রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল কিনতে এসে না পেয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে সিংহভাগ ক্রেতাদের। চাহিদা বাড়লেও বরাদ্দ অর্ধেকে নেমে আসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। স্বরূপকাঠি পৌর সদরের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চাল না পেয়ে অনেককে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হয় প্রতিদিন।
সরেজমিনে ওই বিক্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ওই উপজেলায় চারজন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএস এর চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
দিন যত যাচ্ছে, ক্রেতাদের লাইন ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চাল বিক্রি করার কথা। কিন্তু সকাল ৮টার মধ্যেই বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ক্রেতাদের লম্বা লাইন দেখা যায়। ডিলাররা বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে না খুলতেই অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে চাল। তাই ক্রেতারা চাল পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে হুড়োহুড়ি ও নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন। প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে পুরুষ ক্রেতাদের তুলনায় নারী ক্রেতাদের সংখ্যা প্রায় দিগুণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বরূপকাঠি পৌর সদরে চারটি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হয়। চারজন ডিলার দুই টন করে মোট আট টন চাল বরাদ্দ পান। ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত দুই টন করে চাল বিক্রি হলেও বরাদ্দ কমায় ১৭ অক্টোবর থেকে অর্ধেক কমিয়ে এক টন করে মোট চার টন চাল বরাদ্ধ পাচ্ছেন ডিলাররা। ফলে আগের চেয়ে এখন অর্ধেক ক্রেতা চাল কিনতে পারছেন। আর ব্যানারে আটার কথা লেখা থাকলেও আটার বরাদ্দ না থাকায় তা বিক্রি হচ্ছে না শুরু থেকেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) উপজেলার পৌর শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংক রোডে ডিলার বেল্লাল হোসেনের ও জগন্নাথকাঠি চিড়ার মিল এলাকার ডিলার বাদল খাঁনের বিক্রয়কেন্দ্রে কথা হয় মাহমুদকাঠি এলাকার মজিবর রহমান, জয়নব বেগম ও কুড়িয়ানা এলাকার শংকরী হালদারসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। তারা জানান, যাওয়া-আসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন।
পৌরসভা ভবন সংলগ্ন ডিলার ফারুক হোসেনের বিক্রয়কেন্দ্রে কামারকাঠি, জলাবাড়ি, সোহাগদলসহ বিভিন্ন এলাকার এলাকার অন্তত ৪০ জন জানান, চাল না পেয়ে তারাও খালি হাতে ফিরেছেন। প্রতিদিন পৌর সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও বরাদ্ধ কমের কারণে চাল না নিয়েই হতাশ হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।
ডিলার বেল্লাল হোসেন ও বাদল খাঁন জানান, ওএমএস কার্যক্রমে চালের বরাদ্দ অর্ধেক করার কারণে অনেক ক্রেতাই চাল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। চাল দিতে না পারায় ক্রেতাদের তোপের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাদের। তবে আটার বরাদ্দটা আসলে পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিতে পারতেন বলে জানান তারা।
অপর দুই ডিলার মো. ফারুক হোসেন ও কাজী সরোয়ার হোসেন জানান, বরাদ্ধ কমলেও বিক্রয়খরচ কমেনি তাদের। পূর্বের ন্যায় লেবার বিল, পরিবহন খরচ ও বিক্রয়কর্মীর বেতন অপরিবর্তিত থাকায় এখন প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তৈয়বুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে চারটি ডিলার পয়েন্টে চারজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই ট্যাগ অফিসাররা প্রতিদিন বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিত থেকে বিক্রয়কার্য সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করেন। তবে ইদানিং চালের বরাদ্দ কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুব উদ্দিন মজুমদার জানান, বরাদ্দ যাই থাকুক না কেন, চাহিদা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার যদি আবার বরাদ্ধ বাড়ায় তাহলে এ উপজেলায়ও বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে। সুত্র,কালের কন্ঠ
Leave a Reply