থাকুক আর নাই থাকুক, অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বাজারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা হরহামেশা এমন সুযোগ নিচ্ছে। প্রতিবারই বিভিন্ন অজুহাতে এসব অসাধু ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারকে যদি সুনিয়ন্ত্রিত করা না যায় তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

 

বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর চাহিদা কম থাকার কথা, তাই বাজার অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই। অথচ সরকার এডিবল অয়েলের দাম বাড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে সাপ্লাইয়ের কোনো সমস্যা আছে কিনা- দেখতে হবে। কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রয়েছে ভোক্তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য। তাদের উচিত বিষয়গুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা। প্রয়োজনে ইচ্ছাকৃতভাবে যারা নিত্যপণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান লেন, দ্রব্যমূল্য মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই, এটাই বাস্তবতা। তিনি বলেন, এমন বাস্তবতায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ স্বল্প আয়ের বা নির্ধারিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। সুতরাং সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লে তাদের জীবনমানের অবনতি হবে। ক্যাব সভাপতি আরো বলেন, সরকারও দ্রব্যবমূল্যের লাগাম টানতে পারছে না। এজন্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট যেমন দায়ী, তেমনি অভ্যন্তরীণ যেসব নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন তা নিতে পারছে না। বিশেষ করে আর্থিক নীতি এবং মুদ্রানীতি। তিনি বলেন, মূল্যস্ফিতি রোধ করতে মুদ্রানীতিতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেইসব পদক্ষেপ নিতে সরকার হয়তো সামর্থ নয়। অথবা কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ নেই।

 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদপরবর্তী সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চাল-তেল থেকে মাছ-সবজিসহ প্রায় সব নিত্যপণ্য নিয়েই বাজারে চলছে কারসাজি। বর্তমানে আলোচনায় চিনির দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। সরকারের তদারকিতেও নাগালের মধ্যে আনতে পারছে না পণ্যটির দাম। বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় সরকার গত ৮ এপ্রিল থেকে পরিশোধিত খোলা চিনির কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে ১০৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনির দামও ৩ টাকা কমিয়ে ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার ঘোষণা করলেও বাস্তবে বাজারে উল্টো চিত্র।

 

প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। যেখানে ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। খোলা চিনি কিছুটা পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না বাজারে। মালিবাগ রেলগেট কাচাবাজারের রায়হান জেনারেল স্টোরের সোহেল রানা বলেন, প্যাকেটজাত চিনি নেই, তবে খোলা চিনি আছে ১৪০ টাকা কেজি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যাকেটজাত চিনি প্রায় দেড় মাস যাবত পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনিও কোনো ডিলার বা পাইকারিতে সহজে পাওয়া যায় না। পেলেও তা বেশি দামে, অর্থাৎ ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি ৬ হাজার ৩০০ টাকায় (১২৬ টাকা কেজি) কেনা হয়েছে। তাই ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

 

বাজারে আরেক দফা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকারের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে সয়াবিন তেলের মূল্য সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন। সংস্থাটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য এখন থেকে ১৯৯ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। আগে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৮৭ টাকা। সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী এখন থেকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৭৬ টাকায়। এছাড়া সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা এবং খোলা পাম সুপার তেলের প্রতি লিটার বিক্রি হবে ১৩৫ টাকায়।

 

বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা। অন্য সবজির তুলনায় এ দামকে বেশি বলার সুযোগ নেই। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩৫ থেকে আলুর দাম ৫০ টাকায় পৌঁছার কারণ কী তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। চলতি বছর আলুর উৎপাদন যা হয়েছে তার পরিমাণ স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে ঈদের আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে কৃষকরা এসব বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে তা বিভিন্ন আড়তে ও মোকামে চলে গেছে। তারা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। এজন্য আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

 

পেঁয়াজের দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, ঈদের আগে ৪০ টাকা কেজি ভাল পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। সেই পেঁয়াজের দাম বর্তমানে ৬০ টাকা কেজি। তবে ফরিদপুরেরটা একটু কম দামে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়ছে।

 

হঠাৎ করে ডিমের দাম হালিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ডজনে বেড়েছে ২০ টাকা। দুই দিন আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৩০ থেকে বাজারভেদে ১৩২ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেই উঠে গেছে ১৫০ টাকায়।
এদিকে আগে ১৮০ টাকা কেজি বিদেশি আদা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। তারপরও লাভ থাকছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে দেশি আদা ১৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। যা ঈদের আগে ছিল ১২০ টাকা কেজি। কাওরান বাজারের মসলা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, ঈদের আগে বিদেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ৩০০ -৩২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, দাম বেড়ে গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্যের সরবরাহ কম। তাই বাড়তি দাম।

 

খুচরা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কৃষিপণ্যের আড়ত শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে।

 

তবে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, এবার ফলন কম হয়েছে। এজন্য কৃষকের পেঁয়াজ শেষ হয়ে আসছে। সরবরাহ কমছে। তাই দাম বাড়ছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD