শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নৌ-পথ। প্রতিনিয়ত রাজধানী শহর ঢাকা ও অভ্যন্তরীণ জেলাগুলোতে নৌ-পথে চলাচল করে হাজার হাজার যাত্রী। নৌ-পথে চলাচল করতে হলে সকল যাত্রীকেই বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী বরিশাল লঞ্চঘাট দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। লঞ্চে চরার উদ্দেশ্যে লঞ্চঘাটে ঢুকতে হলে সকল যাত্রীকে নিতে হয় ঘাট টিকিট। আর এই ঘাট টিকিট থেকেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দায়ীত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যার ফলে মাসে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসকল বিষয় সকলের চোখের সামনে ঘটলেও নিশ্চুপ রয়েছে কর্তৃপক্ষ। কেউ অভিযোগ করলে তারা প্রমাণ চেয়ে দায় এড়িয়ে যান। সূত্র মতে, বিশেষ কোনো দিবস ব্যতীত প্রতিদিন বরিশাল লঞ্চঘাটে ঢোকার জন্য প্রায় ২০ হাজার লোক টিকিট সংগ্রহ করে। যদিও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লোক লঞ্চঘাটে ঢোকার জন্য টিকিট সংগ্রহ করে। মূলত বাকি টিকিটগুলো নিয়েই চলে মাসে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য। এ টিকিট বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত।
যার ফলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। লঞ্চঘাটে ঢোকার জন্য যে টিকিটটি সংগ্রহ করতে হয় তার মূল্য ৫ টাকা। পাঠক, প্রতিদিন যদি ১০ থেকে ১২ হাজার লোকের টিকিট চুরি করা হয় তাহলে কত টাকা চুরি করে তা আপনারাই বোঝেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চঘাটে প্রবেশ করার জন্য প্রতিজন যাত্রীই কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে। নিয়মানুযায়ী টিকিট সংগ্রহ করে তা কাউন্টারের সামনে দায়ীত্বরত শুল্ক প্রহরীদের কাছে দিয়ে ঘাটের ভিতরে প্রবেশ করবে। শুল্ক প্রহরীরা তা সাথে সাথে ছিঁড়ে ফেলে দিবেন। কিন্তু শুল্ক প্রহরীরা অর্ধেক টিকিট ছিঁড়লেও বাকি টিকিটগুলো না ছিঁড়ে তা পকেটে রেখে দেন। পরে টিকিটগুলো আবার কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা শুল্ক আদায়কারীদের কাছে দিয়ে পুনরায় যাত্রীদের কাছে বিক্রি করেন। যার ফলে সরকারি রাজস্ব খাতে টিকিট বিক্রির অর্ধেক টাকাও জমা হয় না। মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) টিকিট না ছিঁড়ে পকেটে রেখে দেয়ার পরে আবার তা কাউন্টারে দিয়ে বিক্রি করার একটি দৃশ্য দেখে ভিডিও ধারণ করে রেখেছেন এই প্রতিবেদক। দৃশ্যে দেখা গেছে, একতলা লঞ্চঘাটে প্রবেশের টিকিট না ছিঁড়ে পকেটে রাখেন দায়ীত্বে থাকা শুল্ক প্রহরী মিন্টু লাল মালি। পরে তা কাউন্টারের দায়ীত্বে থাকা শুল্ক আদায়কারী কামাল হোসেনের কাছে দিয়ে পুনরায় বিক্রি করছেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকার লঞ্চঘাটের প্রবেশ পথে টিকিট কাউন্টারগুলোতেও। ২ নং কাউন্টারের দায়ীত্বে থাকা শুল্ক প্রহরী মোঃ খলিলুর রহমান টার্মিনালে ঢোকার প্রবেশের অর্ধেক টিকিট ছিঁড়লেও বাকি টিকিটগুলো না ছিঁড়ে তা পকেটে রেখে কাউন্টারের দায়ীত্বে থাকা শুল্ক আদায়কারী সালাউদ্দিনের কাছে দিয়ে পুনরায় বিক্রি করা হয়।
৩ নম্বর গেটের দায়ীত্বে থাকা শুল্ক প্রহরী মিন্টু লালও একই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সব টিকিট না ছিঁড়ে প্রায় অর্ধেক টিকিট পকেটে রেখে তা শুল্ক আদায়কারী মোঃ কাদের’র কাছে দিয়ে তা পুনরায় বিক্রি করছেন। অধিকাংশ টিকিট না ছিঁড়ে পকেটে রাখা এবং পরে তা কাউন্টারে দিয়ে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে দায়ীত্বরত কেউই কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি। বরং ‘‘আমাদের ভুল হয়ে গেছে, আর এমন করবো না” -বলে প্রথম বারের মত মাপ করে দেয়ার অনুরোধ করেন সবাই। একই টিকিট বার বার বিক্রি করার কারণে প্রতিদিন সরকারে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেন তারা। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিলে মাসে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব হারায় সরকার। টিকিট না ছিঁড়ে পকেটে রেখে পুনরায় তা বিক্রি করার বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে গেলে প্রথমেই তিনি এ বিষয়ে প্রমাণের কথা বলেন। পরে প্রমাণস্বরূপ তাকে একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হলে তাৎক্ষণিক একতলা লঞ্চঘাটের দায়িত্বে থাকা শুল্ক প্রহরী মিন্টু লাল মালিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেন। পরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ৫ জনকে বদলি করা হয়। তার পরেও এদের দুর্নীতি থামানো যায়না। যারা এ সকল কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
Leave a Reply