শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন
মো. জসিম উদ্দিন সিকদার, আনোয়ার হোসেন মনোয়ার ও মজিবুল হক কিসলু, তালতলী
বরগুনা:
বরগুনার তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি (ল্যান্ড) ফারজানা রহমানের খামখেয়ালিপনা ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী। গত ছয় মাসে একটিও মিউটিশন করেননি তিনি।
এসি (ল্যান্ড) কার্যালয়কে ‘ম্যানেজ’ করতে পারলেই ‘লাল ফিতার ফাইল’ দ্রুত আলোর মুখ দেখে, নতুবা মাসের পর মাস ফাইলের সুরাহা হয় না। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন এসি ল্যান্ড ফারজানা রহমানের খুঁটির জোর কোথায়? জানা গেছে, চলতি বছরের ২ ফেব্র“য়ারি ফারজানা রহমান তালতলীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এরপরই ভূমি প্রশাসনের দায়িত্ব পান তিনি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তিনি দায়িত্বে আসার পর থেকেই ভূমি অফিসের সার্বিক কার্যক্রমে একরকম স্থবিরতা নেমে আসে। এমন পরিস্থিতির জন্য তার খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করেছেন এই অফিসের একাধিক কর্মচারী। তাদের অভিযোগ, কোনো কাজের যাবতীয় কাগজপত্র সম্পন্ন করে তার কাছে উপস্থাপন করলেও দিনের পর দিন ফাইল তার টেবিলে পড়ে থাকে। ওই টেবিল থেকে ফাইল নড়ে না।
তার খামখেয়ালিপনার কারণে অর্জিত হচ্ছে না বর্তমান সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রম। এসি ল্যান্ড ফারজানা রহমান নিয়মিত অফিস না করায় এসব ফাইল নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এতে জমি ক্রয়-বিক্রয় না হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
এছাড়া প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করে একাধিক ভুক্তভোগী যুগান্তরের কাছে বলেন, এসি ল্যান্ড দীর্ঘদিন ফাইলে স্বাক্ষর না করায় তারা জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না। যমুনা গ্রুপ, চীনা কোম্পানি আইসোটেকসহ বিভিন্ন কোম্পানি ও সাধারণ মানুষের খতিয়ানের নামজারি, মিস কেস, হাল দাখিলার শত শত ফাইল ভূমি অফিসে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে বন্ধি আছে।
এতে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে দ্রুত সরকারের উপরমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
কলাপাড়া উপজেলার গামুরবুনিয়া গ্রামের আব্বাস তালুকদার বলেন, কচুপাত্রা মৌজায় ক্রয়কৃত ৬৬ শতাংশ জমি মিউটিশন করার জন্য চার মাস আগে প্রধান অফিস সহকারী বাসুদেব ঘোষের কাছে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দেই। এক মাসের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও চার মাসেও তিনি দিতে পারেননি। আজ, কাল দেব- এ বলে ঘুরাতে থাকে।
শারিকখালী ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামের আবদুল জব্বার ফকির যুগান্তরকে বলেন, ‘খতিয়ানের সহিমোহরের জন্য তিন মাস আগে অফিস সহকারী মোশাররফ মিয়ার কাছে এক হাজার পাঁচ শত টাকা দিয়েছি; কিন্তু এখনও সহিমোহর দেয়নি। নানা অজুহাতে ঘুরাচ্ছে। ৮ দিন আগে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমাকে জানিয়ে দেয় ইউএনও স্যারের টেবিলে ফাইল রয়েছে, স্বাক্ষর হলেই পাবেন।’
পাজড়াভাঙ্গা গ্রামের হারুন অর রশিদ মুসল্লি জানান, এক একর ২৫ শতাংশ জমির নামজারি করার জন্য ভূমি অফিসের সহকারীর কাছে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও আজও পাইনি।
তালতলী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের আলি আজিম ফরাজী জানান, তালতলী ভূমি অফিস একটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সব মানুষ ওই অফিসের কাছে জিম্মি। কেউ অফিসের বিরুদ্ধে কথা বললেই বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে হেনস্তা করে আসছে। তিনি আরও জানান, অফিসের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর যোগসাজশে নিশানবাড়িয়া মৌজার সরকারি খাস খতিয়ানের দরিদ্রদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়া প্রায় একশ’ একর জমি জাল-জালিয়াতি করে অন্যের নামে রেকর্ড করে বিক্রি করে দিয়েছে।
যমুনা গ্রুপের ভূমি ক্রয় প্রকল্পের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মাহবুবুল মাওলা বলেন, যমুনা আয়রন অ্যান্ড স্টিল মিলের জন্য ক্রয়কৃত জমির মিউটিশন করার জন্য ৭-৮ মাস আগে তালতলী এসি ল্যান্ড অফিসে জমা দেই। যাবতীয় কাগজপত্র সঠিক থাকলেও নানা অজুহাতে এসি ল্যান্ড ফারজানা রহমান ফাইলে স্বাক্ষর করছেন না।
জানতে চাইলে তালতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী বাসুদেব ঘোষ টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, এসি ল্যান্ড ফাইলে স্বাক্ষর না করায় সময়মতো ভুক্তভোগীদের জমির কাগজপত্র দিতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা রহমান সোমবার দুপুরে টেলিফোনে বলেন‘এ বিষয়ে আমি কোনো মতামত দেব না।’
Leave a Reply