শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৮ অপরাহ্ন
সাগর আকন,বরগুনা প্রতিনিধিঃ
উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম জেলা বরগুনা। বরগুনা জেলার আমতলী-তালতলী, পাথরঘাটা, বামনা-বেতাগীসহ বরগুনা সদর উপজেলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর রস। এক সময়ে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামগঞ্জের মানুষরা খেজুর গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। খেজুর রসে তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার। খেজুর রস দিয়ে অল্প সময়ে তৈরি করা হতো বাটালি গুড়, ভীড় মিঠাসহ নানা রকমের মজার মজার খাবার সামগ্রী।
খেজুর গাছ কাটার সাথে নিয়োজিতদের এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় শিয়ালী অথবা গাছি। সময় বদলে যাওয়ার সাথে সাথে বদলাচ্ছে মানুষের সাদারণ জীবন-যাপন প্রণালী। হারিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি। অপসংস্কৃতির কাছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এখন জিম্মি। গ্রামের একটি প্রবাদ “আমরা ভাত-মাছে বাঙ্গালী”। এক সময় এটাই বাঙ্গালী জাতির বড় পরিচয় বলে আমাদেরকে মনে করিয়ে দিতো।
সে সময় ছিলো বাংলার নানা ঐতিহ্য, যেগুলো আমাদের গ্রাম বাংলাকে করেছিলো সমৃদ্ধ। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এখন গ্রামবাংলার বহু ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। এক সময় গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ আর গোলা ভরা ধান ছিলো। এসব কিছু হারিয়ে আজ শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। গত সিডর ও আয়লায় এবং এক শ্রেীণীর ইটভাটার মালিকরা ইট পোড়ার কাজে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় খেজুর গাছের সংকট দেখা দেয়।
ফলে এ অঞ্চলের খেজুর রস ও গুড় দুস্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। বরগুনা জেলার আমতলী-তালতলী, পাথরঘাটা, বামনা-বেতাগীসহ বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করত গাছিরা। গত ৯-১০ বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলাবায়ু পরিবর্তনের কারনে দক্ষিণাঞ্চলে খেজুর গাছের সংকট দেখা দেয়ায় রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে খেজুর রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামগঞ্জের মানুষ। কয়েক বছর আগেও শীত মৌসুমে খেজুর রসের তৈরি নানা প্ররাকার পিঠা-পায়েসসহ সুস্বাদু নবান্নের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে উৎসাহ ও আনন্দের মধ্যে নবান্নকে বরণ করত এ অঞ্চলের মানুষরা। এখন আর খেজুর রস না পাওয়ায় নবান্নের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ শীত মৌসুমে অতিথিদের রসের তৈরি পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করানোর প্রচলন এখন ভুলতে বসেছেন। গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ছোপখালী গ্রামের মোঃ সাইদুল ইসলাম রাজু জানান, গ্রামে এখন খেজুর গাছ না থাকায় শীতের আনন্দটাই হাড়িয়ে গেছে গ্রাম থেকে।
অন্য এক কৃষক সেরজন আলী মৃধা বলেন এখন আগের মত খেজুর গাছ না থাকায় পরের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। গাছের মালিককে সপ্তাহে তিন দিন রস দিয়ে বাকি চার দিন আমি নিয়ে বাজারে বিক্রি করে শ্রমের মূল্য হয় না। মৌসুমি রসের স্বাদ পেতে গাছ কাটা এখনো ছাড়তে পারিনি।
Leave a Reply