মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি: পিরোজপুরের কাউখালীতে নির্মাণের জন্য ফেলে রাখা ইটের খোয়া, বালু উড়ছে। সেই বালু ঢুকছে পথচারীদের নাকে-মুখে ও বাসা বাড়ির ভিতরে। রাস্তা খুঁড়ে ও একটি বিজ ভেঙ্গে মাটি খনন করে ফেলে রাখায় পানি জমে সেখানে এখন মশাদের পাকামাকড়ের বসবাস । এই দুরবস্থা কাউখালী উপজেলার চিড়াপাড়া কেন্দ্রীয় আলিম মাদ্রাসার সামনে গুচ্ছগ্রাম-ডুমজুরী সড়কের। ঠিকাদার কাজ শেষ না করায় সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে চার গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বেশি সমস্যা হচ্ছে কাউখালী কেন্দ্রীয় আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরে ও গুচ্ছগ্রাম ও আবাসনের মানুষদের।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চিরাপাড়া ইউনিয়নের পানঘর টল সেটের সামনে কালভার্ট থেকে কেন্দ্রীয় আলিম মাদ্রাসা সামনে থেকে গুচ্ছগ্রাম, আবাসন হয়ে ডুমজুড়ি গ্রাম পর্যন্ত ৯০০মিটার কার্পেটিং সড়ক এবং দুইটি বক্স-কালভার্ট নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (আইআরআইডিপি) আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই দরপত্র আহ্বান করে।
১কোটি ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৯শত ২৭ টাকায় কাজটি পায় ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৯ অক্টোবর ২০২৩ সালে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবর ২০২৩ সালে কাজ শেষ করার কথা।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ সড়ক নির্মাণের কাজ পেলেও কাজ করছেন কাউখালীর স্থানীয় এক বড় ঠিকাদারি। তিনি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা তো দূরের কথা এক বছর অতিবাহিত হতে কাজ ঠিক ভাবে শুরুই করতে পারিনি। উপরন্তু এই সময়ে শুধু গুচ্ছগ্রামের মসজিদের সামনের কালভার্ট নির্মাণ করার জন্য ছোট আয়রন ব্রিজটি ভেঙ্গে সেখানে মাটি খনন করে রেখে ফেলে রাখায় এক বছর অতিবাহিত হওয়ায় পানি জমে সেখানে ডেগু মশার প্রজনন সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার কার্পেটিং তো দূরের কথা পুরাতন রাস্তার ইট তুলে রাতের আঁধারে তা কে বা কাহারা অন্যত্র নিয়ে যায়।
ছড়িয়ে ফেলে মাটি খুঁড়ে সেখানে এখন ধুলোবালি সৃষ্টি হয়েছে এবং কালভার্ট নির্মাণের জন্য খনন করায় বিকল্প রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে না পারায় স্থানীয় বাসিন্দা, অসুস্থ লোকজনের চলাচলের জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়েছে । এতে চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম, উত্তর চিরপাড়া, আবাসন, ডুমজুড়ি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কাউখালী কেন্দ্রীয় আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমেদ অতি ক্ষোপের সহিত বলেন, আমাদের এই দুর্ভোগ থেকে আর কত বছর লাগবে, বাতাসে বালু উড়ে চোখ ও মুখে পড়ছে।
মাদ্রাসায় যাওয়ার আয়রন ব্রিজটার অবস্থা খুবই নাজুক, রাস্তা খুরে রাখার কারণে মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের জুতা হাতে নিয়েই চলতে হচ্ছে। ভ্যানচালক গুচ্ছগ্রামের সোলেমান ফরাজী বলেন, ‘এই রাস্তার ওপর দিয়ে মানসে ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। দায় ঠেইক্কা এহন মালামাল নিয়া যাইতে অয়।’ ঠিকাদার মাঝে মাঝে আয় আবার উদাউ হইয় যায়, জিগাইলে কয় কাম করমু। উত্তর চিরাপাড়ার বাসিন্দা ইলিয়াস হাওলাদার বলেন, সড়কের পাশে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবহুল গ্রাম আছে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
চিরাপারা-পারসাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাইকুজ্জামান মিন্টু বলেন, এক বছর ধরে কাজ ফেলে রাখায় এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা মানুষের চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে একাধিকবার অনুরোধ করেছি। এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় ঠিকাদারের পক্ষে বাস্তবায়ন করেন সঞ্জিত কুমার সাহা।
তিনি জানান, দুই-একদিনের মধ্যে কালর্ভাট এর কাজ শুরু করা হবে। এলজিইডি কাউখালী উপজেলার প্রকৌশলী মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। ঠিকাদারকে জরুরি ভিত্তিতে কাজটি করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি কিছুদিনের ভিতরে সড়কটির মেরামতে কাজ সমাপ্ত হয়ে যাবে।
Leave a Reply