সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ রাজধানীর গুলশানে বিলাসবহুল ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিছুদিন আগে। আদালতে চলছে তার বিচার। এবার পাপিয়ার অসামাজিক কার্যকলাপে সহায়তা করার অভিযোগে হোটেল ওয়েস্টিনের তিন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ। নাম না প্রকাশের শর্তে একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বহিষ্কৃতদের নাম পরিচয়ও জানাতে চাননি তারা। সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ তিনজনকে চাকরিচ্যুত করে। তবে এই বিষয়ে হোটেলটির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
জালটাকা, অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীকে। ২৩ তলাবিশিষ্ট ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের লেভেল-২২ এ ১ হাজার ৪১১ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট। সেখানে বসে নিজের সাম্রাজ্য চালাতেন বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। মাসের পর মাস হোটেলটির প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ভাটা নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতেন তিনি। সেখানে আসতেন সরকারি বিভিন্ন আমলা, রাজনীতিবিদ ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
হোটেল কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে দীর্ঘদিন এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে বলছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ পাঁচ তারকা এই হোটেলে বোর্ডারদের প্রতিদিনকার তালিকা সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো তা জমা দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পাপিয়া থেকে তথ্য বের করে কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এত বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছেন তিনি তা নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাপিয়ার পাপকাণ্ডের বিস্তৃত রাজ্যের অনেকটা জুড়েই রয়েছে রাজধানী ঢাকার গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিন। পাপিয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের অন্তত পাঁচটি পাপ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ধরা পড়েছে।
ওয়েস্টিনে পাপিয়া ১২৯ দিন ছিলেন। গত বছরের ১৩ অক্টোবর পাপিয়া প্রথম ওয়েস্টিনে সাধারণ চারটি রুম বুক করেন। ওই চারটি রুমের একটিতে ছিলেন পাপিয়া, একটিতে তার স্বামী সুমন এবং বাকি দুটিতে ছিল তার বডিগার্ডসহ কেএমজির ক্যাডাররা। ১৫ অক্টোবরে পর প্রেসিডেনশিয়াল রুমে চলে যান। ওই রুমগুলোতে থাকা বাবদ ওই সময়ে পাপিয়া প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ওয়েস্টিনকে ক্যাশ পরিশোধ করেছেন। এছাড়া ওয়েস্টিনের বার এবং সুইমিং পুল ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন পাপিয়া।
প্রতিদিনই রাত ১ টার পর হোটেল ওয়েস্টিনের ২৩ তলার বারে নাচের আসর জামাতেন পাপিয়া। সেখানে মদ্য পানের সঙ্গে উদ্যাম নৃত্য এবং নানারকম অপকর্মে মত্ত থাকতেন পাপিয়ার অতিথিরা। ওই ১২৯ দিনে এসব সার্ভিস প্রদানের কারণে ওয়েস্টিনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের পাপিয়া প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার টাকা টিপস বা বকশিস হিসেবে দিতেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, প্রথমত, ১২৯ দিনে পাপিয়ার সেই স্বর্গরাজ্যের অবস্থান করেছে তার কোনো নথি, তথ্য-উপাত্ত ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করেনি। ওই সাড়ে চার মাসে পাপিয়ার স্যূটে যেসব ‘এসকট’ অবাধে যাতায়াত করত তাদের নাম-পরিচয় উল্লেখ নেই ওয়েস্টিনের খাতায়। এছাড়া পাপিয়ার আমন্ত্রণে তার প্রেসিডেনশিয়াল স্যূটে যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি আসতেন তাদের নথিও রাখেনি ওয়েস্টিন। একটা পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য এ বিষয়টি একটি গর্হিত অপরাধ।
Leave a Reply