বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
শামীম হাসান:যাদের ফ্লোটিং মার্কেট বা ‘ভাসমান হাট’ নিয়ে আগ্রহ রয়েছে, তারা তা দেখতে চীন, মালদ্বীপ কিংবা থাইল্যান্ডে পর্যন্ত পাড়ি জমান। কিন্তু তারা হয়তো দেশের ভেতরেই যে চমৎকার ভাসমান মার্কেট আছে তার খোঁজও রাখেন না। তাই তারা কেবল দূরের দেশের ছবি দেখে হা-পিত্যেস করেন। তাদের জন্য সুখবর।তারা চলে আসতে পারেন হালের ক্রেজ ব্যাক ওয়াটার বরিশাল, পিরোজপুর জেলায় জলের স্বর্গরাজ্যে।
বর্ষা ও শীতের সময়টায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাণচাঞ্চল্য অনেকটাই বেড়ে যায় দক্ষিণের ফ্লোটিং মার্কেটগুলোকে ঘিরে। তাই নিজেকে মুহুর্তেই হারিয়ে ফেলতে পারেন অপরিসীম স্বর্গীয় সৌন্দর্যে।
‘ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল’-এ কথা হরামেশা সবাই শুনে থাকেন। কিন্তু নিজ চোখ না দেখলে বোঝা যাবে না এই নদী-খালের মর্মকথা। নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করা এসব খালে বর্ষার মৌসুমের পাশাপাশি শীতকালেও থাকে পানিপ্রবাহ।
বয়ে চলা নদী আর খালের দুই পাশের কোথাও হাট-বাজার, কোথায় বসতি আবার কোথাও আবাদী ফসলি জমি আর সবুজ গাছপালা দেখলে মনে হবে সবকিছুই ছবির মতো সাজানো।
পানিপ্রধান অঞ্চল বলেই দখিনের জনপদগুলোতে নৌকার ভূমিকা অপরিসীম। আবার হালের পরিবর্তনের সাথে সাথে সে নৌকায় বৈঠার বদলে লেগেছে ইঞ্জিনের ছোয়া। তবে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরের নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা, মোনোহারপুর , পদ্বডুবী , স্কুলের হাট ও বরিশালের বানারীপাড়ার সদর উপজেলা, বিশারকান্দির জামভিটা , চৌমোহনা , উজিরপুর উপজেলার হারতা এলাকায় ঘুরলে দেখা যাবে শান্ত জলে মানুষের জীবন-জীবিকায় বৈঠার নৌকার ভূমিকা কতটা প্রবল। আর এসব এলাকায়ই ব্যবসা-বাণিজ্যের বৃহৎ অংশ ঘটে জলে বসে। তাই সময়ের সাথে সাথে বরিশাল, পিরোজপুর গড়ে উঠেছে এসব ভাসমান হাট-বাজার।
জেলার এসব হাট মূলত খালের একটি মোহনায় বসে। সারাবছর ধরে নির্ধারিত দিনে চলা এ হাট নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বেশি জমজমাট থাকলেও সারা বছর চালু থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ হাটে ক্রেতা(পাইকার) ও বিক্রেতা (চাষী) সবাই খালের মধ্যে নৌকা নিয়ে চলাচল করে। পণ্য পছন্দ হলেই দর ঠিক রেখে কিনে ফেলেন পাইকাররা। এইভাবে পিরোজপুর জেলার বৈঠাকাটার হাট বসে প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার , মোনোহারপুরের হাট বসে সোম ও শুক্রবার , পদ্বডুবীর হাট বসে বৃহস্পতিবার , স্কুলের হাট , চৌমোহোনা ও হারতা হাট বসে রবিবার ও বুধবার , জাম্ভিটার হাট বসে শনিবার ও মঙ্গলবার । এসব বাজারে মৌসুমী ফসল, যেমন-শাক-সবজি, লেবু, মরিচ, কচু, ডাব, মিষ্টি কুমড়া, কলা, আমড়া, করল্লাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও স্থানীয় মানুষজন তাদের উৎপাদিত শাকসবজি নৌকায় করে নিয়ে এসে নৌকায় করেই বিক্রি করে থাকে। সেই নব পণ্য পাইকাররা কিনে সড়ক নয়তো নৌ-পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।
এদিকে শনিবার ও মঙ্গলবার বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদী ঘিরে বসে ধান-চালের ভাসমান হাট। যেখানে দেশীয় মোটা চালসহ নানান প্রজাতির চাল ও ধান পাওয়া যায়। তবে সকাল ৮টার পরে জমজমাট হয় এ হাট।
এবার আসা যাক কিভাবে যাবেন এসব জায়গায়। ঢাকা থেকে বরিশাল কিংবা বানারীপাড়া-স্বরুপকাঠিতে লঞ্চে করে আসতে হবে। তবে এখন পূবালী এবং তরীকা লঞ্চে করে ঢাকা থেকে সরাসরি বৈঠাকাটা আসতে পারবেন। তবে বাসে করেও আসা যাবে। বরিশাল থেকে সড়কপথে বানাড়ীপারা এখন বাস ও ভাড়ায়-চালিতে মহীন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে বৈঠাকাটা, জাম্ভিটা, বিশারকান্দির চৌমোহোনা আসতে পারবেন। আবার অল্প ভাড়ায় ঘোরার জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকাও রয়েছে যাতে করে আপনি আসেপাসের অন্য বাজারগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
আর বানারীপাড়ায় কিংবা উজিরপুরের হারতার ভাসমান হাট দেখতে হলে বরিশাল থেকে সরাসরি সড়কপথে বাসযোগে যাওয়া যাবে। তবে দল বেঁধে এলে ভ্রমণ-খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
Leave a Reply