বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ নগরীসহ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানের আড্ডায়, হাট-বাজার, বিদ্যালয় থেকে বাসাবাড়িতে গত কয়েকদিন যাবত একটি নাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। আর সেটি হলো ‘কল্লাকাটা বা মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া’।এ নিয়ে আজব আজব গল্পও ছড়াচ্ছে মুখে মুখে। যা আঁতকে ওঠার মতো। কোন এক সেতুতে নাকি মানুষের কল্লা লাগবে! কেউ শুনেছে ১০০টি আবার কেউ শুনেছে বিশ হাজার কল্লা। কেউ শুনেছে ত্রিশ হাজার কল্লা দিতে হবে।
সে ছোট ছেলেমেয়ে হোক বা যেকোন বয়সের। কেউ শুনেছে নগরীর রূপাতলী থেকে দু’জনের কল্লা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেউ শুনেছে ছোট বাচ্চাদের কল্লা নেয়ার সময় নগরীতে একজনকে ও গৌরনদীতে তিনজনকে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। এ নিয়ে রীতিমতো বাগ্বিত-াও চলছে। যদিও এসব বিষয়ে কেউ চোখে দেখেননি। সবাই শুনেছেন। আর এই শোনা থেকে আলোচনা এখন ক্রমেই আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ফলে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতেও সন্তানদের একা ছাড়ছেন না তাদের অভিভাবকরা। সময়ের অভাবে অভিভাবকরা সঙ্গে যেতে না পারলে সন্তানকে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে না। ফলে গত এক সপ্তাহ থেকে বিদ্যালয়গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।
শুধু শিশুদের জন্যই নয়; আতঙ্ক রয়েছে বড়দের জন্যও। নগরীর ২৬নং ওয়ার্ড হরিণাফুলিয়ার বাসিন্দা নয়ন হাওলাদার বলেন, একটু রাত করে বাড়িতে ফিরলেই বউয়ের ঝাঁঝালো কথা শুনতে হয়। বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন থাকে দুশ্চিন্তায়। এই বুঝি তিনি (নয়ন) বিপদে পড়ল এমন আতঙ্কের কথা বলছেন স্বজনরা। ডেফুলিয়ার বাসিন্দা কোব্বাত আলী হাওলাদার জানান, তার স্ত্রী শুনেছেন ঘর থেকেও কল্লা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তাদের টিনের ঘর তাই নির্ঘুম রাত কাটে কোব্বাত হাওলাদারের স্ত্রীর। নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের ইন্দ্রকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, এ ধরনের গুজবে অভিভাবকরা স্বভাবতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তবে গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও অভিভাবকদের সংখ্যা বেড়েছে বলেও শিক্ষকরা উল্লেখ করেন। সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের ধর্মাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ হানিফ হাওলাদার জানান, গুজবটি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। সবার মধ্যেই বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ আতঙ্ক এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।
সূত্রমতে, গত শুক্রবার রাতে নগরীর ডেফুলিয়ার নুরু খান মাথায় সাজিতে ‘বড়া’ (বড়শি ) নিয়ে মাছ ধরতে বের হন। রাত ১২টার দিকে ভাঙ্গারপুল নামক স্থান দিয়ে যাবার সময় জানালা দিয়ে এক নারী তাকে দেখে ভয়ে ‘কল্লাকাটা, কল্লাকাটা’ বলে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় চারদিক থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে স্থানীয়রা তাকে (নুরু খান) ঘিরে ফেলে। ওই নারীর বক্তব্য ছিল, সাজি ভর্তি কল্লা। অবশেষে দেখা যায় বড়শি আর লোকটিও প্রতিবেশী। একাধিক অভিভাবকরা জানান, কোথায় নাকি কল্লা দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই সন্তানদের সঙ্গে স্কুলে যেতে হচ্ছে। কখনও একা পাঠালে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। তাদের দাবি, বিষয়টি গুজব হলেও সরকারের উচিত ভয় কাটানোর ব্যবস্থা করা।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। আমাদের কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ আসেনি। তবে কোন এলাকায় সন্দেহজনক নতুন লোক দেখলে নিকটস্থ পুলিশকে জানানোর জন্যও তিনি এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান করেন। বিষয়টি পুরোপুরি গুজব দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের ফেসবুক পেজে একাধিক স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন। অপরদিকে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান এ ধরনের আজগুবি গুজবে কান না দেয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।
Leave a Reply