শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
গৌরনদী প্রতিনিধি ॥
১৪ লক্ষ টাকায় সাড়ে বাহান্ন লাখ টাকা পরিশোধের পরে দেনার দায়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী এলাকায় প্রভাবশালী দুই দাদন ব্যবসায়ী এক নিরহ ব্যবসায়ীকে বসতঘর থেকে স্ত্রী সন্তানসহ বের দিয়ে সাদা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ঘরটি দখল করে নেন। এ নিয়ে গত বুধবার পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিন রাতে গৌরনদী থানা পুলিশ ও নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে বুধবার রাত ১০টায় ব্যবসায়ীকে স্ত্রী সন্তানসহ নিজ ঘরে তুলে দেন। গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাজাহারুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে টরকী বন্দর ব্যবসায়ী মো. আলী মাঝির কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহন করে দুই দাদন ব্যবসায়ীকে ধরতে অভিযান চালান।
বিষয়টি টের পেয়ে দাদন ব্যবসায়ী মো. নান্নু খানও মাইনুল হাওলাদার গা ঢাকা দেয়। পরে স্থানীয় আ.লীগ নেতৃবৃন্দ ও টরকী বনিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একাধিক বৈঠকে বসেন। টরকী বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গৌরনদী উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এ¦ইচ, এম, জয়নাল আবেদীন, টরকী বনিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি এইচ.এম হারুন, উপজেলা পরিষদের ভাইসচেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মোঃ ফরহাদ হোসেন মুন্সী, বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. বুলবুল দেওয়ান, গৌরনদী মডেল থানার এসআই মো. মাজাহারুল ইসলাম। গৌরনদী উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এ¦ইচ, এম, জয়নাল আবেদীন ব্যবসায়ীকে বসতঘরে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বৈঠকে হিসাবান্তে দেখা গেছে দাদন ব্যবসায়ীরা ৬৬ লক্ষ টাকা নেওয়ার পরেও সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে বসতঘর থেকে ব্যবসায়ীকে বের করে দিয়ে দখল নিয়েছে। বৈঠকে সিদ্বান্ত অনুযায়ী বিনা শর্তে বসত ঘর ফিরিয়ে দেয়া হয়, এখন থেকে আর কোন সুদ দেয়া হবে না।
দুই মাস সময় সাপেক্ষে মূল টাকা পরিশোধ করা হবে। বসতঘর ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত আলী মাঝি বলেন, সকলের সহযোগীতায় পরিবার পরিজন নিয়ে আমি মাথা গোজার ঠাই ফিরে পেয়েছি। কন্যা দশম শ্রেনির ছাত্রী ত্রীনা আক্তার বলেন, ঘর দখল নেওয়ায় পড়াশোনার ব্যঘাত ঘটে, দুটি বাছনিক পরীক্ষায় ভাল হয়নি। এখন ঠিকমত পড়াশোনা করে বাকি পরীক্ষাগুলো শেষ করতে পারব। আলী মাঝির স্ত্রী ফাহমিদা ইয়াসমিন বলেন, বসতঘর হারিয়ে পরের বাড়িতে মানবেতর জীবন যাবন করেছি, মানসিক যন্ত্রনায় ভূগেছি। উল্লেখ্য গৌরনদীর টরকী বন্দরের ব্যবসায়ী বিপদগ্রস্থ হয়ে দাদন ব্যবসায়ী মো. নান্নু খানের কাছ থেকে ১১ লক্ষ টাকা নিয়ে ৪৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ও মাইনুল হাওলাদার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে ৭ লক্ষ ২০ হাজার পরিশোধ করেন। পরবর্তিতে পাওনা টাকার জন্য দাদন ব্যবসায়ীরা দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে সাদা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে সোমবার ব্যবসায়ী পরিবারকে বের করে দিয়ে বসতঘর দখল নেন।
Leave a Reply