সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ সফল কৃষি উদ্যোক্তা ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আনলবুনিয়া গ্রামের বশির-শিরিন সুলতানা দম্পতি। কৃষি বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করে বশির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। তারা দুইজনেই উদ্যোগ নেন নিজস্ব জমিতে কিছু একটা করার।
যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে মুরগি ও মাছ চাষ দিয়ে প্রকল্প শুরু করেন। এরপর সফলতা আসতে শুরু করলে প্রকল্পের পরিধি বাড়তে বাড়তে এখন ১৮ লাখে পৌঁছেছে। বর্তমানে তাদের ৭ বিঘা জমি জুড়ে রয়েছে প্রকল্পটি।
ঝালকাঠি জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে মনোনীত হয়ে এ বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পুরস্কার লাভ করেছে প্রকল্পটি। কাঠালিয়ার এই এগ্রোফার্ম প্রকল্প পরিদর্শন করেন ডিসি মো. জোহর আলী।
শিরিন সুলতানা বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে ২০১৭ সালে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজস্ব ও ঋণ নিয়ে দেড় লাখ টাকা অর্থায়নে দেড় বিঘা জমিতে প্রাথমিকভাবে মুরগির খামার ও মাছ চাষ প্রকল্পের কাজ শুরু করি। তার লভ্যাংশ বাইরে ব্যয় না করে প্রকল্পে জোগান দিয়ে তিলে তিলে বড় করতে শুরু করি। বর্তমানে ৭ বিঘা জমিতে এ প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘মায়ের দোয়া মুরগি পালন, মৎস্য, ড্রাগন ও মাল্টা চাষ প্রকল্প।’
কাঠালিয়া উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, বশির-শিরিন সুলতানা দম্পতি এ এগ্রোফার্ম প্রকল্পে কমলা, লেবু, পেয়ারা, বরই, লিচু, বেদানা, রকমারি আম, কলাসহ নানা ফলের চাষ করে এলাকায় কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। শুধু ফলদ গাছই না, এখানে আছে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি শাক-সবজিও। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে মাছ উৎপাদনে অবদান রেখে চলেছেন।
তারা একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যদিকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছেন শতাধিক। প্রতিদিন ১০/১২ জন শ্রমিক-কর্মচারী এখানে কাজ করছেন। এ প্রকল্প থেকে প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধরাও অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়ে থাকেন।
প্রথমে নিজস্ব দেড় বিঘা জমিতে প্রকল্প শুরু করে এখন ৭ বিঘা জমিতে তাদের প্রকল্প বিস্তার করেছেন। জমির দুই তৃতীয়াংশ নিজস্ব সম্পত্তি এবং এক তৃতীয়াংশ লিজ নেয়া।
জেলা যুব উন্নয়ন উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কাঠালিয়া উপজেলার আনলবুনিয়া গ্রামের শিরিন সুলতানা যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৭ বিঘা জমিতে বহুমুখী এগ্রোফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে মাছ চাষ, মুরগির খামারসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছ রয়েছে। রয়েছে মৌসুমি বিভিন্ন শাক-সবজি চাষও। এ প্রকল্পে প্রতিদিন ১০/১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। যা দিয়ে একদিকে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অপরদিকে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
ঝালকাঠির ডিসি মো. জোহর আলী জানান, এখান থেকে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে। ভালো টমেটো হয়েছে। ক্ষেতে সবজি, পানিতে মাছ, খামারে মুরগি আছে। এখানে তারা ড্রাগন ফলের চাষও শুরু করেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলেই পরিকল্পনা নিয়ে এ প্রকল্পটি করেছেন। সার্বক্ষণিক ৫ জনের চাকরির ব্যবস্থা ছাড়াও আরো কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্য মানুষকেও চাকরি দিয়েছেন।
‘নিজে চাকরি নিবো না, অন্যকে চাকরি দিবো’ এটা বাস্তবায়ন ও উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। সরকারি চাকরির জন্য ঘুরে না বেড়িয়ে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে প্রকল্প শুরু করেছেন এবং স্বাবলম্বী হয়েছেন। বেকার যুবকরা এটা অনুসরণ করে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে উদ্যোক্তা হবেন, তারা স্বাবলম্বী হবেন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন ডিসি।
Leave a Reply