সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ অপরাহ্ন
গলাচিপা সংবাদদাতা ॥ গলাচিপা উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামে একই পরিবারের চার সদস্য খুনের রহস্য গত ২২ মাসেও পুলিশ কোন কিনারা করতে পারেনি। এরমধ্যে তিন সদস্য খুনের ঘটনা ঘটেছে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। এ ঘটনার আরও ৬ মাস আগে খুন হয়েছে একই পরিবারের আরেক সদস্য। এসব খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দোষীদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। যদিও পুলিশ দাবি করেছে, শীঘ্রই সব খুনের রহস্য উন্মোচন হবে এবং প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়বে।
জানা গেছে, উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের ছৈলাবুনিয়া গ্রামে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট রাতে খুন হন ৬৫ বছরের ক্ষুদ্র কৃষক দেলোয়ার মোল্লা, ৫৫ বছর বয়সী তার স্ত্রী পারভীন বেগম এবং তাদের পালিত ১৫ বছরের মেয়ে কাজলী বেগম। তাদের এতটাই নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে, যা প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জীবনেও দেখেনি। পুলিশ ও কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, কাজলী বেগমের মাথা ছিল দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন। পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে পড়েছিল। তার লাশ বারান্দায় পড়েছিল। দেলোয়ার মোল্লার মাথা এমনভাবে কোপানো হয়েছে, যেন মুরগির মাংস কাটা হয়েছে।
মাথাজুড়ে অসংখ্য কোপ। পারভীন বেগমের শরীরেও অসংখ্য কোপের চিহ্ন ছিল। স্বামী-স্ত্রীর লাশ ঘরের মধ্যে চৌকির ওপরে ছিল। ওই বাড়িতে একটি মাত্র পরিবারই ছিল। যে কারণে লাশে পচন না ধরা পর্যন্ত আশপাশের কেউ ঘটনা সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতে পারেনি। দু’দিন পর পার্শ্ববর্তী বাড়ির গৃহবধূ হনুফা বেগম হাঁস খুঁজতে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে মশারির ভেতরে কোলাকুলি অবস্থায় রক্তমাখা লাশগুলো পড়ে থাকতে দেখেন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তীতে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয়, ঘটনার রাতে কাজলী বেগম ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এ ঘটনার ৬ মাস আগে একই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নিহত দেলোয়ার মোল্লার বড় ভাই ইদ্রিছ মোল্লার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে শফি মোল্লাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
শফি হত্যার পর তার বাবা ইদ্রিছ মোল্লা পরিবার নিয়ে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। ইদ্রিছ মোল্লা পরিবার নিয়ে রক্ষা পেলেও ছোট ভাই দেলোয়ার মোল্লা খুনীদের হাত থেকে রেহাই পান নি। পরিবারসহ তাকে হত্যা করা হয়।
তিন খুনের ২২ মাস এবং অপর একটি খুনের ২৮ মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ একটি খুনেরও রহস্য ভেদ করতে পারেনি। গ্রেফতার হয়নি অপরাধীদের কেউ। পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ট্রিপল মার্ডারের পর থেকে আকস্মিকভাবে ওই পরিবারেরই এক সদস্য রহস্যজনকভাবে অন্তর্ধান হয়েছে। তাকে আটকে পুলিশ এ যাবত বহুবার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই সে পুলিশের চোখে ধুলা দিতে সক্ষম হয়েছে। পলাতক ওই সদস্যের দুই স্ত্রী রয়েছে। তাদের সঙ্গে পলাতক ওই ব্যক্তি যোগাযোগ রাখছে কি না, তাও পুলিশ বের করতে পারেনি।
Leave a Reply