বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ নারায়ণগঞ্জের মসজিদে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মসজিদ কমিটির অনিয়মকেই দায়ী করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তৃতীয় দিনের মতো খোঁড়াখুঁড়ির পর তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান ডিজিএম প্রকৌশলী আব্দুল ওহাব তালুকদার গণমাধ্যমের সামনে এ তথ্য জানান।মসজিদ কমিটির ওপর সব দায় চাপিয়ে তিতাস গাসের তদন্ত দলের প্রধান বলেন, মসজিদ নির্মাণের সময় মসজিদ কমিটি রাজউক, তিতাস, বিদ্যুতসহ সংশ্লিষ্ট কোনো দফতরের অনুমোদন না নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামাফিক মসজিদ নির্মাণ করেছে।
তিনি বলেন, গত তিন দিন ধরে মসজিদের উত্তর পাশে ও পূর্ব পাশে এবং দক্ষিণ পাশে বেশ কয়েকটি গর্ত খুঁড়ে লিকেজ অনুসন্ধান করা হয়। বুধবার সকাল থেকে মসজিদের পূর্ব পাশের অংশে ভেকু ও শ্রমিক দিয়ে মাটি খুঁড়ে মসজিদের উত্তর পাশের ৪নং খুঁটির কলাম করার সময় যে ফাউন্ডেশনের কাজ করা হয়েছে- ওই সময় তিতাস গ্যাসের সরবরাহের মূল লাইন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
মসজিদ নির্মাণের সময় গ্যাস লাইনের সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। ফাউন্ডেশন দেয়ার সময় গ্যাস পাইপ লাইন থেকে ৬ ইঞ্চি রাস্তার ভেতরে এসে ৪নং খুঁটির ফাউন্ডেশন দেয়া হয়েছে। ওই সময় মূল গ্যাস লাইনটি মাটির উপরে রেখে মাটির নিচ দিয়ে ফাউন্ডেশনের কাজ করতে গিয়ে মূল সরবরাহ গ্যাস লাইনে রেপিন নষ্ট করে ফেলে; যা দীর্ঘদিন মাটির সংস্পর্শে এসে ফুটো বা ছিদ্র হয়েছে। সেখান থেকে লিকেজ হয়ে গ্যাস নির্গত হয়েছে এবং অন্যান্য ৬টি জায়গায় লিকেজ সৃষ্টি হয়েছে; যা দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়ে মাটির বিভিন্ন স্তর ভেদ করে মসজিদের ভেতরে বা বাইরে দিয়ে গ্যাস বের হয়েছে।
তিনি বলেন, সরবরাহ লাইনের ৬টি লিকেজ মেরামত করে পুলিশ, এনএসআই, ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসিজদের ভেতরে পানি ঢেলে গ্যাস উদগিরণ বা বুঁদবুঁদ বের হয় কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো বুঁদবুঁদ বা উদগিরণ দেখা যায়নি। যে কারণে সরবরাহ লাইনটি চালু করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তিতাসের মূল লাইন ছিদ্র করে কয়েকটি বাসা বাড়িতেও সংযোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পিলার বা কলামের সাথে পরিত্যাক্ত গ্যাসের কানেকশন ও রাইজার ছিল। যেখানে ১ ইঞ্চি থেকে ৩ ইঞ্চি লাইনে (পাইপে) একটি সংযোগ শিফট করা হয়েছিল।
সেখানে একটি লাইনের দলিলপত্র বা রেকর্ড পেলেও অন্য একটি শিফট হওয়া লাইনের কোনো রেকর্ড আমাদের কাছে নেই। এর মানে ওই লাইন ব্যবহারকারী বা বাড়িওয়ালা স্থানীয় কোনো মেকানিজমে লাইনটি শিফট করেছিলেন।
আব্দুল ওয়াহাব আরও জানান, মসজিদের মধ্যে আমরা ২টি বিদ্যুৎ লাইন পেয়েছি, যার একটি অবৈধ। আমরা মসজিদ কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্য ফেইজ দিয়ে তারা মসজিদের বিদ্যুৎ চালাতেন।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, লাইন চেঞ্চওভার করতে গিয়ে স্পার্ক থেকেই জমে থাকা গ্যাসের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
তিনি জানান, সরেজমিন অনুসন্ধানে যা পাওয়া গেছে তা রিপোর্টে উল্লেখ করে আগামীকাল তিতাসের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দফতরে দাখিল করা হবে।
২০০১ সালের শুরুর দিকে মসজিদটি টিনশেড থেকে পাকা ভবন হয়েছিল বলে এলাকাবাসী জানালেও এখন ওই বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মেম্বার।
তিনি তিতাস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মসজিদটির পাকা ভবনের ফাউন্ডেশন ১৯৯০/৯১ সালের দিকেই হয়েছিল। তখন তিতাসের কোনো পাইপ লাইন তারা দেখেননি। যদিও মসজিদ কমিটির অনেকেই বলেছেন ২০০১ সালের দিকেই তৎকালীন কমিটির মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল এর ফাউন্ডেশন (ভিত্তি)।
অপরদিকে মসজিদের বর্তমান কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আল আমিন জানান, আমি ২০০৩ সালে এই এলাকায় এসেছি এবং মহিলা মাদ্রাসা স্থাপন করি। আমি তখন থেকেই মসজিদটি পাকা ভবন দেখছি। শুনেছি ২০০১ সালের দিকে মসজিদটি পাকা ভবন হয়েছিল।
স্থানীয় ইসাল উদ্দিন জানান, আমার বাবা এই মসজিদের মোতাওয়াল্লি। তিনি এ মসজিদে ৪ শতাংশ জমিও দান করেছেন। তিনি আরও জানান, ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে পুরাতন কোর্টের একটি টিনের ঘর কিনে এনে এখানে মসজিদ স্থাপন করা হয়েছিল। পরে ২০০১ সালের দিকে মসজিদ কমিটি এখানে ফাউন্ডেশন দিয়েছিল। পরবর্তীতে বারান্দার অংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
Leave a Reply