শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন
কুয়াকাটা থেকে কলাপাড়া প্রতিনিধি :
কুয়াকাটাগামী পর্যটক-দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষ মিনিবাস মালিক-শ্রমিকদের কাঝে জিম্মি হয়ে আছে। প্রায় যুগ ধরে কুয়াকাটা-কলাপাড়া-পটুয়াখালী-বরিশাল রুটের বাস শ্রমিক ও মালিকদের এমন জিম্মিদশা চলছে। বরিশাল থেকে ছেড়ে যাওয়া পটুয়াখালী, বাউফল, বরগুনা, আমতলী, গলাচিপা, তালতলীসহ সকল রুটের বাসে কুয়াকাটার যাত্রীদের তোলা হয়। কিন্তু নামিয়ে দেয়া হয় মাঝপথে। ফলে কুয়াকাটায় বাসে যাওয়া-আসায় এখন চরম ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। পর্যটকসহ যাত্রীরা নিজেরা কুয়াকাটার বাসটি শণাক্ত করবেন এমন সুযোগ নেই।
সকল বাসের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা লেখা স্টিকার লাগানো রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন কিংবা মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ পর্যটক-দর্শনার্থীকে এমন জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থী চরম নেতিবাচক ধারনা নিয়ে ফিরছে। তারা ভোগান্তির শিকার হয়ে হারিয়ে ফেলছে কুয়াকাটায় যাওয়ার আগ্রহ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল-পটুয়াখালী-ঝালকাঠী-কলাপাড়া-বরগুনার সকল বাসের সামনে লেখা রয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা। প্রতি ঘন্টায় বরিশাল রুপাতলী বাসটার্মিনাল থেকে কুয়াকাটা, কলাপাড়া,পটুয়াখালীর বাস ছেড়ে যাচ্ছে। একইভাবে বরগুনা, আমতলী, তালতলী, পটুয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, বাউফল, দুমকি, গলাচিপাসহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করছে। কুয়াকাটাগামী যাত্রীদেরকে অন্যরুটে চলাচলকারী শ্রমিকরা প্রতারণা করে কুয়াকাটার কথা বলে তাদের বাসে তোলে। পরবর্তীতে বাউফলগামী বাসের শ্রমিকরা লেবুখালী ফেরিঘাটে নামিয়ে দেয়। একইভাবে পটুয়াখালীর বাসশ্রমিকরা কুয়াকাটার যাত্রীদের পটুয়াখালী বাসস্ট্যান্ডে, বরগুনাগামী বাসশ্রমিকরা আমতলী শহরে নামিয়ে দেয়। ফলে এসব যাত্রীরা ফের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে কুয়াকাটাগামী সঠিক বাসটি পেলেও দ্বিতীয় দফায় টিকেট কেটে সিট পায় না। দাড়িয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ করে কলাপাড়া কিংবা কুয়াকাটায় পৌছতে হয়। বহু নারী পর্যটকরা পথিমধ্যে এমন প্রতারণার শিকার হয়ে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে। নিয়ম রয়েছে যখন যে রুটে বাস চলাচল করবে তখন ঠিক ওই বাসের সামনে ওই রুটের নাম লেখা স্টিকার থাকবে। যেমন বরিশাল-কুয়াকাটা, বরিশাল-পটুয়াখালী, বরিশাল-বরগুনা, বরিশাল-বাউফল, বরিশাল-গলাচিপা, বরিশাল-মির্জাগঞ্জ। কিন্তু সব রুটের বাসের সামনে স্থায়ীভাবে লেখা রয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা। ফলে যাত্রীরা প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে।
যাত্রী শাহানুর জানান, তিনি বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় যাচ্ছিলেন। কলাপাড়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ১৯০ টাকায় টিকেট করে বাসে ওঠেন। আমতলী যাওয়ার পরে তিনি বুঝতে পারলেন ওই বাসটি বরগুনায় যাবে। ২০ টাকা হাতে দিয়ে নামিয়ে দেয়। চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হন তিনি। একইভাবে এক মহিলা যাত্রীকে শিশু সন্তানসহ কুয়াকাটার কথা বলে পটুয়াখালী নিয়ে অন্য বাসে তুলে দেয়া হয়। তাকে দাঁড়িয়ে কুয়াকাটায় যেতে হচ্ছে। এমনকি আবার বরিশাল থেকে কুয়াকাটাগামী আসা বাসটি কলাপাড়ায় শেখ কামাল সেতুর সংযোগ সড়কে আধাঘন্টা থামিয়ে রাখা হয়। কুয়াকাটাগামী পর্যটকের সঙ্গে এমনভাবে প্রতারণা আর হয়রাণি করা হচ্ছে। একইভাবে কুয়াকাটা থেকে ফেরার পথের। পটুয়াখালী কিংবা অন্য রুটের বাসে বরিশালের কথা বলে যাত্রী তোলার পরে মাঝপথে নামিয়ে দেয়া হয়। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় আল-ইমরান নামের একটি বাস কলাপাড়ার পুরান বাসস্ট্যান্ড থেকে পটুয়াখালী ছেড়ে যায়। এবাসটির সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা লেখা বড় স্টিকার কেন। এর কোন সদুত্তর দেয়নি কাউন্টারে থাকা লোকজনসহ চালক হেল্পার। আবার মাত্র ফেরিবিহীন ৪৮ কিলোমিটার সড়ক কলাপাড়া থেকে পটুয়াখালী যেতে এদের সমযসীমা বেধে দেয়া আছে এক ঘন্টা ৩৫ মিনিট। যেখানে সর্বোচ্চ এক ঘন্টা লাগার কথা। বছরের পর বছর, এমনকি যুগ ধরে ্এমন জিম্মিদশা চলছে। শ্রমিকদের এমন হয়রাণীর প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের গালাগাল করা হয়।
লাঞ্ছিত করা হয়। এমনসব প্রতারণা নৈরাজ্য বন্ধে সাধারণ যাত্রীরা বহু দেন-দরবার করেছে কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকের নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দে বাসচলাচল নিশ্চিত করতে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে কুয়াকাটা ভ্রমনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে সবাই। একইভাবে কলাপাড়া থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার বাসটিতে লেখা থাকে বরিশাল-কুয়াকাটা। যেন নৈরাজ্যের শেষ নেই। শ্রমিকদের কাছে আপনি যেখানে যাওয়ার কথা বলবেন সেখানেই তার বাসটি যাবে বলে যাত্রীদের তোলা হয়।
নাগরিক উদ্যোগ কলাপাড়ার আহ্বায়ক নাসির তালুকদার জানান, কুয়াকাটার উন্নয়নে পর্যটকদের প্রথমে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে।
এব্যাপারে বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, বিষয়টি নিরসনে সমিতির সদস্যভুক্ত বাস মালিকদের নোটিসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পটুয়াখালী বাস মালিক সমতির নেতৃবৃন্দের বক্তব্য এটি থাকা উচিত নয়। যখন যে রুটে চলাচল করবে সেই রুটের স্টিকার লাগানো প্রয়োজন। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান বলেন, শীঘ্রই পর্যটকসহ যাত্রীদের এ দুর্ভোগ লাঘবে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে যাত্রীদের হয়রাণি রোধে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হয়েছে। মানা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক। তবে এক শ্রমিক নেতা জানান, বরিশালের স্ট্যান্ডে কুয়াকাটাগামী নির্দিষ্ট বুকিং কাউন্টার থেকে টিকেট কাটলে আর এ সমস্যা হবে না। তিনি এমন পরামর্শ দিলেন।
Leave a Reply