বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক : পবিত্র মাহে রমজানের সওগাত: মাহে রমজান হচ্ছে ধৈর্য রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এর প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। তাওরাত কিতাবে আস সাওম অর্থ হচেছ (হাত্ব) পাপ ধ্বংসকারী যাবুর কিতাবে অর্থ হচেছ (ক্বোরবাত) নৈকট্য লাভ ইনজিল কিতাবে এর অর্থ হচ্ছে (ত্বীর) পবিত্র হওয়া। আর আরবীতে আস সাওম অর্থ বিরত থাকা এবং পবিত্র কুরআনে রমজান, রমজ অর্থ জালিয়ে পুড়িয়ে সোজা ও ঠিক করা। হেমন্তের ঋতুতে বৃষ্টিপাত হওয়া। এখানে মোদ্দাকথা হচ্ছে রোজা বা সিয়ামের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, আত্মা পবিত্র হয়, মন্দ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়, পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হওয়া যায়। আর মনের কু-রিপু ও পশুত্বকে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
রোজা যাতে অন্তঃসার শূন্য আনুষ্ঠানিকতায় পরিনত না হয়। তা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। এ জন্য মহানবী (স:) রোজার সাথে ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং উত্তম বিনিময় লাভের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওমের আশায় রমজানের রোজা রাখবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। বস্তুত যে রোজা তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় ও হৃদয়ে পবিত্রতা শূন্য সে রোজা যেন প্রকৃত অর্থে কোন রোজাই নয়। আল্লাহর নিকট এইরূপ রোজার গুরুত্ব নেই। হাদীসে বর্নিত আছে যে হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (স:) ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদানুযায়ী আমলকরা বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
মাহে রমজানের ফযিলতঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (র:) হতে বর্ণিত- রাসূল (স:) বলেন- রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে রোজা বলবে হে আমার রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও যৌন ক্রিয়া থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। তখন এদের সুপারিশ কবুল করা হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে রোজা আদায় করা ফরজ করেছেন এবং তারাবিহ সালাত সুন্নাত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন নফল ইবাদত করবে সে অন্যান্য মাসের ফরজ আদায়কারীর সমান সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন ফরজ ইবাদত করবে সে অন্যান্য মাসের ৭০ টি ফরজ আদায়কারীর সমান সাওয়াব পাবে। সুবাহানাল্লাহ।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজা: রাশিয়ার একজন বিজ্ঞানী প্রফেসর নাটিকন বলেন, তিনটি নিয়ম পালন করলে শরীরের বিষাক্ত দ্রবাদী বের হয়ে যাবে এবং বার্ধক্য থামিয়ে দিবে।
(ক) অধিক প্ররিশ্রমে দেহের শিরা উপশিরায় সতেজতা ও সজিবতা সৃষ্টি হয়।
(খ) অধিক পরিমানে ব্যায়ম করা
(গ) প্রত্যেক মাসে অন্তত একদিন অভূক্ত থাকা।
মহানবী (স:) রমজান মাস ছাড়াও প্রতিমাসে তিন চারটি রোজা রাখতেন। আর বলতেন “রোজা রাখ সুস্থ থাক”।
আজকের তারাবিতে কালামে পাক থেকে যা তেলাওয়াত করা হবে তার সংক্ষেপ হচেছ -তোমরা মুসলমানরা এ পৃথিবীর সর্বোত্তম জাতি, সমগ্র মানব জাতির কল্যানের জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তোমরা দুনিয়ার মানুষদের সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে নিজেরাও। আর তোমরা আল্লাহর উপর পুরোপরি ঈমান আনবে। (সূরা আল ইমরান: ১১০)
অমুসলিমদের অবস্থা হচ্ছে তোমাদের (মুসলিমদের) কোন কল্যান হলে তার কারনে তাদের খারাপ লাগে। আবার তোমাদের কোন অকল্যান দেখলে তারা আনন্দে ফেটে পড়ে। এ প্রতিকুল অবস্থায় যদি তোমরা ধৈর্য ধারন করতে পার এবং নিজেরা সাবধান হয়ে চলতে পার তাহলে তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। তাদের যাবতীয় কর্মকান্ডই আলাহ তায়ালা পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা আল ইমরান ১২০)
লেখা: মাওলানা মোহাম্মদ আমির হোসেন তালুকদার, অধ্যক্ষ, কাউনিয়া বালিকা আলিম মডেল মাদ্রাসা, বরিশাল।
চলবে….
Leave a Reply