রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন
মাসুদ রানা,স্টাফ রিপোর্টর: খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া পারাপারের খেয়া ঘাটের অবস্থা খুবই নাজুক। এতে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা না থাকায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তাই খুটাখালি (বাজুয়া-দিগরাজ) খেয়াঘাট সংস্কার করে জনদুর্ভোগ কমানোর দাবি জানিয়ে ১৩ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘দ্য ভয়েস অফ দাকোপ’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
জানা যায়, দাকোপ ও বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সঙ্গে সংযোগ হিসেবে পশুর নদের ওপর খেয়াঘাটটি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পশুর নদের পারাপারে এ খেয়াঘাটটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে খেয়াঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় পারাপারের উপযোগী নয়। কারণ খেয়াঘাটটি আর্ধেকেরও বেশি কাদামাটিতে প্লাবিত। এছাড়া বেড়িবাঁধ থেকে নদীর ভেতরে যেটুকু বাঁশের তৈরি চালা আছে তা দিয়ে চলাচলে অনুপযোগি।
খুটাখালির ওই খেয়াঘাট দ্রুত মেরামত ও চরম জনদুর্ভোগ নিরসন করতে ঘাটেই অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মানষ মুকুল রায়, প্রধান শিক্ষক সুকুমার মন্ডল, শিক্ষক বিশ^জিৎ দে, সমাজসেবক অরুণ দাশ, ইউপি সদস্য প্রদীপ সরদার, সাবেক ছাত্রনেতা সংগ্রাম মন্ডল, সমাজসেবক সত্যজিৎ গাইন, প্রভাষক নিত্যানন্দ সরদার, সংবাদকর্মী পাপ্পু সাহা, দ্য ভয়েস অফ দাকোপের সহসভাপতি সমিত রায়, সাধারণ সম্পাদক বিকাশ দাস, মিজানুর রহমান, তপু সরকার, সোহাগ দাশ, তাপস মহালদার, তবিয়াজ সরকার, নিতাই জোয়াদ্দার, জয়দ্রত বিশ্বাস, প্রসেন রায়, সাধন আচার্য্যসহ আরও অনেকে। এছাড়াও অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় দুই শতাধিক মানুষ।
মানববন্ধনে অংশকারিরা বলেন, সরকার এই খেয়াঘাট থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পায়। খুলনা জেলা পরিষদ ও বিভাগীয় প্রশাসন থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে ইজারাদাররা এই ঘাট ইজারা নেন। তারা বলেন, জোয়ারের সময় কম কষ্টে পার হওয়া গেলেও ভাটার সময় নদী পার হওয়া খুবই কষ্টকর। জোয়ারের সময় নদীর পানি বেড়িবাঁধের পাশে আসার কারণে খেয়ার ইঞ্জিনচালিত নৌকা বেড়িবাঁধের পাশে আনা সম্ভব হলেও ভাটার সময় পানি নদীর নীচে নেমে গিয়ে চর বেরিয়ে পড়ে। এ সময় খেয়ার ইঞ্জিনচালিত নৌকা বেড়িবাঁধ থেকে অনেক ভেতরে নদীতে অবস্থান করায় পারাপারের মানুষগুলোকে কাদাপানিতে ভিজে খেয়া নৌকায় উঠতে হয়।
তারা আরও বলেন, অতিরিক্ত টোলের টাকা আদায় না করে নির্মাণ করা পাশের পাকা ঘাটের সিড়িটি নদীর দিকে আরও সম্প্রসার করে ব্যবহৃত করার অনুমতি দেয়া হোক। অংশ গ্রহনকারিরা বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে ঘাটটির সংস্কার ও জনদুর্ভোগ নিরসনের দাবি জানান।
জোয়ারের অপেক্ষায় খেয়াঘাটে বসে ছিলেন মোংলা আজিজ ভাট্রি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিরেন্দ্রনাথ মৃধা। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার কারণে মোটরসাইকেলই দুই পারের মানুষের একমাত্র চলাচলের মাধ্যম। কিন্তু খেয়াঘাট দিয়ে মোটরসাইকেল পার করা তো দূরের কথা, মানুষ পার করা আরও কঠিন ব্যাপার। নদীতে জোয়ার হলে এক’ শ টাকার বিনিময়ে তিন থেকে চারজন লোক উঁচু করে মোটরসাইকেল খেয়ার নৌকায় তুলতে হয়। আবার ঘাটে নিলেও সব সময় অতিরিক্ত লোক থাকেনা, তার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল।
লাউডোব ইউপি চেয়ারম্যান সরোজিৎ কুমার রায় জানান, খেয়া ঘাটটির অবস্থা খুবই নাজুক। পারাপারে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। কাঁচা হওয়ার কারণে নদী পার হতে সাধারণ মানুষের খুব ভোগান্তি হচ্ছে। সবচেয়ে ভাটার সময় পার করতে খুব কষ্ট হয়। তিনি আরও জানান, এই খেয়াঘাটে লোক নামার সময় মারাত্মকভাবে আহত হয়।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত ঘাট দিয়ে লোক ও মোটরসাইকেল ওঠানামা করতে খুবই অসুবিধা হয়।ঘাট নির্মাণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জানান, খেয়াঘাট নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। সর্বশেষ উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা জানা নেই।
Leave a Reply