সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ একযুগ পেরিয়ে গেলেও ঘূর্ণিঝড় সিডরে ভেঙে পড়া ঝালকাঠির বিভিন্নস্থানে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলো সংস্কার কিংবা নতুন করে নির্মাণ কোনটাই করা হয়নি। ভেঙে পড়া চারটি সেতুতে বাঁশ ও সুপারি গাছ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি। ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ ৪৭ জন। ভেঙে যায় শতাধিক সেতু ও কালভার্ট। উপড়ে পড়ে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ। সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় কয়েকটি সড়ক সংস্কার করা হলেও একযুগ পেরিয়ে গেলেও সিডরে ভেঙে পড়া ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলার চারটি সেতু সংস্কার কিংবা নতুন করে নির্মাণ কোনটাই করা হয়নি। এনিয়ে ১৩ বছর ধরে ক্ষোভ জমে আছে গ্রামবাসীদের মনে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝালকাঠির গুরুত্বপূর্ণ ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন সেতু, সরমহল পুনিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতু ও সরমহল হাসেমিয়া মোজাহেদীয়া দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। সেতুটিগুলো দেবে গিয়ে ওপরের লোহার অ্যাঙ্গেলের রেলিং ও হাতলগুলো ছুঁটে ঝুঁলে আছে। পার গুলো ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘ দিনধরে পারবিহীন ব্যাপক অংশ ফাঁকা অবস্থায় সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় সেতুর ওপর দিয়ে কোন প্রকার যান বাহন চলাচল করতে পারছে না।
বিকল্প উপায় না থাকায় এলাকাবাসী চাঁদাতুলে ভেঙে পড়া সেতুর একাংশে বাঁশ ও সুপারি গাছ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে। ওই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে স্থানীয় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ। সেতু সংস্কারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকে দায়ি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
সরমহল গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, সিডরের বন্যার পরে সেতুটি হেলে পড়ে। আস্তে আস্তে সেতুর পশ্চিম পাশের অর্ধেকাংশ ভেঙে পরে। এ অবস্থায় পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী চাঁদাতুলে বাঁশ ও সুপারি গাছ কিনে ভাঙা অংশে সাঁকো তৈরি করে কোন রকমের পারাপার করছেন। তবে ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে। শিশুরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। কোন অবস্থাতেই সেতুটি নির্মাণে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
সরমহল গ্রামের মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ শতশত গ্রামবাসী এই সেতু দিয়ে পারাপার করেন। অনেকেই পারাপারের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেতুটি আর সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানের সেতুর এক পাশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। ক্ষত বিক্ষত সেতু দিয়ে যাতায়ার করা ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় স্কুল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও গ্রামবাসী একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সংস্কার নয়, আমরা সেতুটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
সরমহল গ্রামের বাসিন্দা ও কুশংগল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, হাসেমিয়া দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীর মরণ ফাঁদ হয়ে আছে। এব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কেন উদাসীন আমি বুঝতে পারছি না। সেতু দিয়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে মনে হয় কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে।
কুশংগল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, সেতু সংস্কারের জন্য আমি উপজেলা পরিষদের কয়েকটি সভায় লিখিতভাবে উত্থাপন করেছি, এখনো কোন বরাদ্দ আসেনি বিধায় সেতুগুলো সংস্কার বা পুননির্মাণ করা হয়নি। কার কাছে গেলে জনগুরুত্ব দুটি সেতু সংস্কার করাতে পারবো, আমি জানিনা।
ভবানিপুর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পরে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে পাটাতন তৈরি করে কোন রকমের যাতায়াত করছেন। সিডরে ভেঙে যাওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ সেতুটি নির্মাণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, ভেঙে পড়া সেতুগুলো নতুন করে নির্মাণের ব্যাপারে প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেয়ে কয়েকটি সেতুর কাজও চলছে। গুরুত্ব অনুযায়ী ভাঙা সেতুগুলো নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে।
Leave a Reply