শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন
বরিশালট্রিবিউন.কম: সারাদেশে কম নাব্যতাসম্পন্ন নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যেখানে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে; লাখ লাখ কোটি টাকা নদী খননে ব্যয় করছে সেখানে উল্টো পথে হাটছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পওর বিভাগ) বরিশালের কর্মকর্তারা। তারা একটি নদী মেরে ফেলে তার ওপর দিয়ে সড়ক নির্মানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নদীটির ওপর দিয়ে ক্রসড্যাম (সড়ক) নির্মানে একনেকে ১১ কোটি ৫২ লাখ টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। মেরে ফেলার তালিকায় থাকা ওই নদীটির নাম মাসকাটা নদী।
এই নদীটি মেরে ফেলা হলে পানির প্রবাহ কমে নিকটস্থ গনেশপুর/তেতুলীয়া নদীতে নতুন চর জেগে উঠে পায়রা সমুদ্র বন্দরের সাথে নৌ-চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের আরও কয়েকটি নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দিবে। প্রভাব পরবে আর্থ-সামাজিক জীবনে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে একটি নদীর জীবন-ইতিহাস। জানা গেছে, নৌ-রুটে চলাচলকারী পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ তীব্র আপত্তি জানালেও ‘একরোখাভাবে’ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মূলত, বরিশাল থেকে মেহেন্দীগঞ্জ, ভোলা, লক্ষ্মীপুর এমনকি বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে যাতায়াতের সহজ ও মৃতব্যয়ী রুট কীর্তনখোলা থেকে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে মাসকাটা নদী পার হয়ে কালাবদর, তেতুলিয়া ও মেঘনার নৌ-রুট। কিন্তু এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ন ও ভরা যৌবনা নদীর মধ্যে মাসকাটা নদীতে ক্রসড্যামের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণের আওতায় রয়েছে। সাধারণত, স্বাভাবিক গতি প্রবাহসম্পন্ন একটি নদী একেবারে বন্ধ করে দেওয়া আইন পরিপন্থি কাজ। কিন্তু বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবু সাঈদ বলেন, মাসকাটা মূল কোন নদী নয়। দুটি নদীর বর্ধিতাংশে এই নদীর সৃষ্টি। মাসকাটার নিজস্ব কোন ¯্রােত নেই। ফলে এর ওপর সড়ক নির্মাণ হলে তেমন কোন প্রভাব পরবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, যে কোন উন্নয়নমূলক কাজে কিছুটা ক্ষতিকর প্রভাব পরে। সেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা বিবেচ্য নয়।
আবু সাঈদ বলেন, বাংলাদেশের অনেক ইতিহাস অনেক সময়ে বদলে যায়। খেয়াল রাখতে হবে কোনটি ভালো-উন্নয়ন নাকি ইতিহাস? কাজের অগ্রগতির বিষয়ে বলেন, পরিবেশগত এ্যাসেসমেন্ট এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। শিঘ্রই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানান, বর্তমান পাতারহাট লঞ্চঘাট থেকে ঠিক তার বিপরীত দিকে জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মিতুয়া খেয়াঘাট ক্রসড্যাম সড়ক নির্মানের মাধ্যমে স্থলপথ সৃষ্টি করা হবে। ওদিকে মাসকাটা নদী থেকে যে নৌ-রুটটি ছিল সেই চ্যানেলটি পাল্টে আরও সাড়ে তিনঘন্টা ব্যয়ে নদী পথে ভোলা যেতে হবে বরিশাল থেকে নৌ পথের যাত্রীদের। এতে বাড়বে ব্যয় ও সময়-উভয়ই।
ওদিকে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, মাসকাটা নদীতে পাতারহাট লঞ্চঘাট ও মিতুয়া খেয়াঘাট বরাবর ক্রসড্যাম (সড়ক) বাঁধ নির্মাণ করা হলে বরিশাল থেকে ভোলা-ইলিশা ও মজুচৌধুরীরহাট অঞ্চলে নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এরমধ্যে রয়েছে, এমভি পারিজাত, এমভি সঞ্চিতা-২, এমভি দোয়েল পাখি, এমভি সাচনা, এমভি রাতুল-১, এমভি উপবন, এমভি উকূল, এমবি সুপারসনিক-৩, এমভি সুরভী-২ এবং ঢাকা থেকে ইলিশা-ভোলাগামী এমভি ফ্লোটিলা ও এমভি ইয়াদসহ বিআইডব্লিউটিসি’র সি-ট্রাক খিজির-৮। এছাড়াও ছোট ছোট অসংখ্য নৌ-যান রয়েছে। এই লঞ্চগুলো এরআগে সাহেবেরহাট খাল দিয়ে চলাচল করত। বর্তমানে সাহেবেরহাট খালের ওপর ব্রীজ নির্মান হওয়ায় এই লঞ্চগুলো ওই নৌরুটে চলাচল করতে পারে না। ফলে অল্প সময়ে ও অল্প জ¦ালানীতে পাতারহাট লঞ্চঘাট ও মিতুয়া খেয়াঘাটের মধ্যবর্তী মাসকাটা নদী দিয়ে চলাচল করে আসছে।
এ বিষয়ে (বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পওর বিভাগ, বরিশালের স্মারক নং-নিঃপ্রঃ/বরিশাল/নি-৬৫/৫২৩) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ দুইজন পরিবহন পরিদর্শক ও নৌসওপ বিভাগের একজন পরিদর্শক পাইলট কর্তৃক নৌ-পথটি পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনে তিন সদস্যের ওই টিম নৌ-রুটের এই চ্যানেলটি রক্ষার জন্য সুপারিশ করেছেন। পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো: আরেফিন বাদল বলেন, মাসকাটা নদীর ওপরে ক্রসড্যাম নির্মানের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসেছিলেন আবেদনের বিষয়ে। কিন্তু এখনো কেউ আবেদন করেনি। তিনি জানান, নদী দক্ষিণাঞ্চলের অর্শিবাদ স্বরুপ। পরিবেশের নূন্যতম ক্ষতি হবে এমন কোন কাজে পরিবেশ অধিদফতর পূর্বেও অনুমতি দেয়নি। বর্তমানেও দিবে বলে আমার মনে হয় না।
Leave a Reply