মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জলোচ্ছাসে বলেশ্বর নদ তীরবর্তী বড়মাছুয়া মোহনা বেড়িবাাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে উল্লেখিত এলাকার বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট বাজার ও স্টিমারঘাটসহ বাজার বসতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, কয়েকদফা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট ও স্টিমার ঘাট বাজার এলাকা দোকানপাট ও বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে। গত ২৫ বছর ধরে অব্যহত এ ভাঙনে বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট ও স্টিমার ঘাট এলাকার দুইশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বসতি নদিগর্ভে বিলীন হয়েছে। স্টিমারঘাট যাত্রী বিশ্রামাগার ভবন, পাকা মসজিদ, দোকানপাট বিলীন হওয়ায় স্টিমারঘাট ও বাজারের এখন বিপন্ন অবস্থা।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. মাইনুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জলোচ্ছাসের পর ভাঙনের তীব্রতা আরো বৃদ্বি পেয়েছে। বর্তমানে বড়মাছুয়া মোহনার বেড়িবাঁধটি হুমকির মুখে পড়ায় এখানকার গ্রামের বসতির মানুষজন চরম আতঙ্কে রয়েছে। আম্ফানে স্টিমারঘাটের পণ্টুন বিচ্ছিন্ন থাকায় অদ্যবধি স্টিমার সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। স্টিমারঘাটটি মেরামত না করায় ফলে নৌযাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
সম্প্রতি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফাারুক পরিদর্শনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ উন্নয়ন কাজ দ্রুত শুরু করা না বড়মাছুয়ার লঞ্চঘাট ও স্টিমার ঘাট সম্পূর্ণ বিলীনের আশংকা দেখা দিয়ে। এতে নদী তীরবর্তী এলকার কয়েক গ্রামের মানুষ চরম আতংকের মধ্যে রয়েছেন।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঠবাড়িয়ারর বলেশ্বর নদের ভাঙন কবলিত ৫টি পয়েন্টের অন্তত ৮.২ কিলোমিটার এলাকায় কার্যকর বাঁধ ও ব্লক নির্মাণের একটি সার্ভে প্রতিবেদন কাজ চলমান। এতে ৭২৪ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প প্রস্তবনা পাঠানো হবে। তবে বড়মাছু লঞ্চঘাট বাজার হতে স্টিমারঘাট বাজার অবধি সাময়িক মেরামতের একটি প্রকল্প প্রস্তবনা পাঠানো হয়েছে যা অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সম্প্রতি বড়মাছুয়া ভাঙন কবলিত বেড়িবাাঁধ ঘুরে দেখা গেছে, বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট বাজারের বেড়িবাধেঁর অর্ধেক অংশ বিলীন হয়ে গেছে। এতে মোহনা লাগোয়া লঞ্চঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুতে খুঁটি হুমকির মুখে রয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বড়মাছুয়া বাজার থেকে কাটাখাল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমটিার এলাকায় এখন ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে।
বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট বাজারের মৎস্য আড়তদার ফারুক তালুকদার জানান, টানা ২৫ বছর ধরে বড়মাছুয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ভাঙন চললেও আজ অবদি ভাঙন রোধে কার্যকার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভাঙনে লঞ্চঘাট যাত্রী ছাউনি দুই শতাধিক দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে দ্রুত বেড়িবাঁধ ও ব্লক নির্মাণ অতি জরুরি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কাইয়ুম হোসেন জানান, ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বড়মাছুয়া স্টিমার ঘাট ও বাজারের বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতিসহ ইতিমধ্যে একটি পাকা মসজিদ ও যাত্রী ছাউনি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙনের তীব্রতা এত বেশী যে স্টিমার ঘাট দোকান পাট সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার পথে। বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট বাজার থেকে কাটাখালী দুই কিলোমিটার ব্লক নির্মাণ জরুরি।
এ বিষয় বড়মাছুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাছির হাওলাদার জানান, বলেশ্বর নদের ভাঙনে বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট বাজার ও স্টিমার এলাকা এখন বিলীনের দিকে। ভাঙনে বেড়িবাঁধ এখন হুমকীর মুখে। ইতিমধ্যে জমি বসতি আর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনে বিপন্ন লঞ্চঘাট ও স্টিমারঘার বাজার দুটি ভাঙনরোধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে কোনো ফল পাচ্ছে না। বড়মাছুয়া বেড়িবাঁধের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীতীরে ব্লক নির্মাণ জরুরি।
এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বালী বলেন, ভাঙন কবলিত বলেশ্বরের বড় মাছুয়া মোহনা সরেজমিনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি পরিদর্শন করেছেন। ওই স্থানে ভাঙন রোধে ব্লক নির্মাণ করাও জরুরি। বলেশ্বরের ভাঙনরোধে অন্তত ৮.২ কিলোমিটার অংশে বাঁধ ও ব্লক নির্মাণের জন্য বিষয়ে একটি সার্ভে প্রতিবেদন প্রস্তুতির কাজ চলছে। প্রকল্প অনুমোদন পরবর্তী নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
Leave a Reply