বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
থানা প্রতিনিধি॥ বরিশালের মুলাদীতে বিধবা শানু বেগমকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে মৃত থেকে জীবিত দেখানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ডাটাবেজে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও নাম দিয়ে সার্চ দিলে এখন তাকে জীবিত দেখাচ্ছে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন জানান, শানু বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হলে আমার নজরে আসে। কিন্তু শনিবার সরকারি বন্ধ ছিল। এ জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
রোববার দুপুরে শানু বেগমের লিখিত আবেদনটি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে পাঠানো হয়। পাশাপাশি দ্রুত তার কাজটি সম্পাদনের জন্য বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় থেকে প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে যোগাযোগ করা হয়।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, প্রধান কার্যালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জানানো হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেজে শানু বেগমকে মৃত শব্দটি সংশোধন করে জীবিত লেখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এরপর আমরা শানু বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি। এখন তার জাতীয় পরিচয়পত্রটি পুরোপুরি সচল। মৃত দেখানোর কারণে এতদিন তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ও নাম দিয়ে সার্চ দিলে ইনভ্যালিড দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু সেটি সংশোধনের পর এখন সার্চ দিলে পুরোপরি সচল ও শানু বেগমকে জীবিত দেখানো হচ্ছে। ফলে বিধবা ভাতা পেতে শানু বেগমের এখন আর কোনো অসুবিধা থাকল না। পাশাপাশি সরকারি যেকোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতে শানু বেগমকে আর সমস্যায় পড়তে হবে না। মুলাদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শওকত আলীকে বিষয়টি শানু বেগমকে জানাতে বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শওকত আলী জানান, দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে শানু বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে মৃত থেকে জীবিত দেখানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর বিষয়টি জানাতে শানু বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেছি। তবে তার মুঠোফনটি বন্ধ থাকায় কল ঢুকছে না। বিষয়টি জানাতে শানু বেগমের বাড়িতে লোক পাঠানো হচ্ছে।
মো. শওকত আলী আরো বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদে শানু বেগমকে মৃত দেখানো তথ্য সংগ্রহকারী ও তদারকির দায়িত্বে থাকা দুই শিক্ষককে এরই মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন স্যারের নির্দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদে ওই দুই শিক্ষকের গাফিলতি-অবহেলা ও উদাসীনতা এবং অন্য কোনো কারণ ছিল কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
শানু বেগম বলেন, নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘুরেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। খবর প্রকাশ করার পর উপজেলা নির্বাচন অফিসে ডেকে আমার বিষয়টি পুনরায় জানতে চায় এবং দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেয়। এখন আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমার বিষয়টি সমাধান হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে আমাকে মৃত থেকে জীবিত করা হয়েছে। আমি অনেক খুশি ও আনন্দিত।
তিনি বলেন, এ আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। আপনাদের জন্য অনেক দোয়া করি। শানু বেগম বলেন, অনেক কষ্টে ছিলাম। ২২ বছর আগে স্বামী মারা যান। তিন ছেলেই বেকার। মেয়েদের অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছি। চেয়ারম্যান ও মেম্বারের পেছনে ঘুরে ঘুরে বিধবা ভাতার তালিকায় নাম ওঠে। এরপর ১০-১১ বছর ধরে ভাতার টাকা পাচ্ছিলাম। কোনো রকম সংসার চলছিল। এখন যদি ভাতা আবার চালু হয় কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।
Leave a Reply